গোটা বিশ্বের সর্বাধিক জনপ্রিয় অমর মহাকাব্য ‘ইলিয়াড’ এবং ‘ওডিসি’ আদৌ কোনও কবির স্বলিখিত নয়। ওই কাব্যগ্রন্থটিতে ট্রয় নগরীর কাহিনি এবং তার সঙ্গে যেৎসব ঘটনায় জড়িয়ে ছিল, সেগুলোই প্রধান উপাদান হয়ে উঠেছে। এই গুরুত্বপূর্ণ ঐতিহাসিক তথ্য বাদ দিলেও, এর মধ্যে এমন এক সত্যগ্রহ চিরন্তন আবেদন আছে, যার জন্য এই দুটি কাহিনি আজও পাঠকের কাছে সমান ভাবে আদৃত।
কিন্তু কোনও কবি যদি না-ই লিখবেন, তবে এটা এল কোথা থেকে? আসলে এই মহাকাব্য যিনি রচনা করেছিলেন, সেই কবি ছিলেন জন্মান্ধ। তাই তাঁর পক্ষে এই মহাকাব্য লেখা সম্ভব হয়নি। তিনি চারণ কবির মতো বিভিন্ন জায়গায় ঘুরে ঘুরে মহাকাব্য দুটি খানিকটা নাটকীয় ভঙ্গিতে মুখস্থ বলে যেতেন আর শাশ্বত প্রাচীন কাহিনির এই ঘটনাবলি তাঁর সুন্দর উচ্চারণে একেবারে জীবন্ত হয়ে উঠতে। শ্রোতারা যেন ছায়াছবির মতো চোখের সামনে দেখতে পেতেন কাহিনির পুঙ্খানুপুঙ্খ প্রতিটি দৃশ্য। তাঁদের গায়ে কাঁটা দিয়ে উঠত।
সে সময় এটা এত জনপ্রিয় হয়ে উঠেছিল যে, অনেকেই উৎসুক হয়ে, ঠিক একই রকম ভঙ্গিটঙ্গী-সহ প্রায় হুবহু নকল করে তুলে নিতেন নিজের গলায় এবং জনসমক্ষে সেটা আবৃত্তি করে শোনাতেন।
এই ভাবেই সেই কালজয়ী কাব্যগাথা পুরুষানুক্রমে লোকের মুখে মুখে ঘুরে অবশেষে তা বই হয়ে বেরোয়। তাই অনেকেই মনে করেন, আবৃত্তিকারদের কেউ কেউ হয়তো কোনও কোনও অংশ নিজেরাই বানিয়ে কাহিনির সঙ্গে মিশিয়ে থাকতে পারেন। অবশ্য এই ধারণার পিছনে এখনও পর্যন্ত কোনও অকাট্য প্রমাণ খুঁজে পাওয়া যায়নি। অগত্যা কাব্যগ্রন্থদ্বয়ের কবি বলতে স্বীকৃত ওই একজনই।
এই দুটি কাব্যগ্রন্থ ছাড়াও তাঁর সৃষ্টির সংখ্যা অনেক। ওঁকেই ইউরোপীয় কাব্যের জনক এবং গ্রিস দেশে প্রচলিত ধর্মীয় প্রথার প্রবর্তক ও শিক্ষার উৎস হিসেবে মান্য করা হয়। কিন্তু ইনি কে? পণ্ডিতগণের গবেষণায় জানা গেছে, আটশো পঞ্চান্ন খ্রিস্টাব্দের আগে অথবা ট্রোজান যুদ্ধের চারশো বছর পরে ইনি জন্মগ্রহণ করেন। গ্রিক কবি হিসেবে খ্যাতি লাভ করলেও, তাঁর পূর্বপুরুষ ছিলেন এশিয়াবাসী। তাঁর জন্মস্থান নিয়ে নানা মতবাদ আছে। বিতর্ক আছে। তিনি আর কেউ নন, সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ মহাকবি— হোমার।