মানুষ কেমন জানতে ইচ্ছে করে, বুঝতে ইচ্ছে করে
একজন মানুষের ভাবনার জায়গা থেকেই সেই মানুষটিকে অনেকটাই চেনা সম্ভব। একজন মানুষের চিন্তা বা ভাবনাই মানুষটাকে আলাদা করে তার নিজস্বতা বোঝাতে, মানুষটাকে বুঝতে বা জানতে। মানুষের চিন্তা পদ্ধতিই কিন্তু বলে দিতে পারে সেই মানুষটি কেমন ও তার সামগ্রিক ভালো দিকগুলো। খেয়াল করে দেখবেন কিছু মানুষ শুধু নিজের কথাই বলেন, অন্যের কথা শুনতে আগ্রহী নয়। কেউ বা সবসময়ই অন্যের নিন্দা চর্চা করছেন। কেউ আবার কোনো কাজ করেন না, সারাদিন দেখবেন তারা অন্যের ত্রুটি খুঁজে চলেছেন। অনেক মানুষ আছেন যাঁরা ব্যর্থতাকে মেনে নিতে শেখেননি, একটুতেই ভেঙে পড়েন। অনেকে আবার সবসময়ই অন্যের সাথে বিষাক্ত প্রতিযোগিতায় সময় কাটাচ্ছেন। আর এক শ্রেণীর মানুষ আছেন যাঁরা গঠনমূলক সমালোচনা বা আলোচনা করেন। তাঁদের ভাবনা-চিন্তার জগৎটাও আলাদা। তাঁরা সবসময়ই ভাল কাজের উৎসাহ দিয়ে থাকেন, ভুল কিছু দেখলে নীরবে সংশোধন করে দেন। এভাবেই আমরা কিছুটা হলেও একজন মানুষকে চিনতে বা বুঝতে পারব। যিনি যতটা নিন্দে চর্চা করেন, মনে রাখতে হবে জীবনের ব্যর্থতা থেকে বা হতাশা থেকেই তিনি এসব করছেন। হিংসে বা রাগ ইত্যাদি কিন্তু হতাশার বহিঃপ্রকাশ।
একজন মানুষ যে অবস্থাতেই থাকুন না কেন পজিটিভ ভাবনা চিন্তাই কিন্তু তাঁকে যে কোনো পরিস্থিতিতে সবরকম ভাবে সুখী রাখতে, শান্তিতে রাখতে সাহায্য করবে। তিনি যদি সবসময়ই নেগেটিভ ভাবনাকে মনে স্থান দেন বা মনের মধ্যে সবসময়ই নেতিবাচক চিন্তা পোষণ করেন তাহলে সবসময়ই অস্বস্তি বোধ করবেন এবং একদিন তিনি নিজেরই অজান্তে নিজেকে নিজেই অসুস্থতার পথে ঠেলে দেবেন। শারীরিক এবং মানসিক স্বাস্থ্যের ওপর পজিটিভ চিন্তার বেশ প্রভাব আছে। আমরা জিতব নাকি হারব তার পিছনে যেমন পজিটিভ বা নেগেটিভ দৃষ্টিভঙ্গির প্রভাব আছে, তেমনি শারীরিক সুস্থতার ওপরও পজিটিভ বা নেগেটিভ চিন্তার প্রভাব কিন্তু ভীষণরকম আছে। এজন্যই ভালো জীবনযাপন করার জন্য এবং সুস্থভাবে বেঁচে থাকার জন্য সবসময়ই ভাল চিন্তা, পজিটিভ চিন্তার চর্চা করা উচিৎ।
একজন সুন্দর মনের মানুষের মেজাজটাই তো আসল। আমাদের ভাবনার জায়গাটা সুন্দর হলে, আমাদের পাশের মানুষের ভাবনার জায়গাটাও তো সুন্দর হবে। আরো কিছু সুন্দর মনের মানুষ এই পৃথিবীকে উপহার দিতে পারি তাই না? সত্যিই এতে ভাল থাকা যায়। মন নেগেটিভ হলে, সারাক্ষণ অন্যের ভুল-ত্রুটি খুঁজতে থাকলে নিজেকে কেমন নোংরা – ময়লা মনে হয় না? মনে হয় না নিজেকে ঐ দূরে পড়ে থাকা ডাস্টবিনটার মতো, যেখানে শুধুই নোংরা জমে আছে? দেখবেন যেই আপনি ভাল চিন্তা করছেন আপনার মনটাও কেমন ভাল হয়ে যাবে, মেজাজটাও কেমন পালটে যাবে এবং অন্যান্য চিন্তার পদ্ধতিকেও উন্নত করবে, যেগুলি সুখ ও ভালো সম্পর্ককে প্রভাবিত করে। এভাবে ভাবতে থাকলে আমাদের মন সবসময় ঠিকঠাক অবস্থায় থাকবে, মনটা অনেক হালকা লাগবে যা মানসিক সমস্যার ঝুঁকিও কমাবে। অনেক সময়ই অনেক গুরুত্বপূর্ণ কাজ কিংবা যে কোনো সম্পর্ককেও আমরা আমাদের খারাপ মেজাজের জন্য নষ্ট করে ফেলি। যারা আশাবাদী তারা এই সব মানুষদের থেকে বেশি বাঁচেন যারা প্রতি মুহূর্তে নেগেটিভ চিন্তা করেন। যারা ভাল চিন্তা করেন তাদের শরীরও ভাল থাকবে, মনও ভালো থাকবে এবং তাদের জীবনও সুন্দর হবে। ভাল চিন্তা ব্রেনকেও শক্তিশালী করে, ব্রেনকে কম যান্ত্রিক করে, তাহলে তো হৃদয় যান্ত্রিক হবার আর প্রশ্নই থাকে না।
আমাদের জীবনে অনেক কষ্ট আছে, অনেক যন্ত্রণা আছে, তবুও ভাল ভাবনা বা পজিটিভ চিন্তা আমাদের কষ্ট সামলানোর ভাল পথ দেখাবে। কারণ, যখন আমাদের দেহ একটা সময় বলবে আপনার পক্ষে এটা করা আর সম্ভব নয়, ঠিক সেই সময় আমার, আপনার, আমাদের সকলের ঝকঝকে মনটা বলবে ‘আমি পারব পারব পারব; আমাকে পারতেই হবে; আমাকে বাঁচতেই হবে…।’
(চলবে)