মনের জোর বাড়াতে যা করবেন
প্রতিটি দিনের আলোর মতো, প্রতিটি দিনের ছন্দ যেমন বৈচিত্র্যময়, তেমনি প্রতিটি দিনের মনও আলাদা আলাদা। হ্যাঁ আমি আমাদের মনের কথা বলছি। কখনো কি ভেবে দেখেছেন, জীবনটা একেক দিনে একেক রকম হয়। কেন এমনটা হয় বলুন তো? কখনো আমাদের মন হতাশায় ভরে যায়, কখনো আমাদের সারাদিনটা ঘিরে থাকে মন খারাপের বাতাবরণে। আবার কখনো আমাদের মন হয় আনন্দের, অনুপ্রেরণার। অর্থাৎ আমাদের একেকটা দিন একেক রকম, তাই তো? কিন্তু কেন এমনটা হচ্ছে একবারও ভেবে দেখেছেন? আসলে আমাদের দিন কেমন কাটবে, সেটা নির্ভর করছে আমাদের মানসিক অবস্থা এবং মনের জোরের ওপর। আমাদের মনের জোর যত হবে, দিনের ওপরে কিন্তু আমাদের নিয়ন্ত্রণ তত বাড়বে। ভালো থাকতে নিজের জন্য কয়েকটি অভ্যাস অবশ্যই তৈরি করবেন, যা কিনা ম্যাজিকের মতো মনের জোর বাড়াবে।
১. কৃতজ্ঞতাবোধ প্রকাশ করুন
আপনার পরিচিত যে কাউকে যে কোনো কাজের জন্যে কৃতজ্ঞতা জানান এবং সেটা দিনের শুরুতেই। যে মানুষটা আপনার দৈনন্দিন কাজে সহযোগিতা করে তাকে কখনো ধন্যবাদ জানিয়েছেন? আচ্ছা ধন্যবাদ কি কেবল পড়াশোনা জানা শিক্ষিত মানুষেরই প্রাপ্য? যে প্রতিদিন আপনার ঘরটাকে এতো যত্নে সাজিয়ে তুলেছে তাকে একবারও ধন্যবাদ জানাতে ইচ্ছে করে না? কিম্বা আপনার গাড়ির চালক? বা যে মানুষটি প্রতিদিন বাঁশি বাজিয়ে ঘরের সবটুকু নোংরা আপনার ঘরের সামনে থেকে তুলে নিয়ে যায় সে? কিংবা ঘরের রাঁধুনি? কখনো ধন্যবাদ জানিয়েছেন? মনে মনে কৃতজ্ঞ হওয়ার চেয়ে কৃতজ্ঞতাবোধ প্রকাশ করুন মুখে! অন্যকে ধন্যবাদ জানিয়ে, শুভেচ্ছা জানিয়ে দিন শুরু করুন। কৃতজ্ঞতাবোধের অভ্যাস করতে বেশি সময় কিন্তু লাগে না। দুই থেকে তিন মিনিটের মধ্যেই শুরু করা যায় কৃতজ্ঞতাবোধ প্রকাশ।
২. নিজের চেনা পরিবেশ থেকে বাইরে আসুন
প্রতিদিন একই কাজ করতে করতে আমাদের মধ্যে আলস্য ভর করে বা একঘেয়ে লাগে। নিজেই আলস্য কাটানোর উপায় তৈরি করতে পারেন। যেমন যে পথ দিয়ে আমরা প্রতিদিন যাতায়াত করি, সেই একই পথ দিয়ে না গিয়ে যদি একটু রাস্তা বদল করি কিম্বা লিফটের বদলে সিঁড়ি দিয়ে হেঁটে চলার নতুন অভ্যাস করতে পারেন, দেখবেন একঘেয়েমি অনেকটা কেটে যাবে।
৩. নিজেকে একা সময় দিন
দৈনন্দিন জীবনের ব্যস্ততাকে একপাশে রেখে দিনের কোনো একটি সময় নিজেকে সময় দিন। আধ ঘণ্টা সময় কি নিজের জন্যে সত্যিই বের করা যায় না? একা একটু নিজের সঙ্গে নিজে কথা বলা যায় না? নিজের সমস্যাগুলো কী কী, নিজের জন্যে একটা কিছু পরিকল্পনা যা হোক, শুধুমাত্র নিজের জন্যে বা নিজের জীবনকে নিয়ে কোনো কিছু কল্পনা করা। ছুটির সময় টিভির সামনে সময় কম কাটিয়ে বই পড়ুন, কিংবা ছাদের এক কোণে নিজের জন্য একটু সময় দিন। করেই দেখুন না, ভাল লাগবেই লাগবে।
৪. নিজেকে নতুন করে আবিষ্কার করুন
নিজের কাছে নিজেকে কোনো কাজের মধ্যে দিয়ে নতুন রূপে উপস্থাপন করতে হবে। আমাকে পারতেই হবে, পারতেই হবে। বারবার এই শব্দগুলোই বলতে হবে। শুধু নিজেকে একবার নতুন করে আবিষ্কার করতে হবে! হ্যাঁ, আবিস্কার করতে হবে যে আপনি ঠিক কি চাইছেন। জীবনে সফল হয়ে, মাথা উঁচু করে নিজের পায়ে নিজে দাঁড়াতে চাইছেন? নাকি সারাজীবন মানুষের খারাপ কথা শুনে জীবনটাকে পার করে দিতে চাইছেন? আপনি নিশ্চয়ই মনে মনে ভাবছেন, নিজেকে আবিষ্কার করবেন কিভাবে তাই তো? সবার আগে আপনাকে যেটা করতে হবে, প্রথমেই নিজের কাছে নিজেকেই প্রশ্ন করতে হবে কোন কাজগুলি আপনি ভাল করতে পারেন? মানুষের নেগেটিভ আলোচনা শুনে মন মরা হয়ে চুপচাপ ঘরে বসে থাকবেন? নাকি যে বিষয়গুলোতে আপনার আগ্রহ ছিল প্রবল, সেই বিষয়গুলিকে খুঁজে বের করবেন?
নিজেকে নতুন করে আবিষ্কার করতে হবে যেন সমাজে সেই সব মানুষদের দেখিয়ে দিতে পারেন যারা আপনাকে একদিন অসম্মান করেছিলেন। নিজেকে সেভাবেই আবিষ্কার করতে হবে যেন তারাই একদিন আপনার অটোগ্রাফের জন্য অনুনয় বিনয় করে। প্রতিটি মানুষের মধ্যেই কিন্তু কিছু না কিছু প্রতিভা থাকেই, আপনার ভেতরের সেই প্রতিভাকে প্রথমে খুঁজে বের করতে হবে। এটাই হবে প্রথম ও প্রধান কাজ।
নিজেকে যদি নিজেই না চিনতে পারেন, তাহলে পৃথিবীর কারো ক্ষমতা নেই আপনাকে বড়ো করার। তাই সবার আগে নিজেকে ভাল করে চিনতে হবে। ঈশ্বর আমাদের সবার মধ্যেই কোনো না কোনো প্রতিভা দিয়েছেন। শুধু আমাদের কাজ হচ্ছে প্রতিভাগুলোকে খুঁজে বের করা। খুঁজতে গেলে যতোটা সময় লাগে লাগুক! নিজেকে একবার চিনলে আর কিচ্ছু লাগবে না, পেছন ফিরে তাকানোর দিন শেষ। তাই প্রতিনিয়ত নিজেকে আবিষ্কার করতে হবে। ঠিক কোন বিষয়ের উপর আপনার আগ্রহ, ঠিক কোন বিষয়গুলি নিয়ে কাজ করতে আপনার ভাল লাগে, আপনি কি করতে চান, কেন করতে চান, কিভাবে করতে চান।
এই সব প্রশ্নের উত্তর যখন আপনি ব্যাখ্যা সহকারে করতে পারবেন, ঠিক ওই দিনই বুঝতে পারবেন যে আপনি ঠিক ঠিক পথে এগিয়ে যাচ্ছেন। অর্থাৎ নিজেকে নতুনভাবে আবিষ্কার করতে পেরেছেন মানে ঈশ্বরের দেওয়া প্রতিভাকে খুঁজে বের করতে সক্ষম হয়েছেন। তো যারা এখনো এভাবে ভাবতে পারেননি, তারা সবার প্রথমে আজ থেকেই নিজেকে খোঁজা শুরু করুন, যতদিন না পর্যন্ত নিজেকে খুঁজে পাচ্ছেন। হঠাৎ দেখবেন একদিন আপনি নিজেকে আবিষ্কার করতে পেরেছেন এবং সেইদিন এক চিলতে হাসির আলোতে নিজের মনটা কেমন আলোকিত হয়ে উঠেছে।
৫. নিজের দক্ষতা বাড়ান
ভালো প্রযুক্তি ব্যবহার জানেন, কিংবা অন্য কোনো কাজে দারুণ দক্ষ আপনি? এ সমস্ত কিছুকে ভাল কাজে লাগান। ছুটির সময় নিজের দুর্বলতা আর শক্তিগুলো একটি কাগজে লিখে আগামী ছয় মাস কীভাবে নিজেকে পালটাবেন তা নির্ধারণ করুন।
৬. সমস্যাকে সুযোগ হিসেবে তৈরি করুন
সময় মতো কোথাও পৌঁছতে পারেন কি? অফিসেও সময় মতো পৌঁছতে পারেন না, তাই তো? তার মানে নিশ্চয়ই ঘুম থেকে দেরিতে ওঠেন। তাই জন্যেই দেরি হয়, আবার দেরি করে অফিসে গেলে কাজের চাপ, মনের চাপও বেশি থাকে। তাই উচিত অফিসে প্রতিদিন নির্ধারিত সময়ের বেশ কিছুটা আগে আসা, এই বাড়তি সময়ে বই পড়ুন, পত্রিকা পড়ুন, সারা দিন কী কাজ করবেন, তা ঠিক করে নিন। এভাবে সমস্যা থেকে সুযোগ তৈরি করুন। ছুটির সময় প্রতিদিন ভোরে ঘুম ভাঙার অভ্যাস করুন। দেখবেন এতে শরীর আর মন দুইই ভাল থাকবে।
(চলবে)