সিরিজের দ্বিতীয় টি-টোয়েন্টিতেও জয় পেলো বাংলাদেশ। নিউজিল্যান্ডকে ৪ রানে হারালো টাইগাররা। ১৪২ রানের টার্গেটে ব্যাট করতে নেমে ৫ উইকেটে ১৩৭ রান করে সফরকারীরা। এই জয়ে ২-০ তে এগিয়ে গেলো স্বাগতিকরা।
মিরপুর শেরে বাংলা স্টেডিয়ামে টস জিতে আগে ব্যাটিংয়ের সিদ্ধান্ত নেন টাইগার দলপতি মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ। ব্যাট হাতে ৬ উইকেট হারিয়ে নির্ধারিত ২০ ওভার শেষে ১৪১ রান করে রিয়াদ বাহিনী।
মিরপুরে বিকেল ৪টায় শুরু হয় ম্যাচ। এদিন বাংলাদেশ দলে কোনো পরিবর্তন ছাড়াই প্রথম টি–টোয়েন্টি ম্যাচের দল নিয়ে মাঠে নামে। এই ম্যাচে জিতলে সিরিজ জয়ের দিকে আরো একধাপ এগিয়ে যাবে স্বাগতিকরা। আর সফরকারীরা জিতলে সমতায় ফিরবে। এমন সমিকরণ দিলেঅ দু দলেই।
ম্যাচ দিয়ে নিউজিল্যান্ডের হয়ে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অভিষেক ঘটে পেসার বেন সিয়ার্সের। জ্যাকব ডাফির জায়গায় খেলেন তিনি। নিউজিল্যান্ড দলে মোট দুটি পরিবর্তন আনা হয়েছে। ব্লেয়ার টিকনারের জায়গায় খেলছেন হামিশ বেনেট।
বাঁ হাতি স্পিনার এজাজ প্যাটেলকে দিয়ে আক্রমণ শুরু করে নিউজিল্যান্ড। প্রথম বলেই তাঁকে মিডউইকেটে তুলে মেরে লক্ষ্যটা বুঝিয়ে দেন ওপেনার মোহাম্মদ নাঈম। প্রথম ওভার শেষে বিনা উইকেটে ৩ রান তুলে বাংলাদেশ।
স্পিনার ম্যাকনচির বলে তুলে মারতে গিয়ে ক্যাচ দেন লিটন দাস। স্কয়ার লেগে ক্যাচ ছাড়েন গ্র্যান্ডহোম। পরের বলেই উঠেছে এলবিডব্লুর আবেদন। ২ ওভার শেষে বাংলাদেশ বিনা উইকেটে ৬ রান তুলে নেয়।
তৃতীয় ওভারে এজাজ প্যাটেলকে টানা দুই চার মারেন লিটন দাস। ৩ ওভার শেষে বিনা উইকেটে ১৫ রান তুলে বাংলাদেশ।
ইনিংসের চতুর্থ ওভারে আক্রমণে পেসার হামিশ বেনেটকে আনেন নিউজিল্যান্ড অধিনায়ক টম ল্যাথাম। নিজের প্রথম ওভারেই স্লোয়ার মেরে ব্যাটসম্যানকে বোকা বানানোর চেষ্টা করেন বেনেট। কিন্তু সফল হননি। একটি চারসহ ৬ রান দেন। বাংলাদেশ ৪ ওভার শেষে বিনা উইকেটে ২১ রান করে।
শেরেবাংলা স্টেডিয়ামের মন্থর উইকেটে বল থেমে আসায় সহজাত ব্যাটিংটা করতে পারছেন না দুই ওপেনার। পাওয়ার প্লে–র প্রথম ৬ ওভার শেষে বাংলাদেশ বিনা উইকেটে ৩৬ রান তুলে টাইগাররা।
১০ম ওভারে এসে প্রথম ছক্কার দেখা পায় বাংলাদেশ। ছয় মারার এক বল পরেই বোল্ড হন লিটন দাস। রচিন রবীন্দ্রর টার্ন করে বেরিয়ে যাওয়া বলে ঘুরিয়ে খেলতে গিয়েছিলেন লিটন, তবে ব্যাটে লেগে বল গিয়ে ভেঙে দেয় স্টাম্প। ২৯ বলে ৩৩ রান করে ফেরেন লিটন। এরই সঙ্গে ৫৯ রানে প্রথম উইকেট হারায় স্বাগতিকরা।
এরপরই বাংলাদেশ হারায় মুশফিকের উইকেট। রবীন্দ্রর ঝুলিয়ে দেওয়া বলে খেলতে গিয়ে মিস করেন মুশফিক, তবে ক্রিজে পা ফেরাতে পারেননি। টম ল্যাথাম ভাঙেন স্টাম্প, বাংলাদেশ হারায় দ্বিতীয় উইকেট।
১১তম ওভারে ম্যাকনচিকে দুটি চার মারলেও শেষ বলে তুলে মারতে গিয়ে আউট হন সাকিব। ৭ বলে ১২ রান করেন তিনি।
রবীন্দ্রের বলে আরেকটি উইকেটের পতন হয় বাংলাদেশের। উইকেটে জমাট হওয়া নাঈম ৩৯ বলে ৩৯ রান করে ফেললেন। লং অনে ব্লান্ডেলের হাতে ধরা পড়েন চতুর্থ বাউন্ডারির আশায় নাঈম। বাংলাদেশ ৪ উইকেটে ১০৬ রান করে।
৩ বল টিকল আফিফের ইনিংস। তিন বল থেকে তিন রান করে এই ইনিংসে এজাজ প্যাটেলকে প্রথম উইকেটের স্বাদ দিলেন এই বাঁহাতি। বাংলাদেশের স্কোর ৫ উইকেটে ১০৯ রান।
শেষ বলে বাউন্ডারির আশায় তুলে মেরেছিলেন নুরুল। কিন্তু বল ৩০ গজের মধ্যেই আটকে থাকল। অনেক দূর দৌড়ে এসে দুর্দান্ত এক ক্যাচ ধরেছেন উইল ইয়ং। বাংলাদেশে থামল ১৪১ রানে। ৩২ রানে ৩৭ রান তুলে অপরাজিত ছিলেন মাহমুদউল্লাহ। ৯ বলে ১৩ রান করেছেন নুরুল। নিউজিল্যান্ডের রচিন রবীন্দ্র ২২ রানে পেয়েছেন ৩ উইকেট।
জবাবে ব্যাটিংয়ে নেমে দেখে শুনেই খেলতে থাকে নিউজিল্যান্ড দলের ওপেনাররা। কিছুটা মারমুখি আবার কিছুটা ধীরগতি ছিলো সফরকারীদের ব্যাটে। প্রথম ম্যাচের ভুল শুধরাবার এটাই যে মোক্ষম সময়। তাইতো ১৬ রানে প্রথম উইকেট হারায় নিউজিল্যান্ড। সাকিবের বল ব্যাট প্যাডে লেগে স্টাম্পে লেগে সাজঘরে ফেরেন রবীন্দ্র। পরে মেহেদীর বলে এগিয়ে এসে স্টাম্পড হন টম ব্লান্ডেল। ৬ রান করে ফেরেন ব্লান্ডেল। সেই সঙ্গে দুই উইকেট খোয়ায় ব্ল্যাক ক্যাপসরা।
মন্থর উইকেট ধরে নিয়েই এগিয়ে যেতে থাকে কিউইরা। পাওয়ার প্লে শেষে ২ উইকেটে ২৮ রান করে নিউজিল্যান্ড। ধীর গতিতে এগিয়ে টম ল্যাথাম ও উইল ইয়াংয়ের জুটি জমাট হতে থাকলে স্কোর বোর্ডে রান জমা হতে থাকে। পরে এই জমাট জুটিতে ব্রেকথ্রু এনে দেন সাকিব।
ইয়াংকে ফিরিয়ে ৪৩ রানের জুটি ভাঙলেন তিনি। অফস্ট্যাম্পের বাইরের বলে ব্যাট চালিয়ে থার্ডম্যানে ধরা পড়েন ইয়াং। ২৮ বলে ২২ রান করেন তিনি। ৬১ রানে তৃতীয় উইকেট হারায় নিউজিল্যান্ড। ইয়াং ফিরতেই ক্রিজে আসেন কলিন ডি গ্র্যান্ডহোম। রান আউটের সুযোগে সাজঘরে ফিরতে পারতেন গ্র্যান্ডহোম। সে যাত্রায় বেঁচে যান তিনি। ১২ ওভার শেষে নিউজিল্যান্ডের রান ৩ উইকেটে ৭১।
চার-ছক্কার পাশাপাশি দৌড়েও রান তুলে নেন ল্যাথাম ও ডি গ্র্যান্ডহোম। ল্যাথাম বাংলাদেশের জন্য বড় মাথাব্যথা হয়ে উঠেন। ১৫তম ওভারে নাসুমের দ্বিতীয় বলেই ক্যাচ দিয়ে ফিরেন ডি গ্র্যান্ডহোম (৮ রান)। স্কোর বোর্ডে নিউজিল্যান্ডের রান ৪ উইকেটে ৮৮। আরো ৫ ওভারে দরকার ছিলো ৫৪ রান।
১৬তম ওভারে মেহেদী হাসানের করা বল নিকোলসের ব্যাটের কানায় লেগে লং লেগে জমা পড়ে মুশফিকের হাতে। নিউজিল্যান্ডের দরকার আর ২৪ বলে ৪৮ রান। ডি গ্র্যান্ডহোমের পর নিকোলস ফিরলেও ৩৫ বলে ৪০ রান নিয়ে ক্রিজে টিকে থাকেন নিউজিল্যান্ড অধিনায়ক ল্যাথাম।
১৭তম ওভারে সাকিবের বলে ম্যাকনচি তিনবার রক্ষা পান। এই ওভারেই ১১ রান আসে কিউইদের খাতায়।
১৮ তম ওভারে ল্যাথাম তৃতীয় বলে পান টি-টোয়েন্টি ক্যারিয়ারের প্রথম ফিফটি।