‘মহাশূন্যে জুরান’ পর্ব – আঠারো

সিদ্ধার্থ সিংহ
সিদ্ধার্থ সিংহ
13 মিনিটে পড়ুন

তিতার অবাক হয়ে গেলেন। এ কী রে বাবা! এ কী ম্যাজিক জানে, না কি! ছিল মৎস্যকন্যা। হয়ে গেল ধোঁয়া। এখন আবার মশারির থলে হয়ে তার মধ্যে তাঁকে পুরে হু হু করে উপরে উঠছে তো উঠছেই। সেই থেকে ঠায় এক ভাবে বসে যেতে যেতে তিনি একেবারে হাঁপিয়ে উঠেছেন। একটু উঠে দাঁড়িয়ে যে আড়মোড়া ভেঙে নেবেন তারও উপায় নেই। অথচ এ! কোথাও দু’দণ্ড দাঁড়িয়ে এতটুকু বিশ্রাম পর্যন্ত নেয়নি। কী দম রে বাবা! তার কীর্তিকলাপ দেখে এ বার কেমন যেন একটু সন্দেহ-সন্দেহ ঠেকছে তাঁর। এর কথা শুনে এই ভাবে বেরিয়ে পড়া তাঁর বোধহয় ঠিক হয়নি! সে তাঁকে তাঁর ছেলের কাছেই নিয়ে যাচ্ছে তো! কিন্তু কোথায় নিয়ে যাচ্ছে তাঁকে! তিনি তো ভেবেছিলেন তাঁকে বুঝি অন্য কোনও রাজ্য কিংবা তাঁর দেশের লাগোয়া আশপাশের কাছাকাছি কোনও দেশে নিয়ে যাবে। কিন্তু দেশ-টেশ নয়, তাঁকে তো মনে হচ্ছে পৃথিবীর বাইরে অন্য কোথাও নিয়ে যাচ্ছে।
উপরে তাকাতেই মশারির ভেতর থেকে তিনি দেখতে পেলেন, পৃথিবীটা ছোট হতে হতে একেবারে একটা বিন্দু হয়ে তাঁর চোখের সামনেই হুস করে কেমন যেন মিলিয়ে গেল। মৃত্যুর পর মানুষ যখন পৃথিবী ছেড়ে চলে যায়, শুধু দেহটা পড়ে থাকে নীচে, সে কি যেতে যেতে দূর থেকে এ ভাবেই পৃথিবীটাকে মিলিয়ে যেতে দেখে! তার মানে! তবে কি তিনিও এখন পৃথিবীর মায়া কাটিয়ে চিরদিনের জন্য চলে যাচ্ছেন! তাঁর কি মৃত্যু হয়েছে!
তিতার যতই এ সব ভাবতে লাগলেন, ততই তাঁর হাত-পা ঠান্ডা হয়ে যেতে লাগল।
না। এই মহাশূন্যের শীতল বায়ুমণ্ডল ভেদ করে তাঁকে নিয়ে যাচ্ছে বলে নয়। কারণ, যত শীতলই হোক না কেন, জালের মতো যতই ছোট ছোট ছিদ্র থাকুক না কেন, এই মশারি ভেদ করে তাঁকে কোনও বায়ুই স্পর্শ করছে না। এবং এটা যত জোরেই উপরে উঠুক না কেন, তিনি কিন্তু কিছুই বুঝতে পারছেন না। মনে হচ্ছে, তিনি স্থির হয়েই বসে আছেন। যেমন কোনও পিঁপড়েকে কড়াইয়ের মধ্যে রেখে কড়াইটা যত জোরেই বনবন করে ঘুরিয়ে দেওয়া হোক না কেন, সে বুঝতেই পারে না ওটা ঘুরছে। যদি বুঝতে পারত, তা হলে নিশ্চয়ই ওই ভাবে নিশ্চিন্তে এক দিক থেকে আরেক দিকে দিব্যি তর তর করে হেঁটে যেতে পারত না। ভয়ে সিঁটিয়ে থাকত।
মানুষের বেলাতেও এই একই জিনিস ঘটে। উড়োজাহাজ যত জোরেই ছুটে যাক না কেন, ভিতরে থাকলে বোঝার কোনও উপায় নেই, ওটা চলছে। এমনকী, সামনের সিটের পেছন দিকের ট্রে খুলে তার উপরে জলের গ্লাস রাখলেও সে জল এতটুকুও উছলে ওঠে না। বরং এতটাই স্থির থাকে, মনে হয় উড়োজাহাজে নয়, যেন বাড়িতেই আছি।
তিতারেরও হয়তো সেটাই মনে হত। যদি তাঁর চোখ বাঁধা থাকত। কিংবা চার দিকটা ঘেরা থাকত নিরেট কোনও কিছু দিয়ে। কিন্তু তাঁর ক্ষেত্রে সেটা হয়নি। এই মৎস্যকন্যাটা এক অদ্ভুত মন্ত্রবলে তাঁকে ধোঁয়া বানিয়ে, সে নিজেও ধোঁয়া হয়ে তাঁর সঙ্গে আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে, একেবারে মিলেমিশে একাকার হয়ে জানালা থেকে হুস করে সেই যে বেরিয়েছে, ছুটছে তো ছুটছেই, ছুটছে তো ছুটছেই। থামার কোনও লক্ষ্মণ নেই।
মৎস্যকন্যা মুখে বললেও, সেটা কি শুধুই কথার কথা, নাকি ছেলেকে সত্যিই পাওয়া যাবে, এই নিয়ে ভাবার তখন কোনও অবকাশ ছিল না। তিনি তখন ছেলের জন্য এতটাই উদ্বিগ্ন হয়ে উঠেছিলেন যে, অতশত না-ভেবে তার সঙ্গে ওই ভাবে পাড়ি দেওয়া ছাড়া তাঁর আর কোনও উপায় ছিল না। তাই বেরিয়ে পড়ার পরেও বেশ কয়েক মুহূর্ত তিনি কিছুই বুঝতে পারেননি। যখন খেয়াল হল, সত্যি কথা বলতে কী, একদম চমকে উঠেছিলেন। মনে হয়েছিল, চারিদিকে রং-বেরঙের কোটি কোটি মারবেল ভেসে রয়েছে। গোদা বাংলায় যাকে বলে গুলি। কাচের ছোট ছোট গোলাকার টুকরো। তার কোনওটা বনবন করে ঘুরছে। কোনওটা নট নড়নচড়ন। কোনওটা আবার অন্য কোনওটাকে ঘিরে একনাগাড়ে চক্কর মেরে যাচ্ছে। কোনও কোনওটার গা থেকে ছিটকে-ছিটকে বেরোচ্ছে তীক্ষ্ণ আলোর বিচ্ছুরণ। কোনওটার গা থেকে আবার বেরিয়ে আসছে নরম এক মায়াবী আলো।
তিতাররা ছোটবেলায় বন্ধুরা মিলে গুলি খেলতেন। এগুলির বেশির ভাগই সেই গুলির মতোই ছোট ছোট। ভাল করে দেখতে গিয়ে বুঝেছেন, সেগুলির কোনও কোনওটা বিভিন্ন মাপের এবং নানান আকারের। কোনওটা শিবলিঙ্গের মতো একটু বড়। কোনও কোনওটা বেশ বড়সড় ফুটবলের মতো। আবার কোনও কোনওটা তারও চেয়ে বড়।
কোন্‌টা ছোট কোন্‌টা বড়, সে সব দেখার মতো মানসিক অবস্থা তখন তাঁর একদমই ছিল না। তিনি শুধু ঠকঠক করে কাঁপছিলেন। আর ঠাকুরের নাম জপ করছিলেন। কারণ, তিতার জানেন, সামান্য একটা পাখির সঙ্গে ধাক্কা লাগলেও আকাশে উড়তে থাকা ইস্পাতের মোটা চাদরে তৈরি বিমানও কেমন লাট খেতে খেতে মাটিতে গোত্তা মেরে পড়ে এবং চোখের নিমেষেই কেমন ধ্বংস হয়ে যায়। কারণ, ছোট বা বড়র জন্য নয়, ওই দুঘর্টনা ঘটে শুধুমাত্র গতির জন্য। গতিই যত নষ্টের গোড়া।
মানুষের চলার গতি যদি প্রস্তর যুগেই থেমে যেত, তা হলে প্রথম বা দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ হলেও, ওই ইট-পাথর, তির-ধনুকের যুদ্ধে আর যাই হোক, অনন্তকাল ধরে চললেও নিশ্চয়ই এত প্রাণহানি হত না। এত ক্ষয়ক্ষতিও হত না। বারুদের দূষণে বাতাসও এত কলুষিত হত না।
মানুষের লোভের গতিও যদি আরও একটু কম হত, তা হলে পৃথিবীটা বোধহয় আরও একটু সুন্দর হত। মানুষেরা আরও একটু ভাল ভাবে ওই পৃথিবীতেই বসবাস করতে পারত। আসলে গতি যত বাড়বে, ততই সমস্যা তৈরি হবে।
তিরতির করে চোখ খুলতেই হঠাৎ ভয়ানক এক আতঙ্কে শিউরে উঠলেন তিতার। দেখলেন, চার দিকে কুচকুচে ঘন অন্ধকার। দম বন্ধ হয়ে আসছে। বুক ভরে একবার নিশ্বাস নেওয়ার জন্য ছটফট করতে লাগলেন তিনি। যখন আর পারছেন না, ঠিক তখনই সেই অন্ধকার সরে গিয়ে চোখের সামনে ফুটে উঠল একটা নিলাভ আলো । মনে হল, এতক্ষণ যেন তিনি কোনও সুড়ঙ্গের মধ্যে ছিলেন। জোরে নিশ্বাস নিতেই তাঁর মুখ থেকে অস্ফুটে বেরিয়ে এল, তা হলে কি এগুলো ব্ল্যাক হোল! যে সব গ্রহ নষ্ট হয়ে শুকিয়ে একেবারে এত্তটুকু হয়ে যায়, তাকেই তো পৃথিবীর বিজ্ঞানীরা ব্ল্যাক হোল বলেন, না কি! নিজের মনেই বিড়বিড় করলেন তিতার, যাক বাবা, এ বারকার মতো অন্তত প্রাণে বেঁচে গেছি। আর একটু ওই ভাবে থাকতে হলেই, হয়েছিল আর কী! কিন্তু ওটা যদি ব্ল্যাক হোলই হয়, যত ছোটই হোক, তা হলে মাত্র কয়েক সেকেন্ডে ওটা পার হয়ে এলাম কী করে!
আমরা কি খুব জোরে যাচ্ছি! কত জোরে! প্লেনের মতো জোরে! নাকি পৃথিবী থেকে ছাড়া সব চেয়ে গতিশীল কোনও মহাকাশযানের মতো! নাকি তারও চেয়ে স্পিডে!
ছেলেবেলায় তিতারদের একটা খুব মজার খেলা ছিল। তাঁদের দলে নতুন কোনও বন্ধু কিংবা কারও দূর সম্পর্কের কোনও আত্মীয় এলেই তাকে তাঁরা নানা রকম ধাঁধা জিজ্ঞেস করতেন। তার মধ্যে খুব প্রচলিত একটি ধাঁধা ছিল— বল তো, সব চেয়ে জোরে কী যায়?
যারা জানত না, তাদের কেউ বলত— প্লেন, কেউ বলত রকেট।
তখন সবাই হো হো করে হেসে তার উত্তরটাকে এক ফুৎকারে উড়িয়ে দিয়ে বলতেন, ধুর বোকা, এটাও জানিস না? সব চেয়ে জোরে যায় মন। তুই এখন এখানে আছিস। কিন্তু তুই যদি এক্ষুনি মনে মনে হিমালয় পর্বতের চূড়ায় আছড়ে পড়া সূর্যের কিরণের কথা ভাবিস, তার মানে তো তুই মনে মনে এক মুহূর্তেই ওখানে পৌঁছে গেলি, না কি, বল? এর চেয়ে আগে কে যেতে পারে?
এ সব ছিল তিতারের ছোটবেলার কাহিনি। পৃথিবীর ঘটনা। কিন্তু এই মৎস্যকন্যাটা যখন তাঁকে পৃথিবী থেকে তুলে নিয়ে তাঁর ছেলের কাছে নিয়ে যাচ্ছে, তখন পৃথিবীর বাইরের এই জগতের বেশ কিছু জিনিস তো পৃথিবীর থেকে একটু আলাদা হতেই পারে।
হতেই পারে, তিনি এখন মশারির থলেতে বসে হয়তো ‘মন’-এর মতোই কিংবা তার চেয়েও জোরে ছুটে চলেছেন। হতেই পারে। এ যা ভেলকি জানে, কিছুই অসম্ভব নয়।
পৃথিবী ছাড়ার পর প্রথম যখন তাঁর নজরে পড়েছিল, চার দিকে শুধু মারবেল আর মারবেল। তখন তাঁর মনে হয়েছিল, এর একটার সঙ্গে যদি তাঁর মুখোমুখি ধাক্কা লাগে, শুধু ধাক্কা কেন, যদি সামান্যতম একটু ঘষাও লাগে, তা হলেই হল। আর দেখতে হবে না। ‘এই লাগল! এই লাগল!’ ভেবে কত বার যে তিনি চোখ বন্ধ করে আর্তনাদ করে উঠেছেন, আঁতকে উঠেছেন, শরীরের রক্ত হিম হয়ে গেছে, তিনি খেয়ালই করেননি।
কিন্তু না। মশারির থলের আকার নেওয়া মৎস্যকন্যাটা কী ভাবে যেন গিজগিজ করতে থাকা কোটি-কোটি মারবেলের ফাঁকফোকর দিয়ে বেরিয়ে, এঁকেবেঁকে, নির্ঘাৎ মৃত্যুদূতকে পাশ কাটিয়ে, নিজেকে তো বটেই, তাঁকেও আগলে নিয়ে চলেছে তীক্ষ্ণ বেগে।
শুরুর দিকে যেগুলিকে তাঁর খেলার ছোট ছোট এক-একটা মারবেল মনে হয়েছিল, তার পাশ দিয়ে যাওয়ার সময় তিনি বুঝতে পেরেছিলেন, ওগুলি আসলে মোটেই ছোট নয়। বিশাল, বিশাল এক-একটা গ্রহ। কোনও কোনওটা তো পৃথিবীর চেয়েও বড়। আর সেটা বুঝতে পেরেই তিনি চমকে উঠেছিলেন। এখানে এত গ্রহ রয়েছে!
যদি এই মৎস্যকন্যাদের সঙ্গে চুক্তি করে যাতায়াতের দায়িত্বটা তাদের উপরে দিয়ে দেওয়া যায়, তা হলে তো এই সব জায়গাতেও বসতি গড়া যায়। তখন আর ক’বিঘত জমির জন্য পাশের বাড়ির সঙ্গে নিশ্চয়ই আর কারও মনোমালিন্য হবে না। মামলা-মোকদ্দমাও হবে না।
এগুলো গ্রহই তো! নাকি, তাঁরা যেমন ছেলেবেলায় খেলার পর অনেক সময় ঘরের মধ্যে মারবেলগুলি ছড়িয়ে-ছিটিয়ে ফেলে রাখতেন, তেমনি অদৃশ্যে থাকা অতিশয় বুদ্ধিমান প্রকাণ্ড কোনও প্রাণী হয়তো এগুলি দিয়ে তাদের মতোই গুলি খেলে এবং খেলার পরে তাদের মতোই বালকসুলভ স্বভাবে এই মহাশূন্য নামক তাদের ঘরের মেঝেতে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে ফেলে রাখে। যে ভাবে এখন রেখেছে।
হতে পারে। হতেই পারে। এটা ভাবতে গিয়েই তাঁর মাথা ঝিমঝিম করতে লাগল। এগুলি দিয়ে যারা খেলে, তারা তা হলে কত বড়! কত বড়! অত বড় বড় প্রাণী থাকে কোথায়! তারা কি ইচ্ছেধারী! ইচ্ছে করলেই কোনও এক মায়াবলে এইটুকুনি হয়ে যেতে পারে! নাকি তারা বায়বীয়! তাদের চোখে দেখা যায় না। ধরা-ছোঁয়াও যায় না।
এরা কি কখনও আমাদের পৃথিবীতে গিয়েছিল! আমাদের কোনও পূর্বপুরুষ কি এদের দেখেছিল! এদের কি কারও চারটে মাথা! কারও দশটা হাত! কারও গলায় ঝোলে মানুষের মুণ্ডু দিয়ে গাঁথা মালা!
এদেরই কারও হাতে কি ত্রিশূল থাকে! কারও হাতে বীণা! এদেরই কারও পায়ে পায়ে কি ঘুরে বেড়ায় ইঁদুর, ময়ূর কিংবা ষাড়! পৃথিবীতে গিয়ে এরাই কি এগুলোর বাচ্চাকাচ্চা রেখে এসেছিল! শুধু পৃথিবী কেন, যে সব গ্রহে এরা গিয়েছিল, এরা যে কখনও ও সব জায়গায় গিয়েছিল, তার চিহ্ন স্বরূপ এরা হয়তো প্রতিটি গ্রহেই এই সব প্রাণী রেখে এসেছিল! এদের দেখেই হয়তো সে যুগের মানুষেরা পাহাড়ের গায়ে এদের ছবি এঁকে রেখেছিল! পরে মুখে মুখে ছড়িয়েছে এদের কথা। লেখা হয়েছে নতুন নতুন গল্পগাছা। এদের রেখে যাওয়া জিব-জন্তুদের বলা হয়েছে এদের বাহন। এরাই দিয়ে গেছে সুর। শত্রুর হাত থেকে বাঁচার জন্য এরাই দিয়ে গেছে অস্ত্র। এই বড় বড় প্রাণীদেরই কি আমরা সর্বশক্তিমান বলি? এখনও এদেরই মূর্তি গড়ি! ভগবান বলি? ভয়েই হোক আর ভক্তিতেই হোক, আমরা এদেরই পুজো করি! এরাই কি তারা, যাদের আমরা ভিন্‌গ্রহবাসী বলি! কে জানে!
ঈশ্বর বলে আদতে কিছু থাকুক বা না-থাকুক, এখনও আকাশ বিদীর্ণ করে বজ্রবিদ্যুৎ-সহ মুষলধারে বৃষ্টি নামলে আমরা যেমন বরুণ দেবকে শান্ত হয়ে বসার জন্য উঠোনে পিঁড়ি পেতে দিই। কিংবা কাউকে সাপে কাটলে তাকে বাঁচিয়ে দেওয়ার জন্য মা-মনসার কাছে মানত করি। অথবা যে কোনও বিপদে গৃহদেবতার নাম জপি, ঠিক তেমনি, আকাশে উড়তে থাকা পাখির জন্য কোনও মানুষ যখন ছোট্ট কোনও পাত্র করে ছাদের উপরে টুবুটুবু জল দিয়ে রাখে, কিংবা রাস্তার ধারে মায়ের জন্য কুঁইকুঁই করতে থাকা কোনও বিড়ালছানাকে আদর করে কোলে তুলে নেয়, অথবা জাল ফেলে তুলেও আকারে একদম ছোট দেখে ফের কোনও মাছকে পুকুরে ছেড়ে দেয়, তখন সেই সব ছোট, অতিছোট প্রাণীও বুঝি তাদের মেরে ফেলার ক্ষমতা থাকা সত্ত্বেও, তাদের বাঁচিয়ে রাখার জন্য মানুষকেও ঠিক এই একই ভাবে ভগবান ভাবতে শুরু করে। ঈশ্বর বানিয়ে ছাড়ে।
আসলে যার ক্ষমতা আছে বা যার কাছে উপকার পাওয়া যায় অথবা উপকার পাওয়ার সামান্যতম কোনও সম্ভাবনা থাকে, কিংবা যার সামান্য অঙ্গুলি হেলনে আমূল ক্ষতি হতে পারে, সবাই তার কাছেই মাথা নত করে। তাকে মাথায় করে রাখে।
আচ্ছা, তা-ই যদি হয়, তা হলে তো এই মৎস্যকন্যা, যে তাঁকে তাঁর হারিয়ে যাওয়া ছেলের কাছে নিয়ে যাচ্ছে, তার কাছেও তো তাঁর মাথা নত করা উচিত। তাকে মাথায় করে রাখা উচিত। তাই নয় কী? আরে! এ কী! এ কী! এ কী! আমি পড়ে যাচ্ছি কেন! মশারিটা কি নীচ থেকে ছিঁড়ে গেল নাকি! কী হল! কী হল!! কী হল!!!

চলবে…

গুগল নিউজে সাময়িকীকে অনুসরণ করুন 👉 গুগল নিউজ গুগল নিউজ

এই নিবন্ধটি শেয়ার করুন
২০২০ সালে 'সাহিত্য সম্রাট' উপাধিতে সম্মানিত এবং ২০১২ সালে 'বঙ্গ শিরোমণি' সম্মানে ভূষিত সিদ্ধার্থ সিংহের জন্ম কলকাতায়। আনন্দবাজার পত্রিকার পশ্চিমবঙ্গ শিশু সাহিত্য সংসদ পুরস্কার, স্বর্ণকলম পুরস্কার, সময়ের শব্দ আন্তরিক কলম, শান্তিরত্ন পুরস্কার, কবি সুধীন্দ্রনাথ দত্ত পুরস্কার, কাঞ্চন সাহিত্য পুরস্কার, দক্ষিণ চব্বিশ পরগনা লোক সাহিত্য পুরস্কার, প্রসাদ পুরস্কার, সামসুল হক পুরস্কার, সুচিত্রা ভট্টাচার্য স্মৃতি সাহিত্য পুরস্কার, অণু সাহিত্য পুরস্কার, কাস্তেকবি দিনেশ দাস স্মৃতি পুরস্কার, শিলালিপি সাহিত্য পুরস্কার, চেখ সাহিত্য পুরস্কার, মায়া সেন স্মৃতি সাহিত্য পুরস্কার ছাড়াও ছোট-বড় অজস্র পুরস্কার ও সম্মাননা। পেয়েছেন ১৪০৬ সালের 'শ্রেষ্ঠ কবি' এবং ১৪১৮ সালের 'শ্রেষ্ঠ গল্পকার'-এর শিরোপা সহ অসংখ্য পুরস্কার। এছাড়াও আনন্দ পাবলিশার্স থেকে প্রকাশিত তাঁর 'পঞ্চাশটি গল্প' গ্রন্থটির জন্য তাঁর নাম সম্প্রতি 'সৃজনী ভারত সাহিত্য পুরস্কার' প্রাপক হিসেবে ঘোষিত হয়েছে।
একটি মন্তব্য করুন

প্রবেশ করুন

পাসওয়ার্ড ভুলে গেছেন?

পাসওয়ার্ড ভুলে গেছেন?

আপনার অ্যাকাউন্টের ইমেইল বা ইউজারনেম লিখুন, আমরা আপনাকে পাসওয়ার্ড পুনরায় সেট করার জন্য একটি লিঙ্ক পাঠাব।

আপনার পাসওয়ার্ড পুনরায় সেট করার লিঙ্কটি অবৈধ বা মেয়াদোত্তীর্ণ বলে মনে হচ্ছে।

প্রবেশ করুন

Privacy Policy

Add to Collection

No Collections

Here you'll find all collections you've created before.

লেখা কপি করার অনুমতি নাই, লিংক শেয়ার করুন ইচ্ছে মতো!