লিওনেল মেসি পরবর্তী যুগের বার্সেলোনার লা লিগার ২০২১/২২ মৌসুমের শুরুটা হয় স্বপ্নের মতো। ঘরের মাঠে রিয়াল সোসিয়েদাদকে ৪-২ গোলের ব্যবধানে উড়িয়ে দেয় বার্সা। তবে উড়তে থাকা বার্সা হঠাৎ করে ভূপাতিত। বার্সেলোনাকে টেনে মাটিতে নামাল অ্যাথলেটিক ক্লাব বিলবাও। ঘরের মাঠে যদিও বার্সেলোনার বিপক্ষে লিড নিয়েও শেষ পর্যন্ত ১-১ গোলে ড্র করেই সন্তুষ্ট থাকতে হয়েছে বিলবাওকে।
এস্তাদিও সান মেমেসে বার্সেলোনার বিপক্ষে প্রথমে লিড নিয়েও শেষ পর্যন্ত ধরে রাখতে পারেনি অ্যাথলেটিক ক্লাব বিলবাও। মেমফিস ডিপাইয়ের দুর্দান্ত এক গোলে সমতায় ফেরে বার্সেলোনা। শেষদিকে এসে রোমাঞ্চ ছড়ানো ম্যাচে বার্সা ডিফেন্ডার এরিক গার্সিয়া লাল কার্ড দেখে মাঠ ছাড়ে। ম্যাচের অন্তিম মুহূর্তে বল নিয়ে বার্সার ডি-বক্সের দিকেই ঢুকছিলেন অ্যাথলেটিক ক্লাব বিলবাওয়ের নিকো উইলিয়ামস। তাকে রুখতেই পেছন থেকে ট্যাকেল করে দ্বিতীয় হলুদ কার্ড দেখে মাঠ ছাড়েন সদ্যই বার্সায় যোগ দেওয়া এই ডিফেন্ডার।
ইনিগো মার্টিনেজের গোলে ম্যাচের ৫০তম মিনিটে লিড নেয় বিলবাও। এরপর ৭৫তম মিনিটে মেমফিস ডিপাইয়ের বাঁ পায়ের দুর্দান্ত এক গোলে সমতায় ফেরে বার্সা। এরপর ফ্র্যাঙ্কি ডি ইংয়ের দুর্দান্ত এক চিপ শট গোলপোস্টে লেগে ফিরে আসলে লিড নেওয়া হয়নি বার্সার। শেষ পর্যন্ত ১-১ গোলের ড্র’তেই লা লিগার দ্বিতীয় ম্যাচেই পয়েন্ট ভাগাভাগি করে মাঠ ছাড়তে হয় বার্সাকে।
মাঠে চিরচেনা বার্সার খেলার ধরন সেই একই। বল দখলে রেখে প্রতিপক্ষকে যতটা সম্ভব কম বলের দখল দেওয়া। বিলবাওয়ের মাঠেও এর ব্যতিক্রম হয়নি। কিন্তু বল দখলে কম রাখলেও গোলের সুযোগ বেশি তৈরি করে বিলবাও। আর ঘরের মাঠে বেশ কঠিন পরীক্ষায় বিলবাও নিয়েছে কাতালান ক্লাবটির। তিন পয়েন্ট ছিনিয়ে নেওয়ার জোর চেষটা চালিয়েও শেষ পর্যন্ত এক পয়েন্ট নিয়ে মাঠ ছাড়তে হয়েছে বিলবাওকে। আর বার্সেলোনাও কোনো রকমে হারতে হারতে ড্র করেই ফিরেছে।
ম্যাচের ছয় মিনিটের মাথায় লিড নিতে পারত বার্সা। এসেছিল সুবর্ণ এক সুযোগ। তবে গেল ম্যাচের বার্সার নায়ক মার্টিন ব্র্যাথওয়েট করে সহজ সুযোগটি পাঠিয়ে দিলেন গোলপোস্টের উপর দিয়ে। ডান দিক দিয়ে ডি-বক্সে ঢুকে বাই লাইন থেকে পেছনে পাস দেন মেমফিস ডিপাই। ফাঁকায় দাঁড়ান ব্র্যাথওয়েটের কাজ ছিল কেবল বলে হালকা টোকা দিয়ে জালের দিকে ঠেলে দেওয়া। কিন্তু বাজে শটে বল পাঠিয়ে দিলেন গোল বারের উপর দিয়ে। আর তাতেই লিড নেওয়া হলো না বার্সার।
এরপরেই ম্যাচের চিত্র পাল্টে দিল বিলবাও। একের পর এক আক্রমণে বার্সার রক্ষণের পরীক্ষা নিতে থাকল ইনাকি উইলিয়ামস-ইনিগো মার্টিনেজরা। ম্যাচের ১২তম মিনিটে ওইহাও সানচেটের দারুণ এক শট ক্রসবারে লেগে ফিরে আসলে লিড নিতে পারেনি বিলবাও। মিনিট পাঁচেক পরে উইলিয়ামস আর সানচেটের চাপে দিশেহারা হয়ে পড়ে বার্সা গোলরক্ষক নেতো। আর চাপে পড়েই ভুল পাসে বল দিয়ে দেয় প্রতিপক্ষকে। সেখান থেকেই বল নিয়ে আক্রমণে যান উইলিয়ামস তবে তার শট দারুণভাবে ব্লক করেন ফ্র্যাঙ্কি ডি ইয়ং।
প্রথমার্ধের শেষ দিকে বল জালে জড়িয়েও গোল পায়নি বার্সা। গোলের আগে ডি-বক্সের ভেতর ব্র্যাথওয়েট বিলবাওয়ের এক খেলোয়াড়কে ফাউল করলে আরাহোর দুর্দান্ত এক গোল বাতিল করে দেয় রেফারি। ডি-বক্সের ভেতর বাই সাইকেল শটে বল জালে জড়িয়ে উজ্জাপন করার আগেই তাকে থামিয়ে দেন রেফারি।
বিরতি থেকে ফিরেই ম্যাচের ৪৬তম মিনিটেই বার্সাকে নিশ্চিত গোল হজমের হাত থেকে রক্ষা করেন গার্সিয়া। ইনাকি উইলিয়ামসের বাড়ানো লং বল ধরে দারুণ এক শট নেন বিলবাও মিডফিল্ডার বেরেনগুয়ের। গোলরক্ষক নেতোকে পরাস্ত করতে পারলেও গোললাইন থেকে বল ফিরিয়ে বার্সাকে ম্যাচে ধরে রাখেন গার্সিয়া।
তবে এর মিনিট চারেক পরে আর ইকার মুনিয়ানের অ্যাসিস্ট থেকে ইনিগো মার্টিনেজের দুর্দান্ত এক গোলে লিড নেয় বিলবাও। মধ্যমাঠ থেকে বল নিয়ে ডি-বক্সে ঢুকে পড়েন মার্টিনেজ। এরপরে কোণায় থাকা মুনিয়ানকে বল বাড়ান। ফিরতি বল পেয়ে তা দুর্দান্ত শটে জালে জড়ান মার্টিনেজ।
এরপর ম্যাচের ৭৩তম আলবার দারুণ এক পাস পেয়ে ডি-বক্সের কোণা থেকে লফটেড চিপে জালের দিকে বল ঠেলে দেন ডি ইয়ং। তবে তার দারুণ এই প্রচেষ্টা ব্যর্থ হয় ক্রসবারে লেগে। তবে দুই মিনিট পরেই জালের দেখা পেয়ে যায় বার্সেলোনা। রবের্তোর কাছ থেকে বল পেয়ে ডি-বক্সে ঢুকে বুলেট গতির শট নেন ডিপাই। গোলরক্ষক হাত ছোঁয়ালেও বলের জালে যাওয়া ঠেকাতে পারেননি। বার্সেলোনার হয়ে প্রতিযোগিতামূলক ফুটবলে ডাচ ফরোয়ার্ড মেমফিসের এটাই প্রথম গোল।
৮৬তম মিনিটে ডি ইয়ংয়ের পাস থেকে দারুণ সুযোগ পেয়েছিলেন ডিপাই। কিন্তু আড়াআড়ি শট একটুর জন্য লক্ষ্যে রাখতে পারেননি। যোগ করা সময়ে দলকে বাঁচাতে ডি-বক্সের ঠিক বাইরে নিকো উইলিয়ামসকে ফাউল করে লাল কার্ড দেখেন গার্সিয়া। ফ্রি কিক থেকে তেমন কিছু করতে পারেনি বিলবাও।