বরিশাল জেলার বাবুগঞ্জ উপজেলার বীরশ্রেষ্ঠ জাহাঙ্গীরনগর (আগরপুর) ইউনিয়নের ঠাকুরমল্লিক গ্রামে দীর্ঘ ১৬ বছর পর গ্রামে ফেরা এক বৃদ্ধ মুক্তিযোদ্ধা এবং তার সঙ্গীকে পূর্ব শত্রুতার জেরধরে আটক করে খুঁটির সাথে বেঁধে নির্মম নির্যাতন করার অভিযোগ পাওয়া গেছে।
এরা দুজনেই ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি আল নাহিয়ান খান জয়ের চাচাতো ভাই বর্তমান ইউপি চেয়ারম্যান কামরুল হাসান হিমু খানের নির্বাচনী কর্মী এবং আত্মীয় ।
অন্যদিকে ইউপি নির্বাচনে পরাজিত সাবেক চেয়ারম্যান তারেকুল ইসলাম তারেক হচ্ছেন উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান সরদার খালেদ হোসেন স্বপনের ভাই।
তাই মুক্তিযোদ্ধাসহ দুইজনকে অমানুষিক নির্যাতনের ঘটনাটি ধাঁমাচাপা দিতে সাবেক ইউপি চেয়ারম্যানের নেতৃত্বে ভিন্ন কর্মসূচি পালন করছে বলে জানিয়েছেন এলাকাবাসী। এমনকি সোমবার রাতের বিক্ষোভ কর্মসূচিতে ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি আল নাহিয়ান খান জয়কে তার নিজ উপজেলা বাবুগঞ্জে অবাঞ্ছিত করার হুঁশিয়ারি দেওয়া হয়েছে।
স্থানীয়রা জানান ঘটনাটি ঘটেছে জেলার বাবুগঞ্জ উপজেলার বীরশ্রেষ্ঠ জাহাঙ্গীরনগর (আগরপুর) ইউনিয়নের ঠাকুরমল্লিক গ্রামের কবিরাজ বাড়ি সংলগ্ন এলাকায়। এতে আব্দুল মজিদ
সরদার (৭২) নামের ওই বৃদ্ধ মুক্তিযোদ্ধাকে পিটিয়ে ও কুপিয়ে জখম করা হয়েছে। একই সময় ওই মুক্তিযোদ্ধার সাথে থাকা আজাহার ওরফে মনু (৬৫) নামের আরেক বৃদ্ধকে হাঁতুড়ি পেটা করা হয়েছে বলে স্বজনরা জানিয়েছেন ।
খবর পেয়ে স্থানীয় পুলিশ ক্যাম্পের একদল সদস্য গুরুত্বর অবস্থায় মুক্তিযোদ্ধাসহ আহত দুইজনকে উদ্ধার করে শেবাচিম হাসপাতালে ভর্তি করেছে, বলে জানিয়েছেন বাবুগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মাহাবুবুর রহমান। এ ঘটনায় এ রিপোর্ট পর্যন্ত মামলা দায়েরের প্রস্তুতি চলছে বলে ওসি জানান।
মঙ্গলবার সকালে শেবাচিমে চিকিৎসাধীন বৃদ্ধ মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল মজিদ সরদার বলেন, ওই ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান সরদার তারেকুল ইসলাম তারেক ও তার সহযোগীরা প্রকাশ্যে তাদের ওপর হামলা চালিয়ে অমানুষিক নির্যাতন করেছে।
তিনি আরও জানান, দীর্ঘ ১৬ বছর পর গত ৫ সেপ্টেম্বর সন্ধ্যা সাতটার দিকে তিনি (মজিদ সরদার) বাহ্মদিয়া গ্রামের আজাহার ওরফে মনুকে সাথে নিয়ে তার পিত্রালয়ে যাচ্ছিলেন। পথিমধ্যে স্থানীয় কবিরাজ বাড়ি সংলগ্ন এলাকায় পৌঁছলে তারেকের সহযোগীরা অস্ত্রের মুখে তাদের জিম্মি করে প্রকাশ্যে হামলা চালায়। একপর্যায়ে তাদের সাবেক ইউপি চেয়ারম্যানের বাড়িতে নিয়ে খুঁটির সাথে বেঁধে নির্মম নির্যাতন করা হয়।
তিনি আরও জানান, সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান তারেক নিজে তার (মুক্তিযোদ্ধা মজিদ) বাম হাতের আঙুল হাতুড়ি দিয়ে পিটিয়ে থেতলে ও কুপিয়ে রক্তাক্ত জখম করেছে।
হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অপর আহত বৃদ্ধ আজাহার ওরফে মনু বলেন, অমানুষিক নির্যাতনের পর সাবেক চেয়ারম্যান তারেকের বাড়িতে নিয়ে তাকে বেঁধে রাখা হয়। পরবর্তীতে তার হাত ও পায়ের নখসহ আঙুল পন্তাজ (লোহার যন্ত্র) দিয়ে থেতলে দেয়া হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, নির্যাতনের সময় সাবেক চেয়ারম্যান তারেক আমাদের বলে, তোরা হিমু খানের লোক (বর্তমান চেয়ারম্যান)। তার সাথে তোদের ভালো সম্পর্ক। নির্যাতনের একপর্যায়ে আগরপুর তদšত কেন্দ্রের পুলিশ সদস্যরা রাতে আমাদের সাবেক চেয়ারম্যান তারেকের বাড়ি থেকে উদ্ধার করে হাসপাতালে ভর্তি করেন।
এলাকাবাসী জানান , আহত মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল মজিদ সরদার উপজেলার বর্তমান বীরশ্রেষ্ঠ জাহাঙ্গীরনগর (সাবেক আগরপুর) ইউপির ঠাকুরমল্লিক গ্রামের মৃত আব্দুল হক সরদারের পুত্র।
হামলার নেতৃত্বদানকারী ওই ইউপির সাবেক চেয়ারম্যান তারেকুল ইসলাম তারেক উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি সরদার খালেদ হোসেন স্বপনের ভাই। হামলাকারী শহিদুল খান, হানিফ হাওলাদার, হাসান ডাক্তার, সজল হাওলাদার, রানা জমাদ্দার, সুজন শরীফ, বাদল বিশ্বাস, ফেরদৌস সরদার, মিন্টু খান, মিলন, রানা হাওলাদার, সাবেক ইউপি সদস্য কাইয়ুম হাওলাদার ও মিজান মোল্লাসহ অন্যান্যরা তারেক ও স্বপনের অনুসারী।
সূত্রে আরও জানা গেছে, ২০০৫ সালের ১৫ এপ্রিল ভোররাতে স্বপন ও তারেকের পিতা আবুল কাসেম সরদারকে কুপিয়ে হত্যার ঘটনায় দায়েরকৃত মামলায় একই বাড়ির বীর মুক্তিযোদ্ধা মজিদ সরদারকে আসামি করা হয়েছিলো। ওই মামলায় বরিশাল জেলা ও দায়রা জজ আদালত মুক্তিযোদ্ধা মজিদ সরদারসহ ১০ আসামি যাবজ্জীবন সাজা দেয়।
পরবর্তীতে উচ্চ আদালত ওই হত্যা মামলা থেকে মুক্তিযোদ্ধা মজিদ সরদারকে অব্যাহতি দিলেও নিহত কাসেম সরদারের পুত্র খালেদ হোসেন স্বপন ও তারেকুল ইসলাম তারেকসহ তাদের সহযোগীদের অত্যাচারে অতিষ্ঠ হয়ে মুক্তিযোদ্ধা মজিদ সরদার তার পৈত্রিক বাড়িঘর ছাড়তে বাধ্য হন। সেই থেকে তিনি (মজিদ সরদার) রাজধানী ঢাকাসহ বিভিন্নস্থানে বসবাসের পর গত ৫ সেপ্টেম্বর নিজ গ্রামে ফিরে আসেন।
অপরদিকে মুক্তিযোদ্ধা মজিদ সরদার ও তার সাথে থাকা আজাহার ওরফে মনুকে মারধরের অভিযোগ অস্বীকার করেছেন সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান তারেক সরদার।