খুব কম লোকই জানেন, ভারতের শেষ ভাইসরয় ও প্রথম গভর্নর জেনারেল লর্ড মাউন্টব্যাটেন তড়িঘড়ি বৈঠক করে ১৫ আগস্ট দিনটিতেই ভারতবর্ষের ওপর থেকে শাসন ক্ষমতা তুলে নিয়ে স্বাধীনতা ফিরিয়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন।
কারণ, ১৯৪৭ সালের ১৫ আগস্ট দিনটি ছিল দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে জাপানের সম্রাট হিরোতিহোর আত্মসমর্পণ করার দ্বিতীয় বর্ষপূর্তি। ওই আত্মসমর্পণ ছিল দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি অধ্যায়। কারণ এই আত্মসমর্পণের ফলে ওই বছরেরই ২ সেপ্টেম্বর দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের ধ্বংসলীলা বন্ধ হয়। শুধুমাত্র সেই সুন্দর স্মৃতিটিকে স্মরণীয় করে রাখতেই তিনি এই দিনটিকে বেছে নিয়েছিলেন।
খুব কম লোকই জানেন, ডমিনিক লাপিয়ের এবং ল্যারি কলিন্স-এর যৌথ ভাবে লেখা, ‘ফ্রিডম অ্যাট মিডনাইট’ বইটি থেকে আরও একটি তথ্য জানা যায়। সেখানে লেখা আছে, ১৫ আগস্ট স্বাধীনতা দেওয়া হবে প্রাথমিকভাবে ঘোষণার পরেই ভারতীয় জ্যোতিষীরা শুধু অখুশিই হননি, তাঁরা ঘোরতর বিরোধিতা করে বলেন, ওই দিনটি মঙ্গলজনক নয়। তাই জ্যোতিষীদের মত মেনে নিয়েই, যেহেতু এ দেশের লোকেরা সকালের আলো ফোটার পরে দিন হিসেবে গ্রাহ্য করেন, ফলে ১৫ আগস্ট সকাল হওয়ার আগেই, অর্থাৎ ১৪ আগস্ট মধ্যরাতে স্বাধীনতার ঘোষণা করা হয়।
তবে এটা নিশ্চয়ই জানেন, প্রতি বছরের মতো আজও ভারতের ৭৫তম স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে দেশবাসীর উদ্দেশ্যে লালকেল্লা থেকে ভাষণ দেবেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র দামোদর দাস মোদি।
এ দিন দেশের কোথাও কোনও অপ্রীতিকর ঘটনা যাতে না ঘটে, সে জন্য সারা দেশজুড়ে, বিশেষ করে দিল্লিতে কড়া নিরাপত্তা মোতায়েন করা হয়েছে।
কিন্তু খুব কম লোকই জানেন, পৃথিবীর মোট ২০৩টি দেশের মধ্যে ভারত ছাড়াও আরও পাঁচটি দেশ রয়েছে, যারা এই ১৫ আগস্ট দিনটিকেই স্বাধীনতা দিবস হিসেবে উদযাপন করে।
সেই দেশগুলো হল— উত্তর ও দক্ষিণ কোরিয়া, বাহারিন, লিচেনস্টেইন, রিপাবলিক অফ কঙ্গো।
হ্যাঁ, খুব কম লোকই জানেন, ভারত স্বাধীনতা লাভ করেছিল ১৯৪৭ সালের ১৫ আগস্ট ঠিকই, কিন্তু তার আগেই ওই একই বছরের ১8 জুলাই অনানুষ্ঠানিক ভাবে স্বাধীনতা লাভ করেছিল ভারত।
খুব কম লোকই জানেন, ১৯৭৩ সাল পর্যন্ত স্বাধীনতা দিবসে রাজ্যগুলির রাজ্যপালই জাতীয় পতাকা উত্তোলন করতেন। কিন্তু ১৯৭৪ সালে এর পরিবর্তন ঘটে। এম করুণানিধি কেন্দ্রীয় সরকারের কাছে বিষয়টি তুলে ধরেন এবং তিনিই প্রথম মুখ্যমন্ত্রী যিনি স্বাধীনতা দিবসে জাতীয় পতাকা উত্তোলন করেন।
খুব কম লোকই জানেন, স্বাধীনতার আগে ভারতে ৫৫০ জন রাজার ছোট্ট ছোট্ট রাজ্য ছিল। সর্দার বল্লভভাই পটেল তাঁদের একত্রিত হতে অনুরোধ করেছিলেন। তাঁদের সঙ্গে আলোচনা করেছিলেন। তাঁরা ভারতের সঙ্গে যুক্ত হতে রাজি হয়েছিলেন এবং অবশেষে যুক্তও হয়েছিলেন।
খুব কম লোকই জানেন, দেশের প্রথম প্রধানমন্ত্রী জওহরলাল নেহরু। এটা সবাই জানি। কিন্তু তিনি সংখ্যাগরিষ্ঠ ভোটে জিতে প্রধানমন্ত্রী হননি। সংখ্যাগরিষ্ঠ ভোটে জিতেছিলেন সর্দার বল্লভভাই পটেল। কিন্তু মহাত্মা গান্ধীর প্রিয় পাত্র ছিলেন নেহরু। তাই গান্ধীজি সর্দার বল্লভভাই পটেলকে পদত্যাগ করতে অনুরোধ করেছিলেন। উনি পদত্যাগ করাতেই ভারতের প্রথম প্রধানমন্ত্রী হতে পেরেছিলেন জহরলাল নেহেরু।
খুব কম লোকই জানেন, যেহেতু দেশ স্বাধীন করাই ছিল জাতীয় কংগ্রেসের একমাত্র উদ্দেশ্য, তাই দেশ স্বাধীন হওয়ার পর মহাত্মা গান্ধী কিন্তু ভারতের সব চেয়ে বড় রাজনৈতিক দল জাতীয় কংগ্রেসকে ভেঙে দিতে চেয়েছিলেন। তিনি তাঁর মৃত্যুর ঠিক একদিন আগে একটি খসড়ায় স্পষ্ট করে লিখেছিলেন, জাতীয় কংগ্রেস তার লক্ষ্য পূরণ করেছে। এটির প্রয়োজন ফুরিয়েছে।
কিন্তু জাতির জনক হিসেবে তাঁকে মান্যতা দেওয়া হলেও, তাঁর কথা যে রাখা হয়নি, সে তো সবাই দেখতেই পাচ্ছি।
এ রকম আরও অজস্র ঘটনা আছে, যেগুলো এ দেশে জন্মালেও, এ দেশে বাস করলেও, এ দেশের স্বাধীনতার আনন্দ চেটেপুটে ভোগ করতে করতে বুড়ো হয়ে গেলেও, খুব কম লোকই জানেন।