দাপটে উল্লাসে
আজ পৃথিবী বান্ধবহীন যেন রেল ব্রিজে দাঁড়িয়ে একা
বিনিদ্র রাতের শয্যায় জানলার বাইরে তাকিয়ে তাকিয়ে তারা গোনা
ধূসর সন্ধ্যায় নেমে আসে ছায়া যদি সেই মুহূর্ত তোমাকে পেতাম
গাঢ় আলিঙ্গনে
নদীও তখন স্থির কায়া
তোমার চুম্বনে আমার হৃদয়ে তখন বাউলের সুর
বিজনে পেতাম নিজের সঙ্গে দেখা দূর সমুদ্দুর
কবি তার কবিতার মানুষটিকে পেয়েছে বলে ঝঙ্কারে বেজে উঠত দোতারা
ক্ষ্মীণ হয়ে আসত আলো
প্রশ্ন করতাম কে বেসেছে আগে ভালো
কবিতা লেখার সময় কাঙ্ক্ষিত পঙক্তিমালা
পথ হারাতো নীল কুয়াশায়
বিস্তৃতি নিমেষে মুছে যেত
বেঁচে যেত স্বপ্ন ভাঙা শোক
ভেসে বেড়াতাম আমাদের গঙ্গায়।
আমি নিজেকে বদলে ফেলতে পারি
যদি তুমি নির্বাসন দাও তোমার জন্য টুকরো হয়ে যাব
তুমি যদি নির্বাসন দাও আমার সত্তাকে নিংড়ে নিয়ে তোমার পায়ে রেখে যাব
হাঁটব না আর কোনো মোহন রাস্তা ধরে
মরে যেতে পারি অবলীলায় বিষ পান করে
বিষণ্ণ আলোতে অন্তরালে নিজেকে বদলে ফেলতে পারি
নদীর শিয়রে ঝুঁকে পরা মেঘ না দেখে নিজেকে নিষিদ্ধ কারাগারে বন্দী করে রাখি
চাপ রক্ত ঝরেছে যেখানে নদীর বুকে
সেখানেই বহির্জীবন কাটাতে পারি ফেরারি সুখে
শহরে বন্দরে আজ এত অগ্নিবৃষ্টি তারও পড়ে
তোমার স্বপ্ন দেখে কাটিয়ে দিতে পারি বাকি জীবন জ্বরের ঘোরে।।
অসীম শূন্যতা
তুমি যেখানেই হাত রাখো সবকিছু ফেলে সেখানেই আমার শরীর
তোমার চুল ধোয়া জল যেখানেই পড়ে সেখানেই আমি পাতি হাত
সূর্যও রক্তে যেমন ডুবে যায় অগাধ গভীর
আমি তো ফিরিনি ঘরে থেকে যাই তোমার সাথে
তোমার চতুর্দিকে শূন্যতাকে ভর করে
রেল ব্রিজে একাকার হাঁসি হাহাকার নেশা
যেখানেই তুমি ছুঁয়ে যাও হাত
সেখানেই আমার শরীরে মাদকের নেশা
কে বলে তোমাকে আমি পরিত্রাণ ভালোবাসি
তুমি যেখানেই রাখো ঠোঁট
সেখানেই আমার চুম্বন পায়
প্রবল অযত্নে তোমার
ঠোঁটের থেকে ঝরে যাই আমি
ভালোবেসে নিজেকে কাঁদাই
তোমার চোখের ছায়ায় খেলা করে যাই আমি।।
পুরোনো সুদ
ধ্বংসে দাঁড়িয়ে তুমি চেয়েছিলে জয়
হতে পারে আমাদের দেখা সে তো সামাজিক নয়
তবুও তোমার নাম জমা আছে বুকে যেভাবে টাকার অঙ্ক জমা পরে খাতে
সবার অলক্ষ্যে সুখে কতো পাণ্ডুলিপি উড়ে আসে
চলে আসে ধেয়ে বুকের ওপরে দুটি হাত
অনন্যপায় হয়ে তোমাকে জড়িয়ে ধরেছি আঁকড়ে
জড়িয়ে ধরেছি কান্নার জলপ্রপাত।।
শ্রাবণ মাস
তোমার প্রতিটা চিঠির উত্তর আমি পাঠিয়েছি
পাঠিয়েছি খামে ভরে শ্রাবণ মাস
মেঘের অক্ষরে লিখেছি অবর্থ্য যন্ত্রনার কথা
তুমি কত খেলেছ শ্রাবণের জলে
তখন তুমুল কথাগুলো উঠে আসে চোখে
তোমার মুখোমুখি আমি নেই
শুধু হাতের সামনে আমার ছেঁড়া কাগজ
কত বিভীষিকা পেরিয়ে উড়ো চিঠি মেঘে পাঠিয়েছি সেদিন, জানি না আজ কেন তোমার দুচোখ খটখটে বৃষ্টিহীন।।
বিপ্লবী বসন্ত
যেখানে তোমার পায়ের চিহ্ন ছেড়ে গেছো
অতীত আজ সেই শহর বন্দর
আমার ঘরে পলেস্তারা খসা দেওয়াল
চিহ্ন রেখে গেছে দরজায় কুটিল মহাকাল
আজ আর এ বুকের বন্দরে এসে থামে না জাহাজ
পলি জমে মরে গেছে শত সহস্র নদী
স্বপ্নের রূপকথায় সপ্তডিঙ্গার সাজ
তোমার পায়ের নীচ থেকে ধূসর ভোরবেলার শহর জেগে ওঠে, আমি তখন রক্ত মেখে লাল
শ্লোগানে, বিক্ষোভে, শিরায় বিপ্লবী বসন্ত ছোটে।।