পৃথিবীর বৃহত্তম গণতন্ত্র দেশ ভারতবর্ষ। আগামী পনেরোই অগাস্ট ৭৪তম স্বাধীনতা দিবস পালিত হবে দেশ জুড়ে। ১৯৪৭ সালের এই দিনেই পৃথিবীর বৃহত্তম গণতান্ত্রিক দেশের জন্ম হয়। দুশো বছরের ব্রিটিশ শাসনের হাত থেকে মুক্ত হয় ভারত।
আর অদ্ভূত ব্যাপার হল,আরো পাঁচটি দেশেও এই একই দিনে।দেশগুলি হল বাহরাইন, উত্তর ও দক্ষিণ কোরিয়া, কঙ্গো এবং লিচেনস্টাইন। আমরা দেখি ভারতবর্ষ নামটি কীভাবে এলো। সেই বিষয়ে বলতে গেলে দেখতে পাই ইতিহাস থেকে তা হল, রাজা ভারতের নাম অনুযায়ী এই নাম। আর বর্ষ মানে অঞ্চল বা জায়গা। দুটো মিলে ভারতবর্ষ। আমার ছোট মেয়ে জিজ্ঞাসা করেছিল, আমাদের দেশের আসলে কি নাম? ইন্ডিয়া, হিন্দুস্থান বলি কেন? আমি অনেক কিছু দেখে উত্তর যা দিয়েছিলাম তা হল, ইন্ডিয়া (india) indus river যা সিন্ধু নদ থেকে এসেছে। ভারত অগ্নি দেবতার নাম। মহাভারতে ভরতের রাজ্যকে ভারতবর্ষ বলা হয়েছে। আবার ইন্দাস নাম থেকে ইন্ডিয়া এসেছে। সিন্ধু অথবা হিন্দু নদ ঘিরে যারা থাকত তাদের হিন্দু বলা হত। সমস্ত ভারতবর্ষের লোকদেরকেই হিন্দু বলা হত।আবার অনেকে বলেন যেসব অঞ্চল হিন্দু পৌরানিক রাজাক দেওয়া হয় সেটাই ভারতবর্ষ।
সিন্ধু নদী এশিয়ার দীর্ঘতম নদী।নানা জায়গা ঘুরে শেষে আরব সাগরে মিলিত হয়। পাকিস্তানের জাতীয় নদী। ভারত একসময় অনেকগুলো দেশের সমষ্টি ছিল। সাগর বংশের রাজা ভারতের নাম নিয়ে আমাদের দেশের নাম ভারতবর্ষ হয়েছে। এসব নিয়ে নানা মত আছে ।
এবার,স্বাধীনতা কথাটির মানে হল স্ব-অধীন। কোনো ভাবেই পরাধীন নয়। যা ইংরেজরা আমাদের তাদের অধীনে রেখেছিল। আমরা ভারতবাসী নিজের মত চলতে এবং মত প্রকাশ করতে পারব না। Liberty থেকে এসেছে এই স্বাধীন কথা। আবার যা ইচ্ছে তাই করা নয়। সেটা হবে অরাজকতা। সেটা অপরাধ। অন্য কারো শৃংখল জীবন জাপানে বাধা না হয়। এক কথায় স্বাধীনতার অর্থ যদি বলি তা হল, মুক্তি। কারো দাসত্ব নয়। রবীন্দ্রনাথ বলেছিলেন, সেই মুক্তি বৈরাগ্যের নয়, সেই মুক্তি প্রেমের মুক্তি, ত্যাগের মুক্তি নয়, যোগের মুক্তি। লয়ের মুক্তি নয়, প্রকাশের মুক্তি। আত্মার স্বাধীনতা ছাড়া অন্য স্বাধীনতার মাহাত্ম্য মানি না। এই প্রসঙ্গে তাঁরই সোনার তরী থেকে,দুই পাখি কবিতার মধ্যে অসাধারণ ভাবে যা বলেছেন আমরা একটু দেখতে পারি ।মুক্তি কাকে বলে!
বনের পাখি বলে, খাঁচার পাখি ভাই
বনেতে যাই দোঁহে মিলে।
খাঁচার পাখি বলে…বনের পাখি আয়
খাঁচায় থাকি নিরিবিলে।
বনের পাখি বলে—-‘না’
আমি শিকলে ধরা নাহি দিব।
খাঁচার পাখি বলে–‘হায়
আমি কেমনে বনে বাহিরিব।
একসময়ে খাঁচার পাখির সুযোগ থাকলেও আর বাইরে যেতে পারবে না। কারণ তার শক্তি সব শেষ হয়েছে খাঁচায় থেকে। এই কবিতাটি পড়লে বোঝা যায় পরাধীনতা কী ভয়ংকর। আর স্বাধীনতাই বা কি।
ভারতবর্ষ তিন টুকরো হল তার অন্যতম কারণ মুক্তির অভাব থেকেই। পাকিস্তান হবার কারণ মুসলমানরা তারা এই ভারতে স্বাধীন ভাবে থাকতে পারবে না। এখানে হিন্দুরা সংখ্যায় বেশি।আবার পাকিস্তান যখন পূর্ব পাকিস্তানে দমন পীড়ন চালাতে আরম্ভ করল তখন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু মুজিবর রহমানের নেতৃত্ব স্বাধীন বাংলাদেশের জন্ম হল। পৃথিবীর ইতিহাসে সেই একই গল্প।বারবার বহু দেশ টুকরো হচ্ছে।কারণ মুক্তির আনন্দ বিঘ্নিত। তার মানে দেশ স্বাধীন মানে সব পাওয়া নয়।
এই প্রসঙ্গে জাতির জনক মহাত্মা গান্ধীর কথা না বললেই নয়। ‘ক্ষমতা দূরকম। একটা শাস্তির ভয় দেখিয়ে অর্জিত। আরেকটা ভালবাসা দিয়ে। ভালবাসা দিয়ে অর্জন করা ক্ষমতা। অনেক বেশি প্রভাবশালী আর স্থায়ী হয়। তুমি আমাকে শিকলে বাঁধতে পারো, নির্যাতন করতে পারো, এমন কি বিনাশ করে দিতে পারো আমার এই দেহ কিন্তু আমার মস্তিষ্ককে বন্দি বানাতে পারবে না। আর ধর্মের ভিত্তিও হল ভালবাসা এবং অহিংসা।’
এতো বছর পরেও আমাদের দেশ ভারতবর্ষে দারিদ্র মোচন হল না। বেকারত্ব ছেয়ে গেছে। চাষীরা আত্মহত্যা করছে। হিংসা,খুন চলছে। মাত্র ছ ‘জন ডোমের চাকরির জন্য হাজার হাজার উচ্চ শিক্ষিত ছেলেমেয়ে আবেদন করছে। বিবেকানন্দ কবেই বলেছেন সঠিক শিক্ষা না হলে এই দেশের দারিদ্রতা ঘুচবে না। তবু বলব,অনেক অগ্রগতি হয়েছে আবার তুলনায় কিছুই হয়নি।
ভারতের প্রথম প্রধানমন্ত্রী জওহরলাল নেহরু বলেছিলেন, আমার প্রথম কাজ হল দেশের শিশুদের উপযুক্ত শিক্ষা, স্বাস্থ্য ঠিক রেখে ওদের মানুষ করা। আজো দেখি পথে ঘাটে খেত খামারে শিশু শ্রমিক দুটো ভাতের আশায় অমানুষিক কাজ করে যাচ্ছে।
আমাদের দেশে সব আছে। প্রাকৃতিক অঢেল সম্পদ,মেধা আর যা লাগে। নেই সঠিক যোগ্য নেতা। নেতাজী সুভাষ বোসের কথা মনে পড়ে। যে অন্তত দেশবাসীকে ঘুম থেকে জাগাবে।
আমরা তবু স্বপ্ন দেখব, নতুন ভোর আসবে। স্বাধীনতার জন্য অমর বীর শহীদেরর রক্ত বৃথা হবে না। ভারত আবার জগৎ সভায় শ্রেষ্ঠ আসন নেবে। ভারত মায়ের চোখের জল দেশের সন্তানেরাই মুছিয়ে বলবে, মা তুমি আর কেঁদো না।