আট বছরের এক শিশু শিক্ষার্থীকে যৌন নিপীড়ন, বিভিন্ন কায়দায় শারীরিক ও মানসিক নির্যাতনের অভিযোগে দায়ের করা মামলায় এক মাদ্রাসা শিক্ষককে গ্রেফতার জেলহাজতে পাঠানো হয়েছে। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন বরিশাল বিমানবন্দর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) কমলেশ চন্দ্র হালদার। গ্রেফতার হওয়া জোবায়ের সদর উপজেলার ধর্মাদী এলাকার জামেউল উলুম মাদরাসার হেফজ বিভাগের শিক্ষক।
ওসি জানান, ওই শিশু শিক্ষার্থীর বাবা কাইয়ুম হোসেন হাওলাদার নির্যাতনের অভিযোগে থানায় রোববার পূর্ব ধর্মাদী জামেউল উলুম মাদ্রাসার হেফজ বিভাগের শিক্ষক ও বরিশাল সদর উপজেলার জাগুয়া ইউনিয়নের খয়েরদিয়া এলাকার আব্দুস সালাম খানের ছেলে জোবায়ের আহম্মেদ (২২) কে একমাত্র আসামী করে একটি মামলা করেছেন।
বিমানবন্দর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) কমলেশ চন্দ্র হালদার দায়েরকৃত মামলার উদ্ধৃতি দিয়ে আরো জানান, নির্যাতনের শিকার শিশু জামেউল উলুম মাদরাসার হেফজ বিভাগের ছাত্র । শনিবার সে বাড়ি আসার পর থেকে তার মন খারাপ দেখে বাবা-মা মন খারাপের কারণ জানতে চান।
সে জানায়, হেফজ বিভাগের শিক্ষক জোবায়ের আহমেদ ২৫ আগস্ট রাতে তার কাছে আসেন। এরপর ভয়ভীতি দেখিয়ে তাকে আপত্তিকর কাজ করতে বাধ্য করেন। এর আগেও ওই শিক্ষক বিভিন্ন সময় তাকে কাছে ডেকে আপত্তিকর আচরণ করেছেন।
রোববার (২৯ আগস্ট) দুপুরে তাকে আদালতে সোপর্দ করার পর আদালতের নির্দেশে সন্ধ্যায় তাকে বরিশাল জেল হাজতে পাঠানো হয় বলে ওসি জানান।
নির্যাতিত শিশু আবু তালহা বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছে।
হাসপাতালের শিশু সার্জারি বিভাগের চিকিৎসক ডা: একে এম মিজানুর রহমান বলেন, শিশুটির দুই পাশে ও হাতের পেছনের অংশে কামড়ের দাগই বিকৃত যৌনতার পরিচায়ক।
এছাড়া শিশুটির গায়ের বিভিন্ন স্থানে আঘাতের চিহ্ন, চোখে রক্ত জমে রয়েছে। বর্তমানে শিশুটি কিছুটা মানসিক সমস্যাতেও ভুগছে। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে ক্ষত সারলেও মানসিক সমস্যা কাটতে সময় লাগবে বলে জানান চিকিৎসক।
শিশুটির বাবা নগরীর ২৭ নম্বর ওয়ার্র্ডের ডেফুলিয়া এলাকার বাসিন্দা ও রাজমিস্ত্রী কাইয়ুম হোসেন হাওলাদার জানান, গত রমজানের ঈদের পর তার বাড়ির পাশের পূর্ব ধর্মাদী জামেউল উলুম নামের এই মাদ্রাসায় কোরআন শরীফ হেফজ পড়ানোর জন্য ভর্তি করান। সেখানকার শিক্ষক হাফেজ জোবায়ের আহম্মেদের তত্ত্বাবধানেই ৮ শিশু কোরআনে হেফজ পড়েন।
তিনি আরও বলেন, গত ২৫ আগস্ট রাত ১১ টার দিকে মাদ্রাসার অন্য শিক্ষার্থীরা ঘুমিয়ে পড়লে আবু তালহাকে ঘুম থেকে জাগিয়ে তোলেন শিক্ষক জোবায়ের এবং যৌনপিড়নের চেষ্টা করলে শিশুটি রাজি না হওয়ায় তাকে জোরপূর্বক নিতম্বের দুই পাশে ও বাম হাতের পেছনে কামড় দিয়ে রক্তাক্ত জখম করেন ওই শিক্ষক।
এসময় শিশু তালহা চিৎকার করলে তার গলা চেপে ধরার পাশাপাশি বিষয়টি প্রকাশ করলে হত্যার হুমিক দেন জোবায়ের।
পাশাপাশি শিক্ষক জোবায়েরের প্রস্তাবে রাজি না হওয়ায় সাঁতার শেখানোর নামে পুকুরের পানিতে তালহাকে চুবানো, হাতে মল মাখিয়ে চাটানো এবং বুকের ওপর সিলিন্ডার রেখে নির্যাতন করার বিষয়েও তিনি জানতে পারেন।
পরবর্তীতে স্বজনদের নিয়ে মাদ্রাসা প্রাঙ্গনে উপস্থিত হয়ে শিক্ষক জোবায়েরকে আটক করে পুলিশের হাতে সোপর্দ করেন শিশুটির বাবা।