যে জিনিস মনকে খুশি করতে পারে না, তার থেকে দূরে থাকাই ভাল
যে জিনিস বা যে কাজ আমাদের মনকে আনন্দ দেয় না, মনকে খুশি করতে পারে না, তার থেকে দূরে থাকাই ভাল। কিন্তু এমনও তো হয় সারা দিনে আমরা এমন অনেক কাজ করে থাকি, যা কোনওভাবেই আমাদের খুশি করতে পারে না। তবু নানা কারণে আমরা তা করে থাকি। তাই চেষ্টা করা উচিত সেই কাজের পিছনে সময় কম নষ্ট করা । সেই সঙ্গে যে কোনও বিষয়ে সময় নষ্ট করার আগে নিজেকে একটাই প্রশ্ন করতে হবে, “এই কাজটি কি আমায় আনন্দ দেবে?”
কিম্বা মন খারাপ মুহূর্তের সময় আমরা কি করব? আমরা কিন্তু বুঝতে পারছি মনটা কেমন খারাপ খারাপ লাগছে, এই খারাপ মনটাকে তখনই নিজের আয়ত্তে আনতে হবে, মনকে কিছুতেই এর চেয়ে বেশি বাড়তে দেওয়া ঠিক নয়। তাহলে সেই মুহূর্তটাতে ঠিক কি করা উচিত? যখন-ই মন খারাপ হবে ঠিক তখনই খুশির কথা ভাবতে হবে। জীবনে আমাদের অনেক অনেক সুন্দর মুহূর্ত কিন্তু আছে, নেই বললে মিথ্যে বলা হবে। সেই মুহূর্তগুলোকে চোখ বন্ধ করে ভাবলে মনটা একটু হলেও পালটে যাবেই যাবে। একবার একজন সাংবাদিককে সৌরভ গাঙ্গুলী বলেছিলেন’ যখন আমার ব্যাটিং ভাল যেত না, তখন আমি সেঞ্চুরি করা ম্যাচগুলোর ভিডিও দেখতাম। তাতে ব্যাটিং-এ উন্নতি না ঘটলেও পারফরমেন্স ভাল করার জন্য মনের জোর খুব বেড়ে যেত।’
আসলে মনও একটা বাচ্চারই মতো, তাকে যদি ভুলিয়ে রাখা যায় তাহলেই আনন্দ কিন্তু আমাদের হাতের মুঠোয়। আর সম্পর্কের ক্ষেত্রে বলা যেতে, যে সম্পর্ক আমাদেরকে খুশি দেয় না তা থেকে বেরিয়ে আসাই উচিত। তা বন্ধুই হোক বা যেই হোক। কারণ অপর পক্ষকে আরো গভীরে নিয়ে গিয়ে খাদে ফেলে দেওয়া একেবারেই ঠিক নয়, তাই তাকে পরিস্কার করে বুঝিয়ে বলে সেখান থেকে বেরিয়ে আসাই উচিত। কারণ যে সম্পর্কের মধ্যে আনন্দ নেই, যে সম্পর্ক প্রতিটি দিনকে মন খারাপের দিকে নিয়ে যাচ্ছে, বাঁচার আগ্রহকে কমিয়ে দিচ্ছে, মানসিক ও শারীরিক ভাবে অসুস্থ করে দিচ্ছে, সেই সম্পর্কের কোনো মানেই হয় না। আর এই মন খারাপ নিয়ে বাঁচাটা যে বড়ই কঠিন। আর যদি একান্তই এমন মানুষদের সঙ্গ ছাড়া সম্ভব না হয়, তাহলে যতটা সময় পারা যায় এমন মন খারাপ করা মানুষদের থেকে দূরে থাকাই উচিত। কারণ খুশি যেমন সংক্রমক, তেমনি দুঃখও কিন্তু! তেমনি যারা হাসতে জানে না, সব সময় মুখটাকে গম্ভীর করে রাখে তাদের থেকেও দূরে থাকা ভাল। সৎ সঙ্গে থাকলে যেমন স্বর্গবাস সম্ভব হয়, তেমনি হাসিখুশি মানুষের সঙ্গে থাকলে খুশির সন্ধান পেতেও কষ্ট হয় না। আসলে খুশি থাকাটা অনেকটা সংক্রমণের মতো। তাই দেখবেন কাউকে হাসতে দেখলে আপনা থেকেই আমাদের মনও খুশিতে ভরে ওঠে, মনটা কেমন ভাল হয়ে যায়।
আমরা কী পরিবেশে দিনের বেশিরভাগ সময়টা কাটাচ্ছি, তার উপর আমাদের সুখ-দুঃখ অনেকাংশেই নির্ভর করে। সবার আগে তাই মনকে আনন্দ ভরে রাখতে হবে কারণ এই মনটাই হল মন্দির। তাই মনের শান্তির জন্যে অন্যকে ক্ষমা করতে পারলেই আনন্দের সন্ধান পাওয়া যাবে। এই কাজটা করা বাস্তবিকই খুব কঠিন। অনেকেই ভাবতে পারেন, যে মানুষগুলোর জন্য আমি আজ এতটা কষ্টে আছি, তাদের ক্ষমা করা কি সম্ভব? হয়তো নয়। কিন্তু করতে পারলে মনে যে বিষ জমে ছিল তার পরিমাণ অনেকটাই কমে যাবে। আসল বিষয়টি হল খুশি থাকা অর্থাৎ নিজের মনটাকে আনন্দে রাখা, ঝলমলে রাখা। আর এই খুশি থাকাটা কিন্তু একটা অভ্যাস আর খুশি থাকার অভ্যাস করাটা জরুরি। মানে?
মানেটা হল খুশি থাকতে গেলে তার-ও কিন্তু একটা অনুশীলনের প্রয়োজন। আর এই কাজটা সম্ভব করতে হবে আমাদের নিজেদেরকেই। খুব সহজ ভাষায় চিত্রটা হল অর্থবান লোকেরা যেমন সব সময় টাকার কথা বলেন, স্বাস্থ্যবান যেমন শরীরের, তেমনি খুশি মনের মানুষেরা সব সময় এমন কথা বলেন যাতে বাকি সবাই খুশি হন। প্রসঙ্গত, খুশি থাকাটা কিন্তু অনুশীলনের ব্যাপার। ধরুন আপনার গিটার বাজাতে ভাল লাগে। তাহলে যখনই সুযোগ পাবেন গিটার বাজান। কারও ধরুন বই পড়তে ভাল লাগে, কেউ ছবি আঁকতে ভালবাসেন, কেউ বাগান করতে অথবা কেউ পার্কে হাঁটতে ভাল লাগে, তাহলে সেই কাজটাই কিন্তু করা উচিত। সুন্দর করে সাজুন, সাজলে মন সুন্দর হয়ে যায়। নিজের জন্যেই সাজুন। ঘরেও ফিটফাট থাকতে হবে, ঘরকে সুন্দর করে সাজাতে হবে। মাঝে মাঝে পুরনো জিনিস কে একটু রং করলে মনটা ভালো লাগবে। ফার্নিচার একটু এদিক ওদিক করা যেতে পারে, নতুন পর্দা লাগালেও মনটা দেখবেন বেশ ভাল লাগে।
আনন্দের জন্যে সবসময়ই যে কাউকে প্রয়োজন তেমন কোনো ব্যাপার নেই কিন্তু। মনটা যার যার নিজস্ব। সমমনস্ক বন্ধু না পেলে নিজের মনটাকেই একান্ত বন্ধু করে নিয়ে নিজের ছন্দেই তো চলা যায় নিজের মতো করে।
- ইচ্ছে মতো গলা ছেড়ে গান করলে মন ভাল হয়।
- নাচ করলে শরীর-মন দুটোই ভাল থাকে।
- সুন্দর সুন্দর রান্না করলে মন ভাল থাকে।
- গান শুনলেও মন ভীষণ রকম ভাল লাগে, আর তার সঙ্গে সঙ্গে নিজেও গলা মেলালে তো বাড়িটাই উৎসবের মেজাজ পায়।
এমনটা করতে থাকলে দেখবেন এক সময়ে খুশি থাকাটা অভ্যাসে পরিণত হয়ে যাবে আর আপনার চারপাশ ঘিরে যে মানুষগুলো তাদের মনও হয়ে উঠবে ঝলমলে এবং প্রাণবন্ত।
(চলবে)