রাজা টাজা আর নেই। আজকাল মন্ত্রী, প্রধান মন্ত্রী। আছেন জবরদস্ত নেতা। তারাই একেক জন রাজা মহারাজ। মালদার লোক। লোকবল পাইক বরকন্দাজ, সবই আছে। লড়াই করে ঘাম ঝরিয়ে ক্ষমতার কুর্সিটা বাগিয়ে তারা সেই রাজা।
তবে রাজগঞ্জের রাজার না-লড়াই, না-মেহনত। হঠাৎ করেই রাজা। মসনদে জাঁকিয়ে বসেছেন। রাজামশায় বলে ডাকে না কেউ। তবে ‘খোকা’ বলে যে হাঁক পাড়বে তেমন বুকের পাটা নেই কারও। ডাকে খোকাবাবু। ভুলে যাওয়া ভালো নামটা উদ্ধার করে অনেকে ডাকে ‘খগেন বাবু’।
‘খগেন নয়, খগেন্দ্র। আর চিঠিতে পরিস্কার করে লিখবেন খগেন্দ্র নারায়ন চৌধুরী মহোদয়।’ ওর এক সাগরেদ ভজাই আবার নরম গরম গলায় সাবধান করে দেয়।
‘খগেন্দ্র নারায়ন বাবু আাছেন নাকি?’ বাড়ির বাইরে থেকে সন্ধ্যা বেলা ডাকছিলেন পরাশর মাস্টার। অচেনা সম্ভাষণ! খোকার মা ভিতর বাড়ি থেকে বাইরে এসে দুম করে বলেই বসলেন, ‘ও নামে তো এ-বাড়িতে কেউ থাকে না।’
‘কেমন কথা বলছো মালতী? নিজের ছেলের ভালো নামটাই ভুলে বসে আছ?’ পাশের বাড়ির গগন উকলের বৌ সৌদামনি ঝনঝন করে উঠলেন।
জিভ বের করা অপদস্ত মুখে মালতী দেবী বললেন, ‘আমার খোকাকে ধরতে এলে সকালের দিকে আসবেন। এই নটা-দশটা।’
ভদ্রলোক ঘাড় বেঁকিয়ে বললেন, ‘আচ্ছা’।
মানুষটার চলে যাওয়া দেখতে দেখতে মালতী দেবী মনে মনে কথা বললেন। সন্ধ্যে হলে তো খোকাবাবু বাড়ি থাকে না। মস্তি করবে এখন। আড্ডা আর মদ। ইয়ার বন্ধুদের সাথে আরও কত কি চলবে! ছেলে আমার রাজা হয়েছে। খাতির কত!
‘অত খাতিরের কি আছে?’ ঝগড়ার সময় কাঁপতে কাঁপতে মুখের উপর বলেই দিলেন সৌদামনি। বিকেলের ওই সময়টাতে তার পাশে বসে পান চিবোচ্ছিলেন উমা রায়। একা মানুষ। শহরের স্কুলে দিদিমনি। এখন অবসর। মাস ছয়েক হ’ল থাকছেন বাপের ভিটেতে।
ঝগড়াটা জমে উঠতেই সৌদামিনির মুখের দিকে তাকিয়ে ঝপ করে বলে উঠলেন উমা দিদিমনি, ‘ঠিকই তো।’
দপ করে মাথায় আগুন ধরে গেল। ফোঁস করে উঠেলেন মালতী দেবী। কালী বাড়ীর পার্কে বিকেলের জমাট আড্ডাটা ভেস্তে দিয়ে এক নিঃশ্বাসে বলে ফেললেন, ‘আসলে তোমাদের হিংসে। আমার ছোট ছেলেটা দুটো পয়সা কামাচ্ছে তো! গাড়ি কিনবে। তোমরা ফুঁসছ খালি।’
-আমাদের মনে হিংসা নেই কোন। তবে কী-এমন কাজ করে ও? কিসের ব্যবসা?
-তোমার দুই ছেলে তো বেকার, তাই জ্বলন।’ যাবার সময় পিছন ফেরে কথাটা ছুঁড়ে দিয়ে হন হন করে বাড়ির পথ ধরলেন মালতী দেবী।
রাস্তাটা শর্টকাট। তবে নির্জন, কাদা মাখা। বর্ষার জল গিলে মাটি নরম। ঘাস গুলো বেড়ে উঠে পায়ে-চলা দাগ মুছে দিয়েছে। চটির ফাঁক গলে পায়ের পাতায় ঘাসের সুরসুরি। গরম শরীরে শীতল ছোঁয়া। বাতাসেও আদো আদো ঠাণ্ডা। মনের তাপটা একটু নরম হল যেন! ভালো লাগছে এখন। বড় একটা শ্বাস নিয়ে মুখ তুললেন মালতী দেবী।
চোখের সামনে বৃদ্ধ পূজারী। প্রশান্ত মুখমণ্ডল। গায়ে নামাবলী। এই রাস্তা দিয়েই মানুষটার মন্দির যাতায়ত। রাস্তার ধারে ঝাঁকড়া একটা জামরুল গাছের পাশে দাঁড়িয়ে পুরোহিত বললেন, ‘কেমন আছো মা? চিন্তিত লাগছে, কোন বিপদ হয়নি তো!’
প্রশ্নের মধ্যে কি যেন একটা ছিল। মালতী হঠাৎ বলেই ফেললেন, ‘আমার ছোট ছেলেকে গ্রামের লোক খুব হিংসা করে বাবা। ওটাই বড় দুশ্চিন্তা।’
-এমন করা তো উচিত নয়। সব ঠিক হয়ে যাবে মা।
মালতী ঘাড় নাড়লেন। প্রাক সন্ধার মরা আলোয় ওর শুকনো মুখের দিকে খানিক তাকিয়ে পুরোহিত বললেন, ‘চিন্তা করো না মা। আচ্ছা, তোমার খোকা কী করে যেন এখন?’
ঢোঁক গিললেন মালতী। একবার কেশে নিয়ে বললেন, ‘পড়াশুনা তো তেমন করেনি। মাধ্যমিকটা পাশ দিয়েছে।’
-তারপর?
-বেকার বসেছিল। এখন টুকটাক কামাই কচ্ছে। বিয়ে করেছে তো। বসে থাকলে কি চলে, বলুন!
-ঠিক কথা। কিসের ব্যবসা ওর?
-সব তো আমি জানি না। বাড়িতেই থাকি।
-একটু খোঁজ নিও। পূজার দেরী হয়ে যাচ্ছে। চললাম।’
কথাটা বলেই লম্বা পা ফেলে হাঁটতে থাকলেন পুরোহিত। আর উল্টোদিকে ধীর পদক্ষেপ মালতী দেবীর। মাথায় চিন্তা। পুরোহিত মশায় কী খোঁজ নিতে বললেন!
সৌদামিনীর প্রশ্নটা আবার বড় পুকুরের সোল মাছের মত ঘাই মারছে। ‘কী এমন কাজ করে ও? তোমার খোকার কিসের ব্যবসা?’
সত্যিই তো বড় ছেলে ইস্কুল মাস্টার। মেজটা বই-এর দোকানে কর্মচারী। মাইনা করি তেমন নয়, তবে চলনসই। ছোট ছেলে কী করে? দুটো মোটর সাইকেল …। আবার গাড়ি কিনবে বলছে! মুখের উপর জিজ্ঞেস করবে নাকি? খোকা, কী কাজ ধরেছিস তুই?
বলবো কখন?! রাত্তিরে বাড়ি ফিরেই তো সটান বৌয়ের ঘরে ঢুকে খিল আঁটে। বউটা তেমনি…। স্বামী সোহাগী। শুধু খাওয়া গয়না আর সাজগোজ। তবে পড়াশুনা করা মেয়ে। অন্য দুই বৌয়ের মত টুম্পা কখনও মিথ্যে কথা বলে না। টুম্পা কি সব জানে? জিজ্ঞেস করে দেখব নাকি?
ভাবনার ঝাঁকা মাথায় নিয়ে বাড়ি ঢুকলেন মালতী দেবী। তুলসী তলায় প্রদীপ জ্বাললেন। কাজের মধ্যেও প্রশ্নটা ঘুরে ফিরে সূচ ফোটাচ্ছে মাথায়। আগে তো কখনও ভাবেননি ছেলের কারবার কী! আজকে ওই সৌদামনী, তারপর পুরোহিত মশায় মাথার মধ্যে কী একটা খিচ ঢুকিয়ে দিল! তুলসী বেদীতে ফুল আর বাতাসা রেখে জোরে শাঁখ বাজালেন মালতী দেবী। ডানদিকে ঘুরে গঙ্গা জলের ঘটিটা তুলতে গিয়েই নজর আটকে গেল।
ছোট বৌ টুম্পা! একটু দূরে দাঁড়িয়ে দু’হাত জোড় করে প্রণাম করল। কী ব্যাপার আজ? অন্য দিন তো প্রণাম করতে আসে না। প্রশ্নটা ভুস করে উঠল বটে, তবে কেন জানি মনটা ঝরঝরে লাগলো। ওর দিকে তাকিয়ে একটু হাসলেন মালতী দেবী। তারপর তুলসি গাছে গঙ্গা জল ঢেলে রান্না ঘরে ঢুকলেন। এ সময় চা বানিয়ে স্বামীর ঘরে পৌঁছে দিয়ে আসতে হয়। কাজটা নিঃশব্দে করলেন মালতি। তারপর নরম গলায় ডাকলেন, ‘বৌমা, চা খাবে এস।’
শান্ত সন্ধ্যা। তেমন গরম নেই। শিক্ষিত সাজগোজ করা বৌমা সামনে বসে। এটাই তো কথা বলবার সময়। ভাবলেন মালতী দেবী। বারান্দায় চেয়ারে হেলান দিয়ে চায়ে একটা আলতো চুমুক দিলেন। চায়ের স্বাদ জিভে মাখিয়ে স্বর নরম করে বললেন, ‘আমার খোকাটা পরিশ্রম করে খুব। ভালো করে যত্ন নিও।’
মাথা নাড়ল টুম্পা। বারান্দার অল্প আলো। তাতেই টুম্পার মুখটা ঝলমল করছে। ওর দিকে তাকিয়ে মালতী দেবী আবার বললেন, ‘আচ্ছা, খোকার ব্যবসা ভালো চলছে তো?’
-ভালোই তো চলছে মা।
-আচ্ছা কিসের ব্যবসা করে ও?’ আসল প্রশ্নটা আলতো করে ভাসিয়ে দিলেন মালতী দেবী।
-আমি তো ঠিক জানি না মা। তবে মনে হয়…
-কী মনে হয়?
মুখে যেন কুলুপ আঁটল টুম্পা। ওর তেলতেলে মুখের দিকে তাকিয়ে আবার আগের প্রশ্নটাই ছুঁড়লেন, ‘কিসের ব্যবসা করে ও?’
-জমি-জমার ব্যবসা বোধহয়,’ একটা ঢোঁক গিলে টুম্পা বলল।
-জমি কেনা-বেচা করে নাকি? মানে জমির দালাল? ইস্কুল মাস্টারের ছেলে জমির দালাল?
-আমি তো জানি না মা। তবে একটু আধটু শুনি…
-কী শোন বৌমা?
-এই টুক টাক কথা। ফসল, টাকা পাঠানো…।
-আর, আর কি?
-সানু চৌধুরীর জমি…।
-সানু চৌধুরী’? কথাটা কানে ঢুকতেই কপালে ভাঁজ মালতী দেবীর। চোখ গোল গোল। মাথায় ডজন প্রশ্ন খোঁচা মারছে কেবল। সানু বাবুদের তো মেলা জমি। সানু বাবু আর মানু বাবু। মানু বাবু নিঃসন্তান। সানু বাবুর চার ছেলে। কেউ ডাক্তার, কেউ উকিল। ছোট দু’জনের একটা দারোগা। আরেকটা মাস্টার। ওরা তো ফসলের ভাগ নিতে আসে না। সে সব কি তাহলে …
-মা কিছু বলবেন?’
পুত্রবধূর কথায় চিন্তার সুতো কেটে গেল। বড় একটা শ্বাস ফেললেন মালতী দেবী। বললেন, ‘না ঠিক আছে। তুমি বিশ্রম নাও।’
একটু থেমে আবার, ‘আচ্ছা তোমার শরীরটা কেমন যেন লাগছে!’
একটা ঢোঁক গিলল টুম্পা। অনেকক্ষণ চুপ থেকে বলল, ‘পেটটা একটু ভারী ভারী লাগছে মা…।’
‘খুব ভালো, কবে থেকে! লজ্জার কি আছে’ বলতে বলতে টুম্পার গাল টিপে আদর করলেন। টুম্পার হাসি মুখের দিকে তাকিয়ে বললেন, ‘তুমি ঘরে গিয়ে বিশ্রাম নাও। আমি আসছি।’
টুম্পার কাছে যাবার আগে স্বামীর ঘরে ঢুকলেন মালতী দেবী। মাথার কাছে গুটিয়ে বসলেন। গলার স্বর কয়েক পর্দা উচু। বললেন, ‘তুমি জানো খোকা কী করে?’
বিছানায় উঠে বসলেন পরাশর ঘোষ। রিটায়ার করবার পর থেকে বেশীর ভাগ সময় ভাঙা ঘরে শুয়েই থাকেন মানুষটা। একটা হাঁই তুলে মালতী দেবীর চোখে চোখ। বললেন, ‘কী আর করবে? আমার পেনসনের টাকায় ফুটুনি…’!
-রাখো তো…।’ ঝন ঝন বেজে উঠল কণ্ঠ। ‘তোমার পেনসনের টাকায় মোটর সইকেল কিনেছে, গাড়ি কিনবে! বিশ্বাস করবে কেউ?’ চোখ পাকিয়ে মালতী দেবী কণ্ঠ ছাড়লেন জোরে।
-কী বলছ তুমি?
-যা বলছি সব ঠিক।
-এসবের টাকা কোথায় পায়?
-বোধহয় সানু বাবুদের জমির ফসল, বুজছ’! জানাজানি হলে…? ফিসফিসিয়ে বললেন মালতী দেবী। একটু থেমে স্বামীর চিন্তিত মুখের দিকে তাকিয়ে আবার, ‘কোন বিপদ নেই তো?’
-ভালো করে খোঁজ নাও তো? ওদের জমির ফসল খোকা কেন নিতে যাবে?
-আমার ভয় করছে। সানু বাবুর ছোট ছেলে মাস্টার। আবার রাজনীতি করে। আরেক জন পুলিশ। কোন দিন কী ঝামেলায় ফাঁসিয়ে দেবে!
(২)
মুখ নিচু করে কথা বলে ভজাই। ভজহরি দাস। লম্বা শক্তপোক্ত গড়ন। শ্যামলা রঙ। মুখে অল্প দাড়ি। সকালবেলা মালতী দেবীর বাড়িতে ঢুকে মাখন স্বরে বলল, ‘জ্যেঠিমা, মোটর সাইকেলের চাবিটা…’।
বারান্দায় হাঁটু মুড়ে বসে বাঁধাকপি জিরি জিরি করছিলেন মালতী দেবী। ভাজায়ের ডাকে দরজার দিকে মুখ তুলে একটু তকালেন। তারপর স্বরে মধু। বললেন, ‘এস ভজাই। চেয়ারে বসো।’
ভিতর বাড়িতে এত খাতির কেন আজ! মাঝে মধ্যেই তো খোকাদার মোটর সাইকেল নিয়ে কাজে যাই। কাজের মেয়েকে দিয়ে ঘরে রাখা চাবিটা পৌঁছে দেয় জ্যেঠিমা। সকালে এই সময়ে খোকাদার ঘুম ভাঙে না। দূরে কোন কাজে যেতে হলে সকাল সকাল ওর মোটর সাইকেলটা নিতে আসে। ওটা বাড়ির বাইরে ঠেলে নিয়ে এসে ইঞ্জিন চালু করে ভজাই। কেউ তাকিয়েও দেখে না। আর আজ! জ্যেঠিমা আদর করে কাছে ডাকছেন। কেন রে বাবা!
একটু থতমত খেল ভজাই। কাঠের টেবিলের ধার ঘেঁসে রাখা চেয়ারটা খানিক দূরে টেনে নিয়ে গিয়ে বসল। তখনই আবার কানে ঢুকল মালতী দেবীর মোলায়েম স্বর, ‘ভজাই, কোথায় যাবি রে সাত সকালে?’
-এই একটু কাজ আছে জেঠিমা।’ মুখ নামিয়ে কথাটা বলেই ভজাই চুপ।
-খুব তাড়া আছে না!
-খুব আর্জেন্ট।
-ঠিক আছে বাবা যাবিই তো। একটু খেয়ে যা। মুখটা বড় শুকনো লাগছে যে!
প্লেটে রুটি তরকারি আর এক বাটি ডাল এনে টেবিলে রাখলেন মালতী দেবী। বললেন, ‘অল্প একটু খেয়ে নাও’।
একগাল হেসে ডালের বাটিতে চুমুক দিল ভজাই। ওর মুখের দিকে তাকিয়ে মালতী দেবী বললেন, ‘কোথায় যাবে?’
-বর্ধমান’। অসতর্ক ভজায়ের মুখ দিয়ে বেরিয়ে পড়ল কথা।
-ও, সমীরের বাড়ি যাবি? সনাতনদার ছেলে। কত বড় ডাক্তার!’ একটু থেমে আবার, ‘তুমি একাই যাবে, না সঙ্গে আরও কেউ আছে?’
-একাই যাচ্ছি। গ্রামের তিনজন রওনা দিয়েছে ট্রেনে।
-আচ্ছা বাবা। সাবধানে যেও। অনেকটা পথ।
মাথা নাড়ল ভজাই। ওর দিকে তাকিয়ে ধীরে ধীরে মালতী দেবী বললেন, ‘ওদের জমির ফসলের টাকা তোমাদের হাত দিয়েই তো পাঠিয়ে দেয় আমার খোকা।’
-আমি এত জানি না জ্যেঠিমা। খোকাদা বন্ধ খামে যা দেয়, পৌঁছে দিই।
-আর, আর কী কর?
-গ্রামের দু’পাচ জন রোগীকে ওনার কাছে দেখিয়ে নিয়ে আসি।
-বাঃ, খুব ভালো কাজ কর তোমরা। বাবা, আর কিছু খাবে?
দু’পাশে মাথা নেড়ে উঠে পড়ল ভজাই। একটু পরে স্বামীর ডাকে বারান্দা লাগোয়া ঘরে ঢুকলেন মালতী দেবী।
পরাশর বাবু বিছানায় উঠে বসেছেন। একটা ঢোঁক গিলে বললেন, ‘সব শুনেছি। কী ফন্দি করে বিনা মেহনতে টাকা কামাচ্ছে আমাদের খোকা বাবু।’
-কোন বিপদ নেই তো?’, মালতী দেবীর স্বরে উদ্বেগ।
-বিপদ কী হবে জানিনা। তবে ব্যাপারটা তো অন্যায়।
-কেন, অন্যায় কেন?
-হাজার টাকা তুলে একশ দিয়ে আসছে। বাকীটা নিজের পকেটে। অন্যায়, অন্যায়। পাপ…।
-তোমার সেই এক কথা। পাপ ন্যায় অন্যায়। এখন দিনকাল তো অন্য রকম।
-ঠিক কথা। তবে ধর্মের কলটা কিন্তু মরেনি।
-অতো বুঝিনা বাপু। আমি এখন কী করি! খোকাকে কিছু বললে তো তুলকালাম …।
-এখনই বলতে যেও না। খোঁজ নাও। কে ওকে ফসলের ভাগ তুলতে বলেছে? সানু বাবুর কোন্ ছেলে? ওদের ভায়ে ভায়ে তো কোন কাল থেকেই লাঠালাঠি।
‘হু’, ছোট্ট উত্তর ছুঁড়ে দিয়ে ঘর থেকে বেরিয়ে গেলেন মালতী দেবী। বারান্দার চেয়ারে বসলেন। মাথায় আকাশ পাতাল ভাবনা। খোকা ঘুম থেকে উঠলে ওকে ডেকে কিছু বলবো নাকি! জিজ্ঞেস করবো, কী কাজ করিস তুই?
সত্যিটা জানতেই হবে। পাশের বাড়ির সৌদামিনির প্রশ্নটা যে কেবলই খোঁচা মারছে, ‘কী এমন কাজ করে তোমার খোকা বাবু? কিসের ব্যবসা? চুরি না ডাকাতি?’