সিমন রাইট। একজন ভিখারি। বয়স ৩৭ বছর। ছেঁড়া জামাকাপড় পরে সিমন সারা দিন ধরে রাস্তার পাশে বসে ভিক্ষে করেন। তাঁর হাতে ধরা থাকে একটি প্ল্যাকার্ড। তাতে লেখা— হোমলেস অ্যান্ড হাংরি। আর সামনে পাতা থাকে একটি চাদর। এ ভাবেই সারা দিন চুপচাপ বসে থেকে সে পথচারীদের দৃষ্টি আকর্ষণ করে।
পাশ দিয়ে যেতে যেতে পথ-চলতি মানুষ জনেরা গৃহহীন এবং ক্ষুধার্ত এই লোকটিকে যে যেমন পারেন অর্থ সাহায্য করেন। এ ভাবে প্রত্যেক দিন সন্ধ্যেবেলায় দেখা যায় তাঁর ঝুলিতে জমা পড়েছে কমবেশি প্রায় ২০০ পাউন্ড। ভারতীয় মুদ্রায় যার অঙ্ক গিয়ে দাঁড়ায় ২০ হাজার টাকারও বেশি।
এই ভিখিরিটি যে মাসে শুধু সাড়ে ছ’লাখ-সাত লাখ টাকাই আয় করেন তাইই নয়, সারা দিন ভিক্ষে করার পরে রাতে যে প্রাসাদোপম বাড়িতে গিয়ে ঘুমোন, সেই বাড়িটির দাম তিন লাখ পাউন্ড, অর্থাৎ ভারতীয় মুদ্রায় প্রায় সাড়ে ৩ কোটি টাকা।
যাঁর সহায় সম্বল বলতে তেমন কিছুই নেই, তিনি ভিক্ষে করতে পারেন। কিন্তু যাঁর ও রকম একটি বিশাল বাড়ি আছে, তিনি ভিক্ষে করে সত্যিকারের ভিখিরিদের মুখের গ্রাসে থাবা বসাবেন কেন?
তাঁর বিরুদ্ধে বেশ কিছু দিন ধরেই অন্য ভিখারিরা একের পর এক অভিযোগ তুলছিল। বলছিল, ও ভিখারি নয়। ওর প্রচুর টাকা। ওর প্ল্যাকার্ডে ‘হাংরি’ লেখা থাকলেও ওর ড্রাইভার ওকে যে খাবার পৌঁছে দিয়ে যায়, তা আমরা বছরে একবার মুখে তোলার কথাও স্বপ্নে ভাবতে পারি না। ‘হোমলেস’ লেখা থাকলেও সারা দিন ভিক্ষে করার পরে ও রাতে গিয়ে ঘুমোয় নিজের বিলাসবহুল বাড়িতে। মানে, ও মিথ্যে কথা বলে ভিক্ষা করে। অর্থাৎ সাধারণ লোককে ঠকায়। প্রতারণা করে। ওটা ক্রাইম।
প্রথমে বিশ্বাস না করলেও দিনের পর দিন এত অভিযোগ জমা পড়তে লাগল যে, ওয়েস্টমিনস্টার সিটি কাউন্সিলের পুলিশরা তাঁর ওপরে কড়া নজর রাখতে শুরু করে। তিনি কী করেন, কী খান, কার কার সঙ্গে কথা বলেন, রাতে কোথায় গিয়ে থাকেন— সব সব। আর এটা করতে গিয়েই সিমনের কীর্তিকলাপ দেখে পুলিশদের চক্ষু একেবারে ছানাবড়া।
অবশেষে লেইসেস্টার স্কোয়ার থেকে তাঁকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। কেস উঠে কোর্টে।
এই ঘটনাটি গোটা দুনিয়া জুড়ে এতটাই তোলপাড় করে যে, শুধুমাত্র সিমনের জন্যই ও দেশের এক ম্যাজিস্ট্রেট লন্ডনের রাস্তায় ভিক্ষা করার ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করেন। এবং প্রথমবার ধরা পড়েছেন বলে তাঁকে মাত্র ১৪ দিনের হাজতবাস দিয়েই ছেড়ে দেওয়া হয়।
কিন্তু ছাড়া পাওয়ার পরেই ম্যাজিস্ট্রেটের সেই নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে তাঁকে আবার ফুটপাতে বসে ভিক্ষে করতে দেখা যায়। সবাই বারণ করা সত্ত্বেও তিনি তাতে বিন্দুমাত্র কর্ণপাত করেননি। তাই এখন তাঁর ঠিকানা হয়েছে লন্ডনের এক কয়েদখানা।
পৈতৃক সূত্রে পাওয়া ওই রকম প্রাসাদোপম বাড়ি থাকতেও তিনি ভিক্ষে করেন কেন! মনোবিদরা বলেছেন— না, তিনি শুধু যে অর্থের জন্যই ভিক্ষে করেন, তা নয়। তিনি মনে করেন, ভিক্ষে করাটা একটা আর্ট। এই নিখুঁত আর্টের জন্যই সত্যিকারের ভিখারিদের চেয়েও তিনি আয় করেন অনেক অনেক অনেক বেশি অর্থ। না, অর্থ নয়, এই আর্ট প্রদর্শন করাটাই তাঁর এখন একটা নেশা হয়ে দাঁড়িয়েছে।
এই বিষয়ে ওখানকার স্থানীয় কাউন্সিলর নিকি অ্যাইকেন জানিয়েছিলেন, আমরা মানুষকে অনুরোধ করব, রাস্তার ভিক্ষুক দেখলে তাঁরা যেন সরাসরি সেই ভিক্ষুককে কোনও অর্থ না দেন। যদি সত্যিই এই সব গরিব লোকগুলোকে কেউ কিছু দান করতে চান, তা হলে সেটা যেন কোনও গৃহহীন চ্যারিটি প্রতিষ্ঠানের হাতেই তুলে দেন। যাতে এই রকম বিলাসী নয়, সত্যিকারের ভিক্ষুকরাই উপকৃত হন।