অরুণ ও নির্ঝরার গল্প

তুহিন দাস
তুহিন দাস
3 মিনিটে পড়ুন

সিঁড়িতে কেউ দাঁড়িয়ে নেই
অরুণ উবারে ওঠার আগে একবার রাস্তার ওপাশে তাকালো। বিদায় জানাতে আসা নির্ঝরা এক মুহূর্ত আগেও সিঁড়িতে দাঁড়িয়ে ছিল। এখন আর নেই। অরুণ বুঝতে পারলো সে চলে যাওয়াতে নির্ঝরা মুক্তি পেয়েছে। অরুণের গাড়িটি দ্রুতগতিতে এয়ারপোর্টের দিকে ছুটে চলেছে।

নির্ঝরার হেয়ারব্যান্ড
অরুণ এপার্টমেন্টে খুঁজে পেল নির্ঝরাকে না দেয়া, কিন্তু ওর জন্য কেনা গোলাপী হেয়ারব্যান্ডটি। মাত্র একবার দেখা হতেই ওদের সম্পর্কটা শেষ হয়ে গিয়েছিল।

অরুণের গল্পবলা
নির্ঝরা রাতে ঘুমোনোর সময় ফোনে অরুণের কাছে গল্প শুনতে চাইতো। নির্ঝরা ভালবাসতো মুক্তিযুদ্ধের গল্প। সে গল্পগুলোর মাঝে ওরা দু’জন প্রবাসী স্বদেশকে খুঁজে পেতো।

নির্ঝরা ও ফেসবুক
অরুণকে প্রত্যাখ্যান করার পর নির্ঝরা অরুণকে ফেসবুকে ব্লক দিয়েছিল। কিন্তু কয়েকদিন পরেই ব্লক তুলে দেয় মাঝে মাঝে অরুণকে দেখার জন্য। যদিও সে আর অরুণকে চায় না।

- বিজ্ঞাপন -

নির্ঝরার চিঠি
অরুণের কাছে নির্ঝরার পাঠানো চিঠি দু’টি অরুণ কখনও কখনও খুলে পড়ে আর ভাবে এতো ভালোবাসাময় মানুষটি তাকে দুই মাসের বেশি সহ্য করতে পারেনি!

নির্ঝরার গণেশ
নির্ঝরা গণেশ ভালবাসতো। বহুদিন হলো নির্ঝরা চলে গেছে। কিন্তু সংশয়বাদী অরুণের বইয়ের তাকে নির্ঝরার জন্য কেনা ছোট্ট গণেশটি এখনও রয়ে গেছে।

নির্ঝরার জন্য লেখা
অরুণ নির্ঝরাকে স্বরচিত কবিতা শোনাতে চাইতো। কিন্তু নির্ঝরা বলতো যে:’’আমি কবিতা বুঝি না। গল্প লেখো।” অরুণ গল্প লেখা শুরু করে।

প্রথম তুষার ঝরার দিনে
পার্কে হাঁটতে গিয়ে অরুণ ফল ঋতুর রঙিন মেপল পাতাদের ছবি পাঠিয়েছিল নির্ঝরাকে। তারপর ওরা যে কতশত ছবি বিনিময় করেছে তার ইয়ত্তা নেই। অরুণ নির্ঝরাকে প্রথম চিঠিটি লিখেছিল সে বছরের প্রথম তুষার ঝরার দিনে।

ভ্রমণপিপাসু মন
নির্ঝরা ভ্রমণ ভালোবাসতো; সে বলতো:”ভ্রমণ হলো অক্সিজেন।” আর অরুণ ভালবাসতো তার পড়ার ঘরে টেবিলে বসে পৃষ্ঠার পর পৃষ্ঠা লিখতে। কিন্তু নির্ঝরার ভ্রমণের প্রতি ভালবাসা দেখে অরুণ নির্ঝরার ভ্রমণসঙ্গী হতে চেয়েছিল।

- বিজ্ঞাপন -

রারিতান নদীর পাড়ে
রেড ওক লেন, নির্ঝরা যে বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তো তার একটি বাসস্টপ। অরুণকে ঘুরিয়ে সবকিছু দেখিয়েছিল নির্ঝরা। তাতে ওর কোনো কমতি ছিল না। অরুণের ভাল লেগেছিল যে জায়গাটায় দাঁড়ালে রারিতান নদী দেখা যায়। নির্ঝরা অরুণের যতগুলো ছবি তুলে দিয়েছিল তার মাঝে সে ছবিটি সবচে ভাল এসেছিল।

বটল ওপেনার
নির্ঝরার শহর থেকে অরুণ একটি বটল ওপেনার কিনেছিল। সেটি এখনও ওর চাবির রিংয়ে ঝুলছে।

অরুণের জ্বর
করোনাকালীন সময়ে নির্ঝরার জ্বর হওয়ার অরুণ চিন্তিত ছিল। অরুণ রাতে জেগে থেকে নির্ঝরাকে ঘুম থেকে বারবার জাগিয়ে দিয়েছিল যাতে নির্ঝরা নিয়মিত বিরতিতে ওষুধ খায়। নির্ঝরার সঙ্গে দেখা করে আসার পরে অরুণের জ্বর হল। কিন্তু অরুণকে জাগিয়ে দেয়ার জন্য কেউ ছিল না।

- বিজ্ঞাপন -

অরুণ ও ড্রাইভিং
অরুণ বিদেশে আসার পাঁচ বছর হয়ে গেলেও গাড়ি চালানো শেখেনি। নির্ঝরার এলার্জির অসুখ ছিল। নির্ঝরাকে ওর রুমমেটরা মাঝে মাঝে ইমারজেন্সিতে নিয়ে যেত। এ কথা জেনে অরুণ ড্রাইভিং শেখা শুরু করে।

অরুণের ক্যাকটাস
নির্ঝরার আসার কথা ছিল। তাই অরুণ নির্ঝরার প্লান্টগুলোর মতো দেখতে কিছু গাছ কিনে এনেছিল। নির্ঝরা ওর জীবন থেকে চলে গেছে, কিন্তু অরুণের সে গাছগুলো এবারের শীতে ওকে সঙ্গ দিচ্ছে।


গুগল নিউজে সাময়িকীকে অনুসরণ করুন 👉 গুগল নিউজ গুগল নিউজ

এই নিবন্ধটি শেয়ার করুন
তুহিন দাসের জন্ম ও বেড়ে ওঠা বাংলাদেশের বরিশাল শহরে। শূন্য দশকের প্রথম দিকে লেখালেখি শুরু; তার কয়েকটি কাব্যগ্রন্থ প্রকাশিত হয়েছে। ছোটকাগজ সম্পাদনার সঙ্গে যুক্ত ছিলেন পনের বছর। সৃজনশীল লেখালেখি বিষয়ে করনেগি মেলন বিশ্ববিদ্যালয়ের স্পন্সরশিপ নিয়ে আমেরিকায় যান। বর্তমানে তিনি সেখানে মানবাধিকার নিয়ে কাজ করে এমন একটি সংগঠনে কর্মরত আছেন।
একটি মন্তব্য করুন

প্রবেশ করুন

পাসওয়ার্ড ভুলে গেছেন?

পাসওয়ার্ড ভুলে গেছেন?

আপনার অ্যাকাউন্টের ইমেইল বা ইউজারনেম লিখুন, আমরা আপনাকে পাসওয়ার্ড পুনরায় সেট করার জন্য একটি লিঙ্ক পাঠাব।

আপনার পাসওয়ার্ড পুনরায় সেট করার লিঙ্কটি অবৈধ বা মেয়াদোত্তীর্ণ বলে মনে হচ্ছে।

প্রবেশ করুন

Privacy Policy

Add to Collection

No Collections

Here you'll find all collections you've created before.

লেখা কপি করার অনুমতি নাই, লিংক শেয়ার করুন ইচ্ছে মতো!