বাজার থেকে অতিরিক্ত তারল্য তুলে নেওয়ার অকশনে (নিলাম) ভালোই সাড়া দিয়েছে ব্যাংকগুলো। প্রথম দিন প্রায় সাত হাজার কোটি টাকার বেশি বিড দাখিল হয়।
তবে বাংলাদেশ ব্যাংক দুই হাজার ৬০৫ কোটি টাকার বিড অনুমোদন করেছে। ১ শতাংশেরও কম সুদে এই টাকা খাটিয়েছে ব্যাংকগুলো। এর মানে প্রথম দিন বাংলাদেশ ব্যাংকের ভল্টে ঢুকেছে দুই হাজার ৬০৫ কোটি টাকা।
বাংলাদেশ ব্যাংকের ডেট ম্যানেজমেন্ট বিভাগের মহাব্যবস্থাপক রূপ রতন পাইন বলেন, ‘বাজার থেকে অতিরিক্ত তারল্য তুলতে অনেক দিন পর এ ধরনের অকশন হলো। প্রথম দিন হওয়ার পরও ভালোই সাড়া দিয়েছে ব্যাংকগুলো। প্রায় সাত হাজার কোটি টাকার বিড দাখিল করে ব্যাংকগুলো। তবে আমরা দুই হাজার ৬০৫ কোটি টাকা অনুমোদন করেছি।’ বিড দাখিলের চেয়ে কম অনুমোদন করা হলো কেন—এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘এটা চলমান প্রক্রিয়া। একবারেই সব টাকা তুলে নিতে হবে তা তো না। মুদ্রানীতির সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে এটা করা হচ্ছে।’ তিনি বলেন, ‘আগস্ট মাসজুড়েই চলবে অকশন। এ সপ্তাহে আরো অকশন আছে। সামনের সপ্তাহেও আছে।’
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, প্রথম দিন সাত ও ১৪ দিন মেয়াদি বাংলাদেশ ব্যাংক বিলের নিলাম অনুষ্ঠিত হয়। এতে শুধু বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোই সাড়া দিয়েছে। ব্যাংকবহির্ভূত কোনো আর্থিক প্রতিষ্ঠানে অংশ নেয়নি। আবার দেশের সব ব্যক্তি ও প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের এখানে টাকা খাটানোর সুযোগ রাখা হলেও সাড়া মেলেনি। নিলামে সাত দিন মেয়াদি ব্যাংক বিলে এক হাজার ৫০৫ কোটি টাকা খাটিয়েছে ব্যাংকগুলো। সুদের হার মাত্র দশমিক ৫৪ শতাংশ। আর ১৪ দিন মেয়াদি ব্যাংক বিলে টাকা খাটানো হয়েছে এক হাজার ১০০ কোটি টাকা। সুদের হার দশমিক ৭৫ শতাংশ।
এদিকে আগামীকাল বুধবার ৩০ দিন মেয়াদি বাংলাদেশ ব্যাংক বিলের নিলামের তারিখ নির্ধারণ করা হয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংক জানিয়েছে, এ নিলামেও দেশের সব ব্যক্তি ও প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীরা টাকা (বিড দাখিল) খাটাতে পারবে। বিশেষ করে বাংলাদেশ ব্যাংকের সঙ্গে চলতি হিসাব পরিচালনাকারী যেকোনো ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান নিজস্ব বা তাদের ব্যক্তি ও প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারী গ্রাহকদের পক্ষে বিড দাখিল করতে পারবে। প্রতি ১০০ টাকা অভিহিত মূল্যের জন্য ডিসকাউন্টে বিলের প্রস্তাবিত ক্রয়মূল্য উল্লেখসহ মোট অভিহিত মূল্য উদ্ধৃত করে অনলাইন প্রক্রিয়ায় নিলামের তারিখে দুপুর সাড়ে ১২টার মধ্যে বাংলাদেশ ব্যাংকে স্থাপিত এমআই মডেলের মাধ্যমে বিড দাখিল করতে হবে। একই দিনে নিলাম অনুষ্ঠিত হবে এবং নিলাম ফলাফল দুপুর ২টার মধ্যে ঘোষিত হবে বলে জানিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।
উল্লেখ্য, বাজার থেকে টাকা তুলতে বেশ কয়েকটি মাধ্যমে ব্যবহার করে থাকে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এগুলো হলো রিভার্স রেপো, বাংলাদেশ ব্যাংক বিল ও নগদ জমার হার (সিআরআর)। এর মধ্যে প্রথম দুটি মাধ্যমেই ব্যাংকগুলোর সুদ আয় হয়ে থাকে। বর্তমানে রিভার্স রেপোর সুদহার ৪ শতাংশ। আর বাংলাদেশ ব্যাংক বিলের সুদহার বাজার চাহিদার ভিত্তিতে নির্ধারিত হয়। তবে তা কলমানির সুদহারের চেয়েও কম হয়। বর্তমানে কলমানির সুদের হার ১ থেকে সোয়া ২ শতাংশের মধ্যে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য বলছে, গত জুন পর্যন্ত ব্যাংকিং খাতে অতিরিক্ত তারল্যের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে দুই লাখ ৩১ হাজার কোটি টাকা। এটি অন্য যেকোনো সময়ের চেয়ে বেশি। উদ্বৃত্ত তারল্যের পরিমাণ গত এক বছরে বেড়েছে প্রায় ৯২ হাজার কোটি টাকা। এর মধ্যে একেবারে অলস পড়ে আছে ৬২ হাজার ৫০০ কোটি টাকা।
(সূত্র কালেরকন্ঠ)