তালেবানের অভ্যন্তরীণ কার্যক্রম ও নেতৃত্ব নিয়ে সব সময় ছিল গোপনীয়তা। আফগানিস্তানে ১৯৯৬ থেকে ২০০১ সাল পর্যন্ত তালেবান শাসনের আমলেও তা কঠোরভাবে অনুসরণ করা হয়। এমনকি তালেবানের প্রতিষ্ঠাতা মোল্লা ওমরের মৃত্যুর দুই বছর পর তা স্বীকার করে সংগঠনটি। সাম্প্রতিক লড়াইয়ে নেতৃত্বে আছেন সংগঠনের ছয় গুরুত্বপূর্ণ নেতা। ক্ষমতা দখলে কৌশলী ভূমিকা রেখেছেন তাঁরা।
হাইবাতুল্লাহ আখুনজাদা: ‘বিশ্বাসীদের নেতা’ নামে পরিচিত ইসলাম ধর্ম বিশেষজ্ঞ হাইবাতুল্লাহ আখুনজাদা তালেবানের প্রধান বা আমির। তিনি দলটির সব রাজনৈতিক, ধর্মীয় ও সামরিক সিদ্ধান্তের ব্যাপারে সর্বোচ্চ ক্ষমতার অধিকারী। তাঁর পূর্বসূরি আখতার মানসুর মার্কিন ড্রোন হামলায় নিহত হওয়ার পর ২০১৬ সালে তিনি আমিরের দায়িত্ব গ্রহণ করেন।
রয়টার্স জানিয়েছে, আখুনজাদা ১৫ বছর ধরে পাকিস্তানের দক্ষিণ-পশ্চিম অঞ্চলের কুচলাক শহরের একটি মসজিদে কাজ করেন। ২০১৬ সালের মে মাসে হঠাৎ করে তিনি উধাও হয়ে যান। ধারণা করা হয়, তাঁর বয়স এখন ৬০-এর কাছাকাছি। আখুনজাদার বর্তমান অবস্থান সম্পর্কে কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি।
মোল্লা মোহাম্মদ ইয়াকুব: তালেবানের প্রতিষ্ঠাতা মোল্লা ওমরের ছেলে মোল্লা মোহাম্মদ ইয়াকুব দলটির সামরিক কার্যক্রমের দায়িত্বে রয়েছেন। স্থানীয় সংবাদ সংস্থাগুলোর প্রতিবেদন অনুযায়ী, ধারণা করা হয়, তিনি আফগানিস্তানেই অবস্থান করছেন। আখতার মানসুরের মৃত্যুর পর দলটির পরবর্তী নেতা হিসেবে তাঁর নাম প্রস্তাব করা হলেও তিনি ২০১৬ সালে নিজের পরিবর্তে আখুনজাদার নাম প্রস্তাব করেন। মানসুরের উত্তরসূরি নির্বাচনসংক্রান্ত এক বৈঠকে ইয়াকুব নিজের স্বল্প পরিমাণ সামরিক অভিজ্ঞতা ও কম বয়সের কথা উল্লেখ করে নিজেকে প্রত্যাহার করে নেন বলে জানিয়েছেন একজন তালেবান কমান্ডার। ইয়াকুবের বয়স ৩০-এর কাছাকাছি বলে ধারণা করা হয়।
সিরাজউদ্দীন হাক্কানি: প্রখ্যাত মুজাহিদীন কমান্ডার জালালউদ্দীন হাক্কানির ছেলে সিরাজউদ্দীন হাক্কানি ‘হাক্কানি’ নেটওয়ার্কের দায়িত্বে আছেন। এই উপদলটি পাকিস্তান-আফগানিস্তানের সীমান্তজুড়ে অবস্থিত তালেবানের সব আর্থিক ও সামরিক সম্পদের দেখাশোনা করে।
ধারণা করা হয়, হাক্কানিরা আফগানিস্তানে আত্মঘাতী বোমা হামলার প্রচলন করে এবং তারা দেশটিতে বেশ বড় আকারের কয়েকটি আত্মঘাতী হামলা চালায়। এর মধ্যে রয়েছে সাবেক রাষ্ট্রপতি হামিদ কারজাইকে হত্যাচেষ্টা, একটি বড় হোটেল ও ভারতের দূতাবাসে হামলা ইত্যাদি। তাঁর বর্তমান অবস্থান অজানা।
মোল্লা আবদুল গনি বারাদার: তালেবানের অন্যতম সহপ্রতিষ্ঠাতা মোল্লা আবদুল গনি বারাদার দলটির রাজনৈতিক দপ্তরের প্রধান হিসেবে কাজ করছেন। আফগানিস্তানে টেকসই শান্তি ও অস্ত্রবিরতি নিয়ে দোহার আলোচনা দলটির একজন সদস্য তিনি। মোল্লা ওমরের সবচেয়ে বিশ্বস্ত কমান্ডারদের একজন হিসেবে পরিচিত বারাদারকে পাকিস্তানের দক্ষিণ করাচিতে ২০১০-এ গ্রেপ্তার করা হলেও ২০১৮ সালে তাঁকে ছেড়ে দেওয়া হয়।
শের মোহাম্মদ আব্বাস স্টানিকজাই: তালেবান সরকারের সাবেক প্রতিমন্ত্রী স্টানিকজাই প্রায় এক দশক দোহায় বসবাস করেছেন। তিনি দলটির রাজনৈতিক দপ্তরের প্রধান হিসেবে ২০১৫ সালে নিযুক্ত হন। তিনি আফগান সরকারের সঙ্গে একাধিক আলোচনায় অংশ নিয়েছেন এবং বিভিন্ন দেশে কূটনৈতিক সফরে তালেবানের প্রতিনিধিত্ব করেছেন।
আব্দুল হাকিম হাক্কানি: আব্দুল হাকিম হাক্কানি তালেবানের আলোচনা দলের প্রধান। তালেবানের সাবেক ‘ছায়া’ প্রধান বিচারপতি হাকিম দলটির ধর্মীয় বিশেষজ্ঞদের কাউন্সিল প্রধানের দায়িত্ব পালন করছেন। ধারণা করা হয়, তিনি আখুনজাদার বিশেষ আস্থাভাজন।