সদ্য কম্পোজ করা মিউজিক শোনাবেন স্যার বিঠোফেন— এই সংবাদ প্রকাশের মাত্র কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই বিক্রি হয়ে গেল সমস্ত টিকিট। জমজমাট মঞ্চে তিনি ছড়িয়ে দিলেন এক অদ্ভুত সুর-তরঙ্গ।
নাইনথ সিম্ফোনি। মন্ত্রমুগ্ধ হয়ে গেলেন সবাই। শেষ হয়ে যাবার পরেও যেন রেশ কাটতে চায় না। তাঁরা যেন তখনও ভেসে আছেন এক অনাবিল আনন্দের জোয়ারে। যখন চেতনা ফিরল, সমস্ত বাধা অতিক্রম করে বেশ কিছু শ্রোতা উঠে গেলেন মঞ্চে। তাঁকে ঘিরে ধরে উন্মাদের মতো অভিনন্দন জানাতে লাগলেন তাঁরা। মুখে মুখে রটে গেল, ‘নাইনথ সিম্ফোনির সুরের মাধুর্যে উন্মুক্ত হয়েছে স্বর্গের দরজা।’
অথচ যাঁকে নিয়ে এত কাণ্ড, এত উন্মাদনা, এত হইচই, সেই মিউজিক কম্পোজিটার কিন্তু নির্বিকার। নিশ্চুপ। তাঁর কোনও হেলদোল নেই। আসলে অসামান্য যন্ত্রসংগীত সৃষ্টি করলেও তিনি নিজে কিন্তু শুনতে পাননি এর একটা ঝংকারও। কারণ, যুবক বয়সেই এক মর্মান্তিক দুর্ঘটনায় তিনি বধির হয়ে যান। তার পর থেকে তাঁর হাতে বাদ্যযন্ত্র তুলে দিলেই, তিনি শুধু বাজান। বাজিয়েই যান। নিজে শুনতে পান না কিচ্ছু।
এই কথা শুনে অনেকেই সে দিন আর চোখের জল ধরে রাখতে পারেননি। যিনি এই সুর লহরীর স্রষ্টা, তিনি নিজেই জানতে পারলেন না, তিনি কী সৃষ্টি করে ফেলেছেন! এই শিল্পীর কম্পোজ করা অন্যান্য মিউজিক বাদ দিলেও, শুধুমাত্র ‘নাইনথ সিম্ফোনি’র জন্যই তিনি আজও পৃথিবীর শ্রেষ্ঠতম মিউজিক কম্পোজিটার। বিশ্বে এ রকম আর কোনও শ্রবণশক্তিহীন মানুষের সন্ধান পাওয়া যায়নি, যিনি এমন অসাধ্য সাধন করেছেন। অন্তত যন্ত্রসংগীতে।