‘চন্দন রোশনি’ পর্ব – চার

মোহিত কামাল
মোহিত কামাল
21 মিনিটে পড়ুন

পর্ব – চার: আঁধারে কীভাবে দেখছে অর্ণব

আলোহীন জগতে আঁধারের ঢেউয়ের মধ্য অর্ণব দেখছিল জেলিফিশ আর তার জিলাটিন চেম্বারের মধ্যে শত্রুহননের নিপুণ ক্রিয়া। প্রায় বত্রিশ ফুট বিস্তারি জায়ান্ট অক্টোপাসের মাছ শিকারের নান্দনিক কৌশল সাগরতলে ছড়িয়ে ছিটিয়ে রেখেছে শৈল্পিক স্কেচ। আচমকা চারপাশের চলমান শত্রুরা আটকে যাচ্ছিল শুঁড়ের জিলাটিনের আবরণের মধ্যে―গায়েব হয়ে যাচ্ছিল জীবন্ত শত্রু কিংবা জীবন্ত কোনো খাবার। লায়নস মেইন জেলিফিশের শুঁড়ের দৈর্ঘ্য প্রায় ১২০ ফুট―এসব দেখে এবার কিছুটা অবাক হলো অর্ণব। দুটি প্রশ্ন উঁকি দিল মনে- আঁধারে দেখছে কীভাবে নিজে? সূর্যের আলো কী করে পৌঁছেছে এই অচিন দেশে- সমুদ্রের গভীরে? ওর মনে হতে লাগল আঁধার দেখার জন্যও রয়েছে আঁধার-আলো। অথবা আঁধার দেখার অন্য কোনো অণুকণার উপাদান অর্জন করে ফেলেছে নিজে।
‘গায়েব’ শব্দটি মস্তিষ্কে আকস্মিক আঘাত হানল চোখের পলকে ছুটে আসা হাঙরের মতো- প্রায় ৬১ ফুট লম্বা দেহের লেজ দিয়ে এপাশ-ওপাশে ঘাই মেরে হাঙর ছুটে চলে বিমানের মতো, গায়েব করে দেয় জলজ জীবন্ত অন্য কোনো প্রাণি, গায়েব হয়ে যাওয়ার তেমন দৃশ্য অর্ণব দেখল থ্রিজি স্ক্রিনে। স্মৃতির কোষে জমা অণুতে হালকাভাবে ভেসে থাকা ঘুমন্ত কোনো স্মৃতির ঢেউয়ে আলোড়ন তুলল এ জগৎটা। মিলে যাচ্ছে- মনে হলো ‘গায়েব’ বা ‘গুম’ শব্দটি ডোবা জাহাজের বিধ্বস্ত পাটাতনের মতো অযত্নে পড়েছিল, হঠাৎ ডুবন্ত ভাঙা জাহাজের নাড়া খাওয়ার মতো নড়ে উঠল। ভাঙা জাহাজ নাড়া খেলে যেমন জাহাজের খোলে জমে থাকা ময়লা আবর্জনা বা জমা পানির স্তর ঝুরঝুর করে সরে যায়, ঘোলাটে করে তোলে চারপাশ, তেমনি এক ঘোলাটে ঢেউয়ের আঘাতে সামনে থেকে সরে যেতে লাগল ধোঁয়াশা, আচমকা সাদা মেঘের ঢেউ উঠল থ্রিজি স্ক্রিনে। আর সে ঢেউয়ে ভেসে টিউবের মতো লম্বা চোখের পাতা খুলে হুড়মুড় করে হাজির হলো গুমদৃশ্য। জিউলি আর বাবলার আঁধার গলির ফাঁকে যেমন ঝরে জোনাকির আলো তেমন করে নয়, যেমন ঝুরঝুর করে ফুল ঝরায় সজিনা, হিম সাদা হয়ে ফুটে থাকে গুচ্ছফুল, তেমনি করে গুমদৃশ্য ফুটে উঠল চোখে। আচমকা মৃত বালির স্তর সরে যেতে লাগল, স্মৃতির ঘর থেকে হিম হিম সাদা সাদা ফুলের মতো জীবনের ফুল ফুটতে লাগল চোখের মণিতে। ভয় জাগতে লাগল। আবেগ ফিরতে লাগল ইটবাঁধানো সাতটি বস্তা দেখে।
ইট বাঁধিয়ে ডুবিয়ে দেওয়া বস্তাগুলো দেখে তার মনে হলো বস্তার ভেতর রয়েছে স্বর্ণ, মণি-মানিক্য, অযুত কোটি রত্নমালা।
বস্তার দিকে এগোনোর সময় হঠাৎ ফিরে আসতে লাগল অনুভব, অনুভূতির স্মৃতি। নারায়ণগঞ্জে সাত মানুষের গুমকাহিনির আড়ালে সাত খুনের নেপথ্যের প্রমাণ মুছে দেওয়ার জন্য সাত বস্তা লাশের কথা মনে পড়তে লাগল অর্ণবের। সাত বস্তার নৃশংস সত্য তো আবিষ্কার হয়ে গেছে। এগুলো তবে কোন বস্তা? প্রশ্নের উড়াল ঢেউ মাথায় নিয়ে সামনে এগোনোর সময় হঠাৎ লক্ষ করল বুরবুর করে বস্তার ভেতর থেকে বেরুচ্ছে অক্সিজেনের মুক্ত কণা। যেন নাচতে নাচতে চারপাশে ছড়িয়ে যাচ্ছে সহস্র মুক্তাদানা।
একবার চোখ গেল পায়ে কামড়ে ধরা লাল কাঁকড়ার চোখের দিকে। অক্সিজেনের বুদবুদ আর লাল কাঁকড়ার লাল মিলেমিশে হঠাৎ প্রসারিত হতে লাগল থ্রিজি এলইডি স্ক্রিনের দৈর্ঘ্য-প্রস্থ। স্মৃতির ঘরে আবারও উঠল ঝড়। দ্রুত ও বুঝল খুলতে হবে বস্তার মুখ। কাছে গিয়ে শেকলে বাঁধা বস্তার মুখ খোলার সঙ্গে সঙ্গে আলাউদ্দিনের আশ্চর্য চেরাগের মতো ধোঁয়া বেরুল না। বেরুল জ্যান্ত অথচ মৃতপ্রায় এক মানুষ। সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে অবাক চোখে মানুষটি তাকাল অর্ণবের চোখের দিকে। আগুনঝরা প্রশ্ন করল, ‘আপনি কি মানব জাতির সদস্য?’
‘হুম। তাই তো মনে হচ্ছে।’
‘মনে হচ্ছে মানে কি? আপনি কি জানেন না, কে আপনি?’
‘জানতাম না। এখন জানি।’
‘তো বলুন, সত্যিই মানুষ তো আপনি?’
‘সন্দেহ হয় আপনার?’
‘হয়।’
‘কেন?’
‘মানুষ তো খুন করে আরেক মানুষ। খুন করে ওপরে উঠতে চায়, ক্ষমতার দাপট দেখাতে চায়, সম্মান কেড়ে নিয়ে সম্মানিত হতে চায়। আর আপনি তো মানুষের জান বাঁচিয়ে সম্মানিত হয়ে গেলেন, মহান হয়ে গেলেন, মহান মানুষ কি আছে এ সময়ে?’
উত্তর দিতে পারল না অর্ণব, উত্তর জানা নেই তার। মাথা নীচু করে এগিয়ে গেল আরেক বস্তার দিকে… আরেকটা… সাত বস্তার মুখ খুলে সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে দেখল সাত জনকে। সবাই অবাক হয়ে তাকিয়ে দেখছে ওকে।
একজন প্রশ্ন করল, ‘আপনার শরীরের রক্ত বয়ে বেড়ায়?’
অর্ণব নিজের দিকে তাকাল। একটা শ্বাস ছাড়ল। তারপর উপরে-নীচে হ্যাঁ-বোধক মাথা নাড়াল।
‘অক্সিজেন? অক্সিজেন ঢোকে আপনার ফুসফুসে?’
মাথা নাড়াল আবার উপরে-নীচে।
প্রথম জন আবার প্রশ্ন করল, ‘আপনার দেহের শিরার রক্ত ছুটে বেড়ায় আর অক্সিজেন জ্বালানি দেয় দেহের কোষে, তবু বাঁচালেন আমাদের?’
‘আমি বাঁচানোর কে? আমি তো কেবল শিকল খুলেছি বস্তার।’
‘শিকল খোলার জন্য যে মহানুভবতা দরকার তা আপনার মধ্যে আছে, তাই বেঁচে গেলাম আমরা। এ কারণেই মনে হচ্ছে মর্ত্যলোকের কোনো মানব নয়, অন্য লোকের রহস্যময় ক্ষমতাধর কেউ আপনি।’
সাত জনের প্রশংসাবাক্য কেন বর্ষিত হচ্ছে ওর ওপর না বুঝে অর্ণব বলল, ‘আমি কি মর্ত্যলোকের কেউ কিনা, জানি না?’
‘বলেন কী? জানেন না?’
‘জানলে বলতাম। আর আপনারা কি মর্ত্যলোকের? সেই জগতে কি সবাই একমত হতে পারে? আপনারা একমত হলেন কীভাবে? এমন মতের মিল নিয়ে কি একত্রে থাকতে পারে মানবগোষ্ঠী?’
সাত জন একে অপরের দিকে তাকাল। তাদের মস্তিষ্কে থেকেও উল্কাপিণ্ডের মতো কক্ষচ্যুত হতে লাগল চিন্তার ঝলক। বিস্ময়ের আবরণ ফুঁড়ে বেরুতে লাগল নতুন বুদবুদÑ জানান দিতে লাগল নিজেরাও গতিপথ হারানো বিস্ময়ের রাজ্যের কোনো উল্কাপিণ্ড, পৃথিবীর দূরবর্তী কোনো ছায়াপথে গুম হয়ে যাওয়া নিজেদের নতুন অস্তিত্ব।
‘গুম’ শব্দটার মধ্যে ভীতি কাজ করে। আচমকা তো ওরা ‘নাই’ হয়ে গেছে। বেঁচে আছে না মরে গেছে, নাকি ওদের মেরে পুঁতে ফেলা হয়েছে মাটির তলে, নাকি নোঙর বেঁধে ডুবিয়ে দেওয়া হয়েছে সাগরতলে- কিছুই বুঝতে পারছে না। এসব ভাবনায় ডুবে থাকায় মহাশূন্যের ব্ল্যাকহোল বা কৃষ্ণগহ্বরের মতো কালো দানবের শঙ্কা ঘুরে বেড়াতে লাগল ওদের মস্তিষ্কে। ব্ল্যাকহোল যেমন মহাকর্ষ বলের টানে তার কেন্দ্রে টেনে নিয়ে যায় চারপাশের সবকিছু, এমনকি আলোও, আঁধারের প্রবল ঘূর্ণির উপস্থিতির প্রমাণ তবু বোঝা যায় অন্যান্য নক্ষত্র ও মহাজাগতিক গ্যাসীয় পদার্থের ওপর প্রবল মহাকর্ষ বলের ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া দেখে। কিন্তু গুম হয়ে যাওয়া নিজেদের অস্তিত্ব খুঁজে পাচ্ছে না ওরা। ব্ল্যাকহোলের চেয়েও তাই কঠিন শক্তিধর মনে হতে লাগল ‘গুম’ শব্দটিকে। এ কারণেই সাত জনের মনে হলো প্রবল আঁধারে ডুবে যায়নি ওরা, চলে এসেছে শান্ত-স্নিগ্ধ মায়াময় এক জগতে- যেখানে আলো আছে, মানবীয় গুণ আছে, অক্সিজেনের বুদবুদ আছে আর আছে জলজ উদ্ভিদ-প্রাণিতে ভরা নিরুপদ্রব এক শান্তির জগৎ।
হঠাৎ প্রথম জন অর্ণবের উদ্দেশে বলল, ‘দেখুন, কী চমৎকার একটা লাল কাঁকড়া কামড়ে ধরে বসে আছে আপনার পা। ঝাড়া দিন, ওকে ফেলে দিন।’
ঝাড়া দিল না অর্ণব। একবার কাঁকড়াটির দিকে তাকিয়ে আবার তাকাল সামনের পাহাড়ের টিলা থেকে বেরিয়ে আসা বুদবুদের দিকে। নৃত্যের তালে, মুদ্রার শৈল্পিক স্কেচ তৈরি করে বুদবুদ উঠে যাচ্ছে ওপরে। অজানা পথ পাড়ি দিয়ে ওপরে যাচ্ছে ওই বুদবুদের মিছিল। ও ভাবল তল থেকে তারা বহন করে নিয়ে যাচ্ছে অক্সিজেন-কণা। হঠাৎ মনে পড়ে গেল সাগরতলে লুকিয়ে থাকা সবুজ জলজ উদ্ভিদে ঠাসা সুপ্ত অগ্নিগিরিসদৃশ ভয়াল পর্বতগুহার কথা। গুহা থেকে অনবরত বেরুতে থাকা কার্বন-ডাই অক্সাইডের বুদবুদ উঠতে থাকে ওপরে। সমুদ্রতলে প্রায় তের হাজার ফুট নীচে থাকতে পারে এমন ভয়াবহ গুপ্তগুহা। গুহামুখ থেকে নির্গত কার্বন-ডাই অক্সাইড ক্রমশ গলে তৈরি করে কার্বনিক এসিড। এই এসিডের প্রভাবে সমুদ্র-তলদেশের উচ্চতা বাড়তে থাকে, হুমকিতে পড়ে জলবায়ু, ভূমণ্ডল- উপন্যাসে পঠিত এমন বর্ণনার কথা মনে পড়ার সঙ্গে সঙ্গে ভীত চোখে একবার অর্ণব তাকাল লাল কাঁকড়ার চোখের দিকে। উপন্যাসের চরিত্র কল্পনাপ্রসূত হলেও নিজে জীবিত কিনা বোঝার জন্য হাঁটু ভাঁজ করে বসে সরাসরি আবার তাকাল ক্যামেরাসদৃশ কাঁকড়ার ওই চোখের দিকে। ওই চোখে নিজের প্রতিবিম্ব দেখে ঘাবড়ে গেল। ভয়ার্ত চোখে আবার তাকাল সাত জনের দিকে। শিউরে উঠল শরীর। সাতটি বুদবুদ বস্তা সমান গতিতে উঠে যাচ্ছে ওপরে- সাত মানুষ আবার কীভাবে বুদবুদে পরিণত হলো, না বুঝে একবার চিৎকার করে ডাকল তাদের- ‘আপনারা কোথায়?’
উত্তর পেল না অর্ণব। নীরবতার অদৃশ্য স্তরে হারিয়ে গেল তার ডাক। নিজের অস্তিত্বের শেকড় কীভাবে গেড়ে বসল সাগরতলের, মৃত্তিকা-গর্ভে- বোঝার চেষ্টা করল না ও। আবার তাকাল লাল কাঁকড়ার দিকেÑ বোবা সমুদ্রের তলে খই ফোটার মতো শব্দ ফুটতে লাগল, বোধের সাগরে জেগে উঠল নতুন আকাক্সক্ষার চর। কাঁকড়ার ধ্রুপদী চোখের লাল মণি থেকে বেরুতে লাগল সহস্র শব্দবুদবুদ। নতুন ধ্বনির অর্থ বোঝার চেষ্টা করল অর্ণব। হ্যাঁ বুঝতে পারছে ও। মহাজাগতিক অস্তিত্বের সঙ্গে নিজের যোগসূত্রের নতুন বোধ জাগছে, চিন্তনে আলোড়ন উঠছে ভিন্ন মাত্রায়- কীভাবে বস্তায় ঠাসা সাত মানুষ আবিষ্কার করল, কীভাবে বুদবুদের সাত স্রোত উঠে গেল উপরে- ভাবতে গিয়ে টান খেল আপন সত্তার শেকড়। হঠাৎ নিজের অস্তিত্বে আবিষ্কার করল ছোট একটি ফাটল। বুঝতে বাকি রইল না- ফাটল বড় হবে। ইট-সুরকি সরে যাবে। চারপাশ ভেঙে পড়বে। বুদবুদের মতো মিলিয়ে যাবে নিজেও। বোধের অলিগলিতে লুকোচুরি খেলায় মেতে উঠলেও নিরুপদ্রব স্বপ্নঘোরে যে জীবনের আলাদা আলোর উদ্ভাস ঘটছে, চোরাগলিতে সেই বিভা টের পেতে অসুবিধে হলো না। সাময়িক হোক, খুলে যাওয়া বদ্ধদৃষ্টির আলোর ছটায় হঠাৎ ও আবিষ্কার করে ফেলল লাল কাঁকড়ার চোখ আপন চোখে ঢেলে দিয়েছে অর্থপূর্ণ রাশি রাশি ভাবনা। বোধের সৈকতে আছড়ে পড়তে লাগল নতুন ঢেউ…
বুঝতে পারছে এখন―এই জলজ জগতের কেউ নয়, অন্য জগতে ছিল ও। সে জগতে সবাই একা, আবার সবাই সবার। একা মিলে দুই, দুই থেকে তিন, চার―গাণিতিক হারে রাশি রাশি তৈরি হয় পুষ্পদল, আবার সেই পাপড়ি ঝরে যায় টুপ করে। স্বজন ছাড়া কেউ টের পায় না, কে ঝরে গেল সেটা নিয়ে মাথা ঘামানোরও সুযোগ নেই অন্যের। আকস্মিক স্বজন শব্দটির ভেতর থেকে নতুন ধরনের বুদবুদ বেরুতে লাগল। এই বুদবুদে সাদা মুক্তোদানার পরিবর্তে এখন বেরোতে লাগল লাল পাপড়িদল। ছেঁড়া ছেঁড়া পাপড়ি দল বেঁধে নাচতে নাচতে ছড়িয়ে যাচ্ছে চারপাশে, ঊর্ধ্বমুখী গতি নেই। ওর মনে হচ্ছে একমুখী ধারায় তৈরি হয়ে। বহুমুখী স্রোতের ধারা।
ভাবনার আলোর ঝলক মস্তিষ্ক থেকে ছড়িয়ে গেল সাগরতলের উদ্ভিজ আর প্রাণিজ রাজ্যে। আচমকা লাল কাঁকড়াটির চোখ থেকে ছড়িয়ে যেতে লাগল শব্দঢেউও। এক সেকেণ্ডের শতভাগেরও কম সময়ের মধ্যে সেই ঢেউয়ের সঙ্গে যোগ হয়ে গেল ফেলে আসা জগতের সংযোগ। স্পষ্ট অর্ণব দেখতে পাচ্ছে, এলইডি স্ক্রিনের থ্রিজি দৃশ্যপট―এক তরুণী শুয়ে আছে বেডে। মেয়েটির পায়ের কাঁকড়ার কামড়স্থল থেকে বেরুচ্ছে বৈদ্যুতিক স্রোতের তরঙ্গকণা- শান্ত পুকুরের ঢিল ছুড়লে যেভাবে ঢেউ ছড়িয়ে পড়ে চারপাশে, বিদ্যুৎ-তরঙ্গের অ্যাকশন পটেনশিয়াল, ধনাত্মক আর ঋণাত্মক গতির নান্দনিক ঢেউও সেভাবে ছড়িয়ে যাচ্ছে শূন্যে। নিজের পায়ের দিকে তাকিয়ে অর্ণব দেখল আকড়ে ধরা লাল কাঁকড়ার চোখ চেয়ে আছে ওর চোখের দিকে।
তরুণীটি আকস্মিক জেগে উঠল ঘুম থেকে―তার পর চিৎকার করে বলল, ‘আমার অর্ণব, অর্ণব কোথায়? ও কি ফিরেছে সমুদ্র ঢেউয়ের তল থেকে?’
হঠাৎ ‘অর্ণব’ শব্দটি সহস্র ফেনার ঢেউ তুলল মস্তিষ্কে। বুদবুদের মতো মুক্তো ঢেউ এবার ফুটতে লাগল চোখের ক্যানভাসে। একটা চিৎকারের তিনটি বর্ণ আঘাত হানল অর্ণবের জমাট স্মৃতির শক্ত বলয়ে― অনেক দূর থেকে ভেসে আসা ডাক ও শুনতে পেল অ…র্ণ…ব… এভাবে। তার পর স্মৃতির বলয় থেকে এগিয়ে আসতে দেখল প্রবল পরাক্রমশালী এক ঢেউ… স্মৃতির ভাণ্ডারে আর কিছু নেই। ব্ল্যাকহোলের মহাকর্ষীয় টানের মতো সব যেন আঁধারে ডুবে গেল মুহূর্তে। সংযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে গেল। পায়ে আকড়ে ধরা লাল কাঁকড়াটির চোখের মণিও স্থির হয়ে গেল শূন্য সেকেন্ডের ব্যবধানে।
কে এই তরুণী? ‘আমার অর্ণব’ বলে বলে ডাকছিল কেন! ‘অ… র্ণ…ব…’ আর ‘অর্ণবে’র মধ্যে তো কোনো পার্থক্য নেই। তার মেমোরিতে জমে থাকা শেষ তিন বর্ণমালার সঙ্গে ‘অর্ণব’ শব্দটি গলার হারের লকেটের মতো ঝুলে আছে যেন। মনে হলো অলৌকিক কোনো সংযোগে মেয়েটির উচ্চারিত শব্দ শুনেছে ও। মুখটি দেখার সুযোগ ঘটেনি। ওই মুখের সঙ্গে জড়িয়ে আছে অন্য কোনো স্মৃতি, অন্যকোনো সংযোগ, বৈদ্যুতিক-বায়বীয়-মানবীয় কোনো বাঁধন, মনে হলো ওর। সাগর তলের গভীরতম এলাকায় এই কোমল পানি ভরা ঢেউহীন শান্ত জলজ উদ্ভিদ আর মাছদের রাজ্যে ও এলো কোত্থেকে? কীভাবে? মেয়েটির উচ্চারিত শেষ তিন বর্ণের সঙ্গে কী সংযোগ এই পানিরাজ্যের, বুঝতে না পেরে জিভ বের করল অর্ণব। লবণাক্ত পানির স্বাদ পেল, উষ্ণতাও বেশি। মস্তিষ্কের অ্যান্টেনায় ভেসে উঠল তের হাজার ফিট গভীরতায় প্রায় একশ পঞ্চাশ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা―এমন পরিবেশে নিজে অবলীলায় নড়াচড়া করছে, ভাবতে পারছে, দেখছে চারপাশ। পানির তলে অক্সিজেনের অস্তিত্ব নেই, আলো নেই, অথচ বেঁচে থাকার প্রমাণ পাচ্ছে, দেখছে সে চারপাশ―কীভাবে সম্ভব, ভেবে কূল পেল না। জিভ ঢুকিয়ে ফেলল মুখে। স্বাদ নিতে গিয়ে বুঝল জীবজগতে বেঁচে থাকার জন্য ক্ষতিকর উপাদান হাইড্রোজেন সালফাইডে ঠাসা পুরো পরিবেশ। বিষে ভরা এমন পানির তলে নিজের অস্তিত্বের প্রমাণ পেলেও বেঁচে থাকার কারণ খুঁজে পাচ্ছে না। ‘বেঁচে আছি’ না ‘মরে বেঁচে আছি’ হঠাৎ প্রশ্ন দুটি ঢেউ তুলল করোটিতে। চোখ থেকে ধোঁয়ার মতো বেরুতে লাগল আলোর বিম। সেই বিমের প্রতিফলিত উজ্জ্বলতায় অর্ণব আবিষ্কার করল পাথুরে এক বাড়ি। পরিবেশ দূষণের কারণে সাগরতল জেগে উঠছে, বাড়ি-ঘরের মতো উঁচু হয়ে পাহাড় সমান আকৃতি ধারণ করছে, ভাবল ও। আরও ভাবল তল উঁচু হয়ে গেলে পানির ঢেউ ভাসিয়ে নেবে সাগরপাড়ের লোকালয়, জনপদ। আচমকা ‘লোকালয়’ শব্দটি নতুন সংকেত দিল ব্রেনে। নিজেকে মানুষ ভাবতে পারল অর্ণব। মানুষ অস্তিত্বের অনুভবে এবার পাহাড়ের গায়ে লেগে থাকা পাহাড়ি ঘরের দিকে এগোতে লাগল ও…
আবার বিস্ময় জাগল চোখে।
এ ধরনের ঘরের স্মৃতি জমা নেই স্নায়ুকোষে। কখনও দেখেনি কখনও ভাবেনি- এক ঘরে পাশাপাশি নয়, বৃত্তের মতো ঘোরানো একের ওপর আরেকটি তুলতুলে কোমল-কুসুম বিছানা সাজানো রয়েছে। কে থাকে এখানে? কাউকে তো দেখা যাচ্ছে না। অদৃশ্য দৃশ্যপটেও থাকতে পারে অনিন্দ্য আয়োজন। কল্পনায় নয়, বাস্তবের অনুসন্ধিৎসু চোখ খুলে তাকানোর চেষ্টা করল অর্ণব। চোখের জ্যোতি দিয়ে খুঁড়ে খুঁড়ে দেখতে চাইল নতুন ধাঁচের বিছানা। একজোড়া, একসঙ্গে নয়। জোড়াও তবে বিচ্ছিন্ন থাকতে পারে, কাছাকাছি থেকেও দূরের হতে পারে। শূন্য অস্তিত্বেও পূর্ণতার ছাপ ফেলতে পারে, দূরে দূরে থেকেও লুকিয়ে থাকতে পারে বুকের ঘরে, খুব কাছে। এক ঘরে দুই বিছানা- এক জীবনে দুই জীবনের সাংকেতিক বার্তা মনে হলো সংকেতটিকে। মেয়েটির নাম কী, কেন ‘অর্ণব’ বলে ডাকছিল, ‘আমার অর্ণব’ ধ্বনি ছড়িয়ে দিয়েছিল কেন? আমারও তবে ‘আমি’ থাকে, নাকি ‘আমি’ অস্তিত্বের নাটাই থাকে অন্যের হাতে? মেয়েটির জীবনের সঙ্গে নিজের জীবনের সংযোগ কী, কেবলই আমার করে উপলব্ধি করা মহাকর্ষ বল? সেই শক্তিই টানছে নিজেকে? টানমুক্ত হয়ে ভাবল মহাশূন্যে ভাসমান বস্তুর মতো জলজ ব্রহ্মাণ্ডে হারিয়ে গেছে ও। মহাকর্ষ বলের টান স্পর্শ করবে না, নিজের নিউরনের মধ্যে আর ছুটোছুটি করবে না বিদ্যুৎ কণা- ‘অ্যানায়ন’ আর ‘ক্যাটায়ন’-এর ছন্দোময় সংযোগ। তীব্র টানে যেন খুলে যাচ্ছে আদিম খোলস। ভাবতে ভাবতে, ভাবনার চাকা না থামিয়ে ঘোরতর ঘোরের মধ্যে ডুবে গিয়ে অর্ণব উঠে গেল দোতলা বেডের ওপরের টাতে। পাশে সিঁড়ি নেই। অথচ পায়ের পাতা দিয়ে কোমল কুসুম পেলব ফ্লোরে চাপ দেওয়ার সঙ্গে সঙ্গে শূন্যে ভাসমান বস্তুর মতো সহজে উঠে গেল উপরে সাজানো দৃষ্টিনন্দন কিংবা দৃশ্যের বাইরের বিপুল অথচ বিস্ময়কর অচেনা স্থাপত্যকলায় নির্মিত বিছানার ওপর। বালিশে মাথা দিয়ে শোয়ার ইচ্ছা হলো। হাত দিয়ে বালিশ ধরার সঙ্গে সঙ্গে বুরবুর করে বেরুতে লাগল আলোর কণা। মনে হলো সূর্যের আলো পৌঁছেছে এই অতল তলে। বালিশগুলোও নিজের আলোয় উদ্ভাসিত। ভাবনার চাকা থামছে না। সমান তালে ঘুরছে আর উড়ছে। কল্পনার ডানায় ভর করেই কেবল বুরবুর আলো ছড়িয়ে দিচ্ছে না ভাবনারা। আপন চোখের মণিতেও দেখছে সব- বিভ্রান্ত হলো না তবুও। বালিশে মাথা দিয়ে শোয়ার সঙ্গে সঙ্গে নিজের অস্তিত্ব বিলীন হয়ে গেল মুহূর্তে। দেহের ‘অর্ণব’ নয়, আলোর দেহকাঠামো জেগে উঠল, হাড়ের গড়নে যোগ হতে লাগল তুলতুলে আলোর দেহ। ধুপধুপ লাফানো হৃৎপিণ্ডের মধ্যে থেকে হুশ হুশ করে বেরুতে লাগল আলোর বুদবুদ। বুদবুদ দেখে ভাবনা নিজে কার্বন-ডাই অক্সাইড গ্যাসে পরিণত হয়ে গেছে-হাইড্রোজেন সালফাইডে রূপান্তরিত হয়ে মিলিয়ে যাচ্ছে অথই জলজ জগতে। এবার চোখ বন্ধ করল অর্ণব। এ কি? আঁধার নেই চোখে। বন্ধ চোখেও ঢুকছে আলো। স্পষ্ট জাগতিক জগতের দৃশ্যে ভেসে উঠল মুহূর্তে- হ্যাঁ। মেয়েটি ডাকছে- অর্ণব ধ্বনির প্রতিধ্বনি শোনা যাচ্ছে সাগরতলে। মমতার শেকড়ে টান খেয়েছে। শোয়া অবস্থা থেকে উঠে বসতে চাইল অর্ণব। উঠতে পারল না। কে যেন চেপে রেখেছে, টেনে রেখেছে বালিশে, আটকে আছে মাথা। ঘাড় না ঘুরিয়ে চোখ না খোলার চেষ্টা করে ও পড়ে রইল নরম বিছানায়। হঠাৎ আবিষ্কার করল নিজ দেহকাঠামোয় আদিম রক্তস্রোত। সুপ্ত আর ঘুমন্ত অজগর যেন জেগে উঠতে চাইল মোচড় দিয়ে। ওই অজগর কী চায়? গিলে ফেলবে চারপাশ? অজগরের মতো মোচড় থাকা মানে, বেঁচে থাকার সংকেত বহন করা। মানবীয় নয়, দানবীয় নয়, নিজের জৈবিক সাগরেও প্রবল ঢেউয়ের মতো অজগর বিপুল শক্তি নিয়ে রয়েছে বর্তমান―টের পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ও হাত দিয়ে স্পর্শ করল পায়ের পাতা। লাল কাঁকড়াটি এখনও ছেড়ে যায়নি পা। হাতের স্পর্শে লাল কাঁকড়া ব্রেনে নতুন নেটওয়ার্কের সংযোগ ঘটিয়ে দিল। কাঁকড়ার কামড়ে সৃষ্ট ত্বকের ক্ষতস্থলের কোষের গ্রাহকযন্ত্রের মুখ খুলে গেছে। মেয়েটিরও। এক সময় ও শুনেছিল তথ্য গ্রহণ ও দেহ-মনে রাসয়নিক ক্রিয়া চালানোর জন্য প্রতিটি কোষে রয়েছে গ্রাহক যন্ত্র, রিসেপ্টর। দুজনের দেহকোষের গ্রাহকযন্ত্রের মাধ্যমে মনে হলো তথ্য আদান-প্রদান শুরু হয়ে গেছে, যেমনটি ঘটে আইটির এ উৎকর্ষ যুগে। বিজ্ঞানের এ বাহনে ভর করে ও স্পষ্ট দেখতে পাচ্ছে সব। বন্ধ চোখ থেকে বেরোনো বুরবুর আলোর ফাঁক দিয়ে জেগে উঠছে মেয়েটির মুখ। সে বলছে, ‘না, আমি বাসায় যাব না। সৈকতে যাব। সাগর থেকে উঠে আমাকে না পেলে অর্ণব রাগ করবে। কষ্ট পাবে।’
‘না, মা। আমার আদরের উর্বশী, সত্য মেনে নাও। অর্ণব ফিরবে না। সাগরের ঢেউ টেনে নিয়ে গেছে অর্ণবকে।’
‘উর্বশী’ শব্দটি সহস্র টন বিস্ফোরকের মতো একত্রে বিস্ফোরণ ঘটাল অর্ণবের মস্তিষ্কের বিদ্যুৎতরঙ্গে। ছিন্নভিন্ন হয়ে ও উড়ে গেল না বরং বোধের তলদেশ থেকে জেগে উঠল ক্ষুধার্ত অজগরের মতো- এ বোধ মমতার, ভালোবাসার। দেহের ক্ষুধার অণু-পরমাণুতেও ঢেউ উঠল জৈবিকসত্তার। নিজেকে নতুনভাবে আবিষ্কার করে চিৎকার করে ও ডাকল, ‘উ…র্ব…শী… আমি শুনতে পাচ্ছি। দেখতে পাচ্ছি তোমাকে। হারিয়ে যাইনি, সাগরের ঢেউ টেনে গিলে ফেলেনি আমাকে, বরং নতুন এক জগতে ধরে এনেছে। আমি শুয়ে আছি ওপরের খাটে, তুমি এলে শোবে নীচেরটায়। আমি অপেক্ষা করছি তোমার আশায়’…
আবারও অর্ণবের চোখে জেগে উঠছে উর্বশীর মুখ। সে বলছে, ‘না, আমি বাসায় যাব না। সৈকতে যাব। সাগর থেকে উঠে আমাকে না পেলে অর্ণব রাগ করবে। কষ্ট পাবে।’
নেটওয়ার্কের কানেকশন বিচ্ছিন্ন হয়ে গেল। আকস্মিক এমন তরঙ্গ এলো কীভাবে? তবে কি প্রযুক্তির ওয়েভ পোর্টালে চড়ে দুজনের পায়ের ত্বকের খোলা গ্রাহকযন্ত্রের মাধ্যমে সংযোগ ঘটে গেছে উভয়ের ব্রেনের? এ কারণেই নিউরনের মধ্যে ভাবনার ঢেউ উঠছে- ভেবে কূল পেলও ওর বোধের ঘরে অস্বচ্ছতার ধোঁয়া বেরুতে লাগল। উর্বশীর আলো, শব্দতরঙ্গ, থ্রিজি স্ক্রিনে মায়াবি দৃশ্য, শব্দমালা মুহূর্তের বাস্তব থেকে আবার তাকে টেনে নিয়ে এল ভিন্ন জগতের অনন্য এই ঘরে। এখানে এসি চলছে না, অথচ গরমবোধ নেই। আবার কঠিন শীতও নেই। না-গরম, না-শীতের কোমল চাদরে ঢেকে আছে ও। শুয়ে শুয়ে দেখছে বিচ্ছিন্ন নতুন জগতের অনন্য সৌন্দর্যরাজি। এই সৌন্দর্য সহ্য করার, বহন করার কিংবা ভোগ করার কোনো যোগ্যতা, সামর্থ্য রয়েছে কিনা জানে না ও। ভাবনার ঘোরের ভেতর থেকে দাঁতের মতো আরেকটি দাঁত বেরিয়ে কামড়ে ধরল আপন অস্তিত্ব। অলৌকিক ক্রন্দন নাকি হৃদয়ের রক্তক্ষরণ, বোঝার আগেই উধাও হয়ে গেল ভাবনাটি। চোখের পাতা বন্ধ হয়ে এলো… ঘুম পাচ্ছে চোখে। কিছুক্ষণের মধ্যে ঘুমের চাদরে ঢেকে গেল মস্তিষ্কের সকল সংকেত। থ্রিজি স্ক্রিনেও ভেসে উঠল গাঢ় আঁধার। সঙ্গে সঙ্গে বৈদ্যুতিক কানেকশন বিচ্ছিন্ন হওয়ার পর নেট-সংযোগ হারিয়ে মস্তিষ্কের স্ক্রিন থেকে যাবতীয় ঘটনা উধাও হয়ে গেল।

চলবে…

গুগল নিউজে সাময়িকীকে অনুসরণ করুন 👉 গুগল নিউজ গুগল নিউজ

এই নিবন্ধটি শেয়ার করুন
কথাসাহিত্যিক মোহিত কামালের জন্ম ১৯৬০ সালের ০২ জানুয়ারি চট্টগ্রামের সন্দ্বীপ উপজেলায়। তাঁর বাবার নাম আসাদুল হক এবং মায়ের নাম মাসুদা খাতুন। তাঁর শৈশব-কৈশোর কেটেছে আগ্রাবাদ, চট্টগ্রাম ও খালিশপুর, খুলনায়। বর্তমান নিবাস ধানমন্ডি, ঢাকা। স্ত্রী মাহফুজা আখতার মিলি, সন্তান মাহবুব ময়ূখ রিশাদ, পুত্রবধূ ইফফাত ইসলাম খান রুম্পা ও জিদনি ময়ূখ স্বচ্ছকে নিয়ে তাঁর সংসার। চার ভাই এক বোনের মধ্যে চতুর্থ সন্তান তিনি। তাঁর অ্যাফিডেভিট করা লেখক-নাম মোহিত কামাল। তিনি সম্পাদনা করছেন শুদ্ধ শব্দের নান্দনিক গৃহ, সাহিত্য-সংস্কৃতির মাসিক পত্রিকা শব্দঘর। তাঁর লেখালেখির মুখ্য বিষয় : উপন্যাস ও গল্প; শিশুসাহিত্য রচনার পাশাপাশি বিজ্ঞান বিষয়ে গবেষণাধর্মী রচনা। লেখকের উড়াল বালক কিশোর উপন্যাসটি স্কলাস্টিকা স্কুলের গ্রেড সেভেনের পাঠ্যসূচিতে অন্তর্ভূক্ত করা হয়েছে; ষষ্ঠ শ্রেণির শিক্ষার্থীদের জন্যও বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রের পাঠাভ্যাস উন্নয়ন কর্মসূচি (ঝঊছঅঊচ) কর্তৃকও নির্বাচিত হয়েছে। এ পর্যন্ত প্রকাশিত কথাসাহিত্য ৩৭ (উপন্যাস ২৪, গল্পগ্রন্থ ১৩)। এ ছাড়া কিশোর উপন্যাস (১১টি) ও অন্যান্য গ্রন্থ মিলে বইয়ের সংখ্যা ৫৫। জাতীয় পুরস্কার: কথাসাহিত্যে অবদান রাখার জন্য তিনি বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কার (২০১৮), অগ্রণী ব্যাংক-শিশু একাডেমি শিশুসাহিত্য পুরস্কার ১৪১৮ বঙ্গাব্দ (২০১২) অর্জন করেছেন। তাঁর ঝুলিতে রয়েছে অন্যান্য পুরস্কারও; হ্যাঁ (বিদ্যাপ্রকাশ, ২০২০) উপন্যাসটি পেয়েছে সমরেশ বসু সাহিত্য পুরস্কার (২০২০)। পথভ্রষ্ট ঘূর্ণির কৃষ্ণগহ্বর (বিদ্যাপ্রকাশ, ২০১৪) উপন্যাসটি পেয়েছে সিটি আনন্দ আলো সাহিত্য পুরস্কার (২০১৪)। সুখপাখি আগুনডানা (বিদ্যাপ্রকাশ, ২০০৮) উপন্যাসটি পেয়েছে এ-ওয়ান টেলিমিডিয়া স্বাধীনতা অ্যাওয়ার্ড ২০০৮ এবং বেগম রোকেয়া সম্মাননা পদক ২০০৮―সাপ্তাহিক দি নর্থ বেঙ্গল এক্সপ্রেস-প্রদত্ত। না (বিদ্যাপ্রকাশ, ২০০৯) উপন্যাসটি পেয়েছে স্বাধীনতা সংসদ নববর্ষ পুরস্কার ১৪১৫। চেনা বন্ধু অচেনা পথ (বিদ্যাপ্রকাশ, ২০১০) উপন্যাসটি পেয়েছে ময়মনসিংহ সংস্কৃতি পুরস্কার ১৪১৬। কিশোর উপন্যাস উড়াল বালক (রোদেলা প্রকাশনী, ২০১২; অনিন্দ্য প্রকাশ, ২০১৬) গ্রন্থটি ২০১২ সালে পেয়েছে এম নুরুল কাদের ফাউন্ডেশন শিশুসাহিত্য পুরস্কার (২০১২)। তিনি মনোচিকিৎসা বিদ্যার একজন অধ্যাপক, সাবেক পরিচালক জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউট ,ঢাকা
একটি মন্তব্য করুন

প্রবেশ করুন

পাসওয়ার্ড ভুলে গেছেন?

পাসওয়ার্ড ভুলে গেছেন?

আপনার অ্যাকাউন্টের ইমেইল বা ইউজারনেম লিখুন, আমরা আপনাকে পাসওয়ার্ড পুনরায় সেট করার জন্য একটি লিঙ্ক পাঠাব।

আপনার পাসওয়ার্ড পুনরায় সেট করার লিঙ্কটি অবৈধ বা মেয়াদোত্তীর্ণ বলে মনে হচ্ছে।

প্রবেশ করুন

Privacy Policy

Add to Collection

No Collections

Here you'll find all collections you've created before.

লেখা কপি করার অনুমতি নাই, লিংক শেয়ার করুন ইচ্ছে মতো!