নাটোর সদর উপজেলার খাদ্য গোডাউনে ৫৯১ বস্তা পচা ও নিম্নমানের চাল সরবরাহের ঘটনায় দোষীদের বিরুদ্ধে নিয়মিত মামলা করার জন্য আদালত পুলিশ কে নির্দেশ দেয়ার পর বুধবার ঘটনার সাথে জড়িত খাদ্য বিভাগের ৫জনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হয়েছে।
নাটোর থানার ওসি তদন্ত আব্দুল মতিন বাদি হয়ে মামলা দায়ের করে বিকেলে নাটোরের অতিরিক্ত চীফ জুডিসিয়াল আদালতের বিচারক এ এফ এম গোলজার রহমান এর আদালতে প্রতিবেদন দাখিল করেছেন।
মামলায় নাটোর সদর উপজেলা খাদ্য গোডাউনের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি এলএসডি) মফিজ উদ্দিন, চাল সরবরাহকারী নাটোর পৌরসভার ৭নং ওয়ার্ড আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক বেলালুজ্জামান বেলু, সহকারী উপ-খাদ্য পরিদর্শক (এএসআই) তরিকুল ইসলাম, খাদ্য গোডাউনের নিরাপত্তা কর্মী আবু তৈয়ব, গুরুদাসপুর উপজেলার চাঁচকৈড় বাজারের চাল ব্যবসায়ী মধু শা কে অভিযুক্ত করা হয়েছে।
এছাড়া মামলায় আরও ১০/১২জনকে অজ্ঞাত করে আসামী করা হয়েছে। এর আগে আদালত ২৫ আগষ্টের মধ্যে সদর থানায় দোষীদের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করে আদালতকে অবহিত করার জন্য সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে নির্দেশ দিয়েছিলেন।
জানা যায়, গত ১২ আগষ্ট নাটোর সদর উপজেলার ৬নং খাদ্য গোডাউনে নাটোর পৌরসভার ৭নং ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বেলালুজ্জামান বেলু তিনজন মিলারের নাম করে সিরাজগঞ্জের কামারখন্দ এলাকার একটি গোডাউন থেকে ট্রাকে করে ৫৯১বস্তা চাল নিয়ে খাদ্য গোডাউনে আসেন।
ট্রাকের দু’পাশে ভাল চাল থাকলেও ভিতরে বেশির ভাগ চাল ছিল পচা ও নিম্নমানের। পরে সাংবাদিক ও গোয়েন্দা সংস্থার তথ্যের ভিত্তিতে ওই গোডাউনে অভিযান চালায় নাটোর সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোছাঃ আফরোজা খাতুন। অভিযান শুরুর আগেই ৫৯১বস্তার মধ্যে ১৭৪বস্তা চাল গোডাউনে প্রবেশ করানো হয়।
আর বাকি ৪১৭বস্তা চাল সহ ট্রাক জব্দ করে উপজেলা নির্বাহী অফিসার। এই ঘটনায় নাটোর সদর থানায় একটি জিডি করেন সদর থানার ওসি তদন্ত আব্দুল মতিন। পরে জিডির কোন সুরাহ না হওয়ায় জিডির কপি, জব্দ তালিকা, জেলা প্রশাসক বরাবর উপজেলা নির্বাহী অফিসারের পাঠানো অবহিতকরণ পত্র এবং প্রকাশিত সংবাদের কপি দিয়ে আদালতকে অবহিত করেন ওসি তদন্ত আব্দুল মতিন।
আদালত সকল কাগজপত্র বিশ্লেষণ করে গত সোমবার বিকেলে নাটোর সদর থানায় দোষীদের বিরুদ্ধে নিয়মিত মামলা রুজু করে ২৫ আগষ্টের মধ্যে আদালতকে অবহিত করার জন্য সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে নির্দেশ দেন। নাটোর সদর থানার ওসি তদন্ত আব্দুল মতিন মামলা দায়ের ও আদালতে প্রতিবেদন দাখিলের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
তিনি জানান, ঘটনার সাথে প্রাথমিক ভাবে জড়িত ৫জনের নাম উল্লেখ করে মামলা করা হয়েছে। এছাড়া আরও ১০-১২জনকে অজ্ঞাত আসামী করা হয়েছে। পরবর্তীতে অধিকতর তদন্তে কেউ জড়িত থাকলে মামলায় তাদের সংযুক্ত করা হবে।
এর আগে পচা ও নিম্নমানের চাল প্রবেশ করানোর এই ঘটনায় ১২আগস্ট তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করে জেলা খাদ্য বিভাগ।কমিটি গোডাউনে প্রবেশ করানো ১৭৪বস্তার মধ্যে ৪৯ বস্তা চাল পচা ও নিম্নমানের পেলেও ঘটনার সাথে কারা জড়িত সে বিষয়ে উল্লেখ না করেই জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রকের কাছে তদন্ত রিপোর্ট জমা দেয়।
পরে জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক রবীন্দ্রলাল চাকমা রাজশাহী বিভাগী আঞ্চলিক অধিদপ্তরে তদন্ত রিপোর্টটি পাঠিয়ে দেন। ঘটনার ১৩দিন পেরিয়ে গেলেও খাদ্য বিভাগ দুই নিরাপত্তা কর্মী ও এক কর্মকর্তাকে বদলি ছাড়া কোন প্রদক্ষেপ নেয়নি।