সূর্যাস্ত
অস্তমিত সূর্য দিগন্তের উপর দিয়ে ডুবে যায়
লাল, হলুদ, কমলা, নীল এবং ধূসর রঙের
লম্বা আভার অগণিত আবছা মোহনীয় ছায়া
টুকরো মেঘে প্রতিফলিত হয়ে হাজার হাজার
রঙের মিছিল আলতো ছোঁয়ায় বেদনার রঙে
আশ্চর্য মায়াবী নকশার আঁকিবুঁকি কাটে,
বিষাদের রঙগুলি কুচি কুচি হয়ে লেগে থাকে
বাতাসের মুখের পরে, এক অধিভৌতিক দৃশ্যের
আয়োজনে বহুমাত্রিক ক্যানভাসে আঁকা এক
বর্ণময় ছবি, যেন ভ্যান গগের আঁকা নিখুঁত
জলরঙ চিত্রও তার কাছে ফ্যাকাশে মলিন,
কেন না সৃষ্টি কর্তা হলেন সর্বশ্রেষ্ঠ শিল্পি।
যেন জীবনের যুগপৎ সুখ এবং দুঃখের
ছিন্নস্মৃতির রক্তিম বাসনা
হেঁটে যাচ্ছে গোধুলির দিকে, দীর্ঘ ছায়া নিয়ে
পূর্ব থেকে পশ্চিমে তার আহ্নিক পথে জমে।
একদা মহিমান্বিত এই আলোর পাতিত চিহ্নগুলি
নেমে আসা রাতের অন্ধকারে গ্রাস করে।
এই পুরোনো সূর্যের মতো আমিও
আমার দিনটি কাটিয়েছি
এগিয়ে এসেছে শেষ গন্তব্যের যাত্রা
আমার মুখের ওপর দেখছি শেষ রশ্মির ছটা
আমার স্বল্পপ্রজ স্বপ্নমায়া জীবনে নিজের
কান্না হাসির স্মৃতিগুলি শীঘ্রই ম্লান হয়ে যাবে,
ওদের নিশ্চুপ করে দেবে
অমীমাংসিত রহস্যের গাড় অন্ধকারের
অতলে হারিয়ে যাবে।
ঘানিচক্র
ভোর হতে আরও কিছু বাকি।
পা দুখানি প্যাডেলের ওপরে তুলি
খালেক মিয়া বের হলো
নগর নামের অতিকায় এক
মহাজাগতিক অজগরের পেটে
দাঁড়াল এসে গলির গেটে
এক কাপ চা খায় দোকানের বেঞ্চে বসি
আচমকা পিছন থেকে ডাক ‘এই খালি’
আধ-খাওয়া চায়ের কাপ ফেল্রে
ঝাপ দিয়ে বসে পড়ে জীবনযুদ্ধে,
বেচে থাকার দুঃসহ ঘানিচক্রে।
সাপের জিহবার মতো লিকলিকে
সূর্যস্নাত তামাটে হাত রিকশার হ্যান্ডেলে
আধপোড়া চেলাকাঠের মতো দুটো পায়ের ভরে
কী করে টেনে নিয়ে যান ভারি ভারি যাত্রীরে!
কনকনে শিতে, ‘বেশ শীত লাগে, একটু আস্তে চালাও তো,’
ঝুম বৃষ্টিতে, “ধুর মিয়া! পর্দা রাখবা না’।
খা খা রোদে, ‘উফ! কি রোদরে বাবা! তুলে দাও তো হুড টা’
গ্রিস্মের দাবাদহ মাথায়, অবিরাম চলতে থাকে দুচাকা
তৃষ্ণায় ফেটে যায় বুকেরর ছাতিটা
‘ওই ব্যাডা কি চালাছ, টান, পিছের টা ওভারটেক করে ক্যান?”
বেড়ে যায় ঝড়ের বেগে রিকশার গতি
শিরায় শিরায় কেঁপে ওঠে রক্তের কাঁপুনি
ঘোড়ার কেশরের মতো ফুলে ওঠে
ঘাড়ের লোমগুলি দমকা বাতাসে।
হাতের শিরাগুলি শ্বাস প্রশাসের সাথে
লাফায় ব্যাঙের মতো তরাক তরাক করে।
বোশেখের দাবা দাহে, বুকের রক্ত ঢেলে
সূর্যের দিকে পিঠ করে, হাওয়ার বিপরীতে
সর্বশক্তি দিয়ে ঘাম লেপা শরীরটাকে ক্রিং ক্রিং শব্দে
টানতে টানতে গন্তব্যে ফিরে ভেজা লোনাজলে।
আধ-ময়লা গামছাটা চিলের ডানার মতো
ওড়ে আকাশে, দীর্ঘ থেকে দীর্ঘতর হয়,
চোখের শিরাগুলো হয়ে ওঠে রক্তলাল,
জয়ের নেশা, মুষ্টিবদ্ধ হাত শক্ত চোয়াল।
নখগুলো ধারালো, আঙুলগুলো সব থাবা,
সেখানে ধক ধক করে জ্বলন্ত লাভা,
ধমনীর মধ্যে ছুটছে মদ উষ্ণস্রোতা
সকাল থেকে রাতে নদীর মোহনায় সৃষ্ট স্রোতের মতো ঘোরে।
পরিবর্তনহীন জীবনের চাকা সেই একঘেয়ে
জীবনের একই ধুসর বৃত্তচক্রে
ভালোবাসায় নতজানু ব্যথায় মোড়ানো শরীর নুয়ে পড়ে,
স্ত্রী কন্যার মমতার ঋণের ভারে।
ফুরফুরে বাতাসে উতফুল্ল আরোহী
খালেক মিয়া যুগপত রথ ও রথী
রৌদ্রঝলসিত চোখে তার খ্যাপ শেষ করার হাসি।
তলাবিহীন ঝুড়ি
হেনরি কিসিঞ্জার, দেখ তোমার অমুলক আশঙ্কাকে সমাহিত
করে তোমার তথাকথিত ‘তলাবিহীন ঝুড়ি’ থেকে রত্নজল
উপচে পড়ছে আজ সিঙ্ঘল সমুদ্রে, প্লাবিত এবং উর্বর করছে
তার তিরবর্তী বিস্তীর্ণ পলিমাটি,
আর তুমি ক্রমশ ডুবে যাচ্ছ ইতিহাসের নদীর পেটের তলানিতে,
যেভাবে, আইউব খান, ইহাইয়া খান, জুলফিকার আলি ভুট্টো
বাংলার স্বাধীনতার অভিযানের দ্বারা ক্ষয়িষ্ণু হয়েছিল।
কারণ তুমি সদ্যজাত দেশের ঝুড়ির ভেতরে
সাময়িকভাবে চাপা পড়ে থাকা বিশ্ব বিপ্লবের
ভ্রুণের সম্ভাবনাকে বুঝতে ব্যর্থ হয়েছিলে।
উচু নাকের আড়ালে ঢাকা পড়া তোমার চোখ
সদ্য যুদ্ধ ফেরত গামছা পরা মুক্তিযোদ্ধার
চোখের মধ্যে সূর্য, হাসির মধ্যে চাঁদ দেখতে পায়নি।
কাকে পেছনে ফেলেছি, কাকে পেছনে ফেলবো
এসব না ভেবে সে সকলকে নিয়ে এগিয়ে যাবে।
দুর্ভিক্ষ, ভাতের ফেন, লঙ্গরখানা, মঙ্গা, সাম্প্রদায়িকতাকে
ইতিহাসের ডাস্টবিনে ফেলে দিয়ে,
আই এম এফ এর সমস্ত সূচকে এগিয়ে,
কুসংস্কার, লুটপাট, দুর্নীতি পেরিয়ে
ক্রিকেটের ব্যাট হাতে জাতিসংঘে শান্তির পতাকা উড়িয়ে
উদারতা ও প্রাচুর্যের বিস্তীর্ণ জমিনে
দৃপ্ত পায়ে এগিয়ে যাবে সুন্দর বনের সবুজ গোল পাতা
গাছের নিচে বিচরণকারি রাজকীয় বাঘেরা।
মা
রেশমের মতো নরম হাত ধরে
শেখা প্রথম আঁকা, প্রথম হাঁটা,
ফাটিয়ে গলা নামতা শেখা ভোরবেলাতে।
হ্যারিকেন জ্বালিয়ে রাতের পড়া,
একটু দূরে অন্ধকারে মায়ের পাহারা।
ভাত রেঁধে তেল চপচপে মাথায় স্কুলে,
বাড়ি থেকে স্কুল দূরে, মার কথা মনে পড়ে
মনে পড়ে না মার মুখাবয়ব, মুখাকৃতি,
শ্রেণীকক্ষে বসে আঁকি তার মুখচ্ছবি
কিছুটা মুখ, কিছুটা আভাস, ভুল হয় সবি,
অজানা আশঙ্কায় শঙ্কিত হই আমি।
ফণা তোলা গাড় অন্ধকার ভূতের ভয়
মাথায় মায়ের স্নেহমায়া মাখা হাত,
জড়িয়ে গলা সুরা পড়ে ফুঁ দেয় বুকে মুখে,
ভয়ের লিক লিকে শিখা দপ করে নিভে।
সহস্র পরিযায়ী পাখির যাযাবরতা সঙ্গে নিয়ে
ঘুরি আমি দেশান্তরে, হন্যে হয়ে খুঁজি নিজ জন্মভিটে।
মহাদেশ, সমুদ্র ও নদী পার হয়ে ঘরের কড়া নাড়ি,
আমের মুকুলের গন্ধে ভরা পুরনো, ভাঙা পাঁচিলের বাড়ি।
ভোরের প্রথম আলো, দরজা খুলেই মা হেসে বলে,
“কী হল খোকা, এত দিন পরে ফিরলি বাড়ি?”
“চলে এলাম মা, এখন ছুটি পেয়েছি।”
লুকিয়ে চোখ মোছেন, শুরু হয় রান্নার আয়োজন
বুকভরে মায়ের ঘ্রাণ টেনে হাঁটি ফুলফলের গন্ধভরা উঠোন
পুকুরে জলে হাঁস আর খোলানে লতা ওঠা লাউয়ের মাচান
নিজে না খেয়ে মাছের বড় টুকরোটা তুলে দেয় পাতে
মায়ের হাতের রান্নার স্বাদ লেগে আছে আজও এই জিভে
জীবনের ঝড়ঝাপটায় কাঠ ঠোকরার মতো
মায়ের শরীর আঁকড়ে থেকেছি
মাকড়সার বাচ্চার মতো তার বুকের
সব মাংস কুরে কুরে খেয়ে ফেলেছি,
জরার গ্রাসে দুঃখ গোছাতে গোছাতে কষ্টের
বীজ পুঁতে একদিন চলে গেলেন মা দিয়ে সকলকে ফাঁকি।
বাড়িটা কেমন যেন আজ নিঝঝুম, নিস্তব্ধ, তালাবন্ধ।
রাতের অন্ধকারে জানলার গ্রিল দিয়ে
আবছা আলো এসে পড়ে মার প্রিয় বিছানাটায়,
মাকে ছুঁয়ে, মায়ের গন্ধ বুকে নিয়ে উড়ে যাই দূর অজানায়।
স্বর্গের জানালা দিয়ে আঙুলের ইশারায় মা আমায় ডাকে,
গা পোড়া জ্বর না পড়া পর্যন্ত আমার বিছানার পাশে,
একাদশি চাঁদের মতো এখনো বসে থাকে সারারাত জেগে।
বিষাক্ত বিদ্বেষ
এক আজদাহা অজগর গুটিগুটি পায়ে হামাগুড়ি দিয়ে
গোবি, সাহারা, নেগেভ মরুভূমি পাড়ি দিয়ে
ঊর্মিমুখর উতলা ঢেউয়ের দোলায় এখন আটলান্টিকের পারে,
গড়ে তুলেছে হাঙর, জলভালুক আর কুমিরের প্রজননখামার।
হিংসা, বিদ্বেষ, ঘৃণা, আর সংঘাতের রাজত্ব চরাচর জুড়ে,
আত্মাকে ঘৃণার কবরে সমাহিত করে,
দু’পকেটে হিংসার সুনামি নিয়ে সারাদিন হাঁটে,
ভিন্নমত, চেহারা, বিশ্বাসীদের কন্ঠরোধে সে সদা রণমূর্তি,
বিদ্বেষে বিহ্বল, অসহিষ্ণুতায় ছটফট করে উন্মত্ত সমাজের মুখচ্ছবি।
বিদ্বেষের কারবারিদের আজ তুমুল দাপট সোশ্যাল মিডিয়ায়,
শান্তির সাদা পায়রারা আজ সবচেয়ে অসাড় অসহায়,
মধ্যরাতে ভেসে আসে নেকড়ের ডাক ইউরোপ, আমেরিকা এশিয়ায়।
চারিদিকে তুমুল কোলাহলের মাঝে সবকিছু গুলিয়ে যাচ্ছে,
ধর্মের, দেশভক্তির আর জাতীয়তাবাদের মোড়কে।
ক্ষয়িষ্ণু নক্ষত্রের মতো লাল চোখের প্রাণীরা
সম্প্রীতির মাঝে ঘৃণার বিষ ঢালছে,
উগ্রতার এক নীল নেশায় সমুদ্র পরিমাণ বিদ্বেষ নিয়ে
বুঁদ হইয়ে পরস্পরের বিরুদ্ধে লড়ছে, লাশ খুঁজছে উগ্রতার সাধকরা।
মাঝখানে যিনি আটকে পড়েছেন, তাঁর নাম রাম হতে পারে,
হতে পারে রহিম, জনও- তিনি উলুখাগড়া।
শান্তির ধ্বজাধারীরা ভন্ডামি, কাপুরুষতার ছাতার নিচে নিঃশব্দ দর্শক
শান্তিকামীরা লজ্জিত, চিন্তিত, বিভ্রান্ত; ভয়ে ন্যুব্জ
মহেঞ্জোদারোর মতো চাপা পড়ে মানবতার অস্তিত্ব
থরথর কাঁপে রাহুগ্রস্ত আকাশে মুমূর্ষু সূর্য
বিদ্বেষের কারবারীরা লক্ষ্যে স্থির,
বুক ধনুকের ছিলার মতো টান টান,
প্রমানে ব্যস্ত সব্বাই কে বেশি হিন্দু, মুসলিম, খ্রিস্টান,
ভুলে গিয়েছে কবেই তারা শুঁকে নিতে ফুলের আঘ্রাণ।
প্রেমের আলো সর্বদাই জ্বলে,
আমরা যদি কেবল সে আলো হওয়ার
মতো থাকি যথেষ্ট বলবান।
ঘৃণা কখনও প্রেমের সুতীব্র আলোকে
করতে পারে না ম্লান।
যদি এবার বাঁচি
কী নিঃশব্দে এসেছিলে তুমি,
আমাকে কোন প্রস্ততি না দিয়েই
আমি প্রায় গিয়েছিলাম মরে
বিধাতার কাছে শেষ ক্ষমা চাওয়ার আগে।
মরে যাচ্ছে মানুষ দম বন্ধ হয়ে
তড়পাতে তড়পাতে, ডাঙ1য় উঠে
পড়া মাছের মতো, এ ঘোরলাগা সময়ে।
মানুষের জীবন নিয়ে ছেলেখেলা আর কতো,
‘করোনা’ মানুষের ফুসফুস নিয়ে তোমার
মাতলামি এবার বন্ধ করো।
কি সুন্দর ভাবে খুন করলে আমার বন্ধুকে বলো
আমি ল্যাম্প পোষ্টের মতো নির্বাক দাঁড়িয়ে থেকে
দেখলাম, কোনো রকম চিকিৎসা না পেয়ে
মরে গেল সে, মরে গেল আমাদের সম্পর্ক!
হারিয়ে গেল তার স্বপ্নালু মুখ, আমি বসে
থাকি এক অসাড় অসহায়ত্ব নিয়ে।
যে ভাই মরতে চেয়েছিল প্রিয়ার
হাতে হাত রেখে, সে মরেছে কাল নিঃসঙ্গ
হাসপাতালের ছাদ থেকে লাফিয়ে।
যে মা মরতে চেয়েছিল
স্বজন বেষ্টিত গ্রামের বাড়িতে,
পলাশ ফুলের স্নেহগন্ধ্যা ঘরে, মেঘের মতো
সাদা সাদা জায়নামাজ, বৃষ্টি থেমে যাওয়া
ভোররাতের আজান, উঠোন ভর্তি পড়ে
থাকা ধান, লতা ওঠা শিমের মাচান,
বোরো ধানের কচি কচি চারা,
সুপারি গাছের ফাঁক গলে আসা
নরম ও স্নিগ্ধ রোদের আলিঙ্গনে;
একবুক শ্বাস নেবে বলে হাসপাতাল
থেকে হাসপাতালে দৌড়ে সে
চলে গেল কাল, ডুবে গেল চিরতরে
ঘোর অন্ধকারে, পৃথিবীর আয়ু শেষ করে,
রেখে গেল স্মৃতির রুক্ষ নিদারুণ শোক,
সন্তান-স্বজনের প্রতিদিন একটু একটু করে
মরিবার তরে।
তুমি গিলে খেয়েছো মানুষের ফুসফুস, প্রিয়জনের
সান্নিধ্য, শিশুর খেলার খোলা মাঠ, পার্কের সবুজ
ঘাস। গল্পের আগেই ভেঙে ফেলেছো আসর,
বন্ধ করেছো মসজিদ, মন্দির
জানালা কথা, গান, ঘর।
লাল জিহ্বায় শুষে নিয়েছো আকাশের নীল,
বাতাসের নির্মলতা।
ঢেউয়ের পর ঢেউয়ে
পৃথিবীর রাজপথে আজ শীতল
আতঙ্কের শুন্যতা, ধুসর স্থবিরতা।
জানি তুমি মহাসংক্রামক, গুজবের থেকেও
তুমি দ্রুত ছড়াও, তবে তুমি মানুষের
ভাঙা হৃদয়কে ছাড়িয়ে যেতে পার না।
লড়বো এবার নব উদ্যমে,
হবো তোমার উপর চড়াও
যুদ্ধ হবে হাসপাতালে, ল্যাবে
হার না মানা ডাক্তার যুদ্ধ করবে পিপি পরে
জেদি নার্স অক্সিজেনের সিলিন্ডার হাতে নিয়ে
তরুন ভলান্টিয়ার বস্তিতে বস্তিতে খাবার
প্যাকেট পৌঁছে দিয়ে সন্ধেবেলা ফুটপাথে
বসে খাবার খেতে খেতে লড়বে,
সাফাইকরমী তার ঝাড়ু হাতে
কৃষক লড়বে আধা-ভাঙা লাঙল
নিয়ে ধান-কাটা-জমির খড়ের
উপর দিয়ে হাঁটতে হাঁটতে,
ধর্মনেতা স্বজন পরিত্যক্ত লাশের শেষকৃত্য করে।
কবি যুদ্ধ করবে তার রুপক, উপমা দিয়ে,
সনেট লিখবে তোমার ঘামভেজা ত্বকের নুনে,
শিল্পি নতুন সুরে জীবনের গান গেয়ে,
অন্ধ বাউল একতারা হাতে গ্রামের মেঠোপথে।
এবার তোমার কুশপুত্তলিকা দাহ করা হবে
উত্তর মেরু থেকে দক্ষিণ মেরু তার ঝুলিয়ে
শুকাবো তোমায় জেলে পাড়ার শুটকি মাছের মতো
বুঝবে এবার কত ধানে চাল কত
এবার যুদ্ধটা হবে তোমার জন্য বড় মর্মান্তিক
পথশিশুটি কাল হাওয়াই মিঠাই খেতে খেতে বলেছে
সে আমাদের সাথে থাকবে এ যুদ্ধে,
এই মাত্র যে শালিকটি উড়ে গেল
শিমুল গাছের দিকে, সে বলল, আমাদের
পাশে থাকবে, কাজেই এবার তোমার রক্ষা নাই।
তবে করোনা তোমাকে ধন্যবাদ দিয়ে যাই
তুমি আমাদের চোখ খুলে দিয়েছো তাই,
যদি এ যাত্রায় বাঁচি, যদি এ কান্না ফুরোয়,
আগের ভুলগুলো শোধরাবো
নতুন করে গড়ে তুলবো এ পৃথিবীকে,
প্রশ্ন তুলবো কেন এত ব্যয় করছো
নিউক্লিয়ার, হাইড্রোজেন বোমার পেছনে,
মানুষ মারার কেন এত আয়োজন…
যখন তা দুঃখী মানুষের ক্ষুদা
নিবারনে প্রয়োজন।
বন্ধ করো প্রকৃতির আর্তনাদ, পাখির কান্না,
পৈশাচিকতা নির্যাতন আর না।
এবার ফিরে যাব প্রকৃতির কাছে, গাছের কাছে,
ফুলের কাছে, শিশুর কাছে, যত্ন নেব পৃথিবীর
অসুস্থ ফুসফুসের, বয়ে আনব পূর্ণ নিরাময়।
করতলে লুকানো মরা মনুষত্বের
শস্যবীজ এবার অঙ্কুরিত হবে।
নিয়ে আসবো এ মুমূর্ষু ধরায় ভোরের সজীবতা।
যেখানে অন্য কেউ ঠিক করবে না
কীভাবে মারা যাব আমরা।