নাটোরের অনেক রেমিট্যান্সযোদ্ধারা করোনার শুরুতে দেশে এসে আটকা পড়ে প্রবাসে ফিরতে না পারায়, চরম বিপাকে পড়েছেন। জেলায় প্রবাসী কল্যান মন্ত্রণালয়ের অধীনে কোন সরকারী অফিস না থাকায়, সব ধরনের সেবা বঞ্চিত তারা।এমনকি টিকা নিতেও পড়তে হচ্ছে ভোগান্তিতে। জেলা স্বাস্থ্য বিভাগের দাবি সিনোফার্মের টিকা নিতে বিড়ম্বনায় পড়তে হচ্ছে না।
ক্ষতিগ্রস্ত রেমিট্যান্স যোদ্ধাদের সহায়তায়, প্রবাসী কল্যান মন্ত্রনালয় কাজ করলেও নাটোর জেলায় নেই কোন কার্যক্রম। প্রবাসীদের কল্যানে জেলায় সব সুবিধা চালুর দাবি সুশীল সমাজের। তবে রেমিট্যান্স যোদ্ধাদের পাশে থেকে, সব রকমের সহযোগিতা করার কথা জানিয়েছে স্থানীয় প্রশাসন।
নাটোর সদর উপজেলার বড়হরিশপুর ইউনিয়নের করোটা গ্রামের মালদ্বীপ প্রবাসী রানা আহমেদ , ১২ বছর প্রবাসে কঠোর পরিশ্রমের আয় দিয়ে নিজের বাড়ি, ‘ড্রিম হাউজ মালদ্বীপ’এর কাজ শুরু করেছিলেন। গেল বছরের শুরুর দিকে তিনি দেশে আসার পর, করোনা পরিস্থিতির কারনে আর ফিরতে পারেননি কর্মস্থলে।
বর্তমানে বেকার তিনি, আর স্বপ্নের সেই বাড়ির কাজও হয়নি সম্পন্ন। রানা আহামেদ সাময়িকীকে জানান, ‘প্রায় ১৩ মাস হচ্ছে আমি দেশে এসেছি কিন্তু করোনার কারণে আর যাওয়া হচ্ছে না। মালদ্বীপে আমি যে কোম্পানিতে কাজ করি সেখানে ফোনে যোগাযোগ করলে তারা বলে করোনা শিথিল হলে তোকে নিয়ে আসব।
তোদের দেশের মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে যোগাযোগ কর।এখন কবে করোনা শিথিল হবে আর মন্ত্রণালয় কিভাবে কার সঙ্গে কি যোগাযোগ করবো বুঝতে পারছিনা।’ রানার মতন নাটোরের অনেক রেমিট্যান্স যোদ্ধার অবস্থাই এখন এমন।
কারও কারও ভিসার মেয়াদ শেষের দিকে, প্রবাসে নিজ কর্মস্থলে ফিরতে পারবেন কিনা, তা নিয়ে আছেন চরম শঙ্কায়। নাটোর সদর উপজেলার দিঘাপতিয়া ইউনিয়নের শিবদূর গ্রামের প্রবাসী মিলন হোসেন সাময়িকীকে জানান, ‘২ বছর মেয়াদের ভিসায় ৪ লক্ষ টাকা ব্যয় করে মালয়েশিয়া গিয়েছিলাম।
গত বছরে করোনাকালীন সময়ে দেশে এসে ভিসা জটিলতার কারণে আর যাতে পারিনি। প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়সহ বিভিন্ন স্থানে যোগাযোগ করেও এই জটিলতার সমাধান হয়নি। যে টাকা ব্যয় করে গিয়েছিলাম সে টাকাও দেশে ফিরিয়ে আনতে পারিনি।
বর্তমানে বেকার অবস্থায় থাকার কারণে দেনার দায়ে জড়িয়ে পড়ছি। নাটোরে প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংকের সঙ্গে ঋণের জন্য যোগাযোগ করা হলে তারা জমির দলিলপত্র চায়। আমার যদি জমি থাকতো তাহলে তো আমি ঋণ করে বিদেশে যেতাম?’
নাটোর সদর উপজেলার দিঘাপতিয়া ইউনিয়নের দিয়ারপাড়া গ্রামের মালয়েশিয়া প্রবাসী আব্দুল আওয়াল, মালয়েশিয়া থেকে এক মাসের ছুটিতে এসেছিলেন করোনার আগে। তিনি সাময়িকীকে জানান, ‘করোনার কারণে ভিসার মেয়াদ শেষ হয়ে গেছে। এখন ভিসা জটিলতার কারণে আর মালয়েশিয়া যেতে পারছিনা। বর্তমানে বেকার জীবন যাপন করছি।’
নাটোর সদর উপজেলার হালশা ইউনিয়নের বাগরুম গ্রামের সিঙ্গাপুর প্রবাসী সোহেল সাময়িকীকে জানান, তিন মাসের ছুটিতে দেশে এসে ১৪ দিন কোয়ারেন্টাইনেই কেটে গেছে। সিঙ্গাপুরের জন্য মর্ডানা বা ফাইজার টিকা প্রয়োজন।সুরক্ষা অ্যাপ’এর মাধ্যমে ঘরে বসেই টিকার নিবন্ধন পেয়েছি।
ঠিকানা দেওয়া হয়েছে নাটোর সদর হাসপাতাল। কিন্তু সদর হাসপাতাল থেকে আমাকে টিকা দেওয়া হয়নি।পরামর্শ দেওয়া হয়েছে ঢাকা অথবা রাজশাহী যাওয়ার জন্য। রাজশাহীতে গেলে নাটোর জেলা সিভিল সার্জনের প্রত্যয়নপত্র চায়।টিকার প্রথম ডোজ নেওয়া হয়নি।
দ্বিতীয় ডোজ একমাস পরে দেওয়া হবে।ছুটির সময় সীমা পেরিয়ে গেলে ফিরতেও সমস্যা হতে পারে।করোনাকালীন এই সময়ে সব ধরনের যানবাহন বন্ধ থাকায় যাতায়াতে ও টিকা নিতে ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে।নিজ জেলায় টিকা দেওয়া হলে এই ভোগান্তিতে পড়তে হতো না। আর তাই নিজ জেলায় টিকা দেওয়ার পাওয়ার দাবি জানান তিনি।
সুশীল সমাজের নাগরিক গণমাধ্যম কর্মী ইসাহাক আলী সাময়িকীকে জানান, নাটোরে যেহেতু ব্যাপক পরিমাণ লোকজন দেশের বাহিরে থাকেন।জেলায় সরকারি ভাবে তাদের সঠিক কোন পরিসংখ্যান পাওয়া যায়না।
নাটোরের অর্থনীতিতে প্রবাসীদের যে অবদান তা অনস্বীকার্য। নাটোরের সেই সকল প্রবাসীদের জন্য নাটোরে প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়’এর কার্যালয় থাকা প্রয়োজন।তাহলে নাটোরের প্রবাসীরা কোন জটিলতায় পড়বেন না বলে মনে করেন তিনি।
জেলা সিভিল সার্জন অফিসের মেডিকেল অফিসার ডা. রাসেল সাময়িকীকে জানান, নাটোর টিকাদান কেন্দ্রে শুধু সিনোফার্মের টিকা প্রদান করা হচ্ছে। কোন প্রবাসী সিনোফার্মের টিকা নিতে চাইলে, অগ্রাধিকার ভিত্তিতে তা দেওয়া হচ্ছে বলে তিনি জানালেন।
এব্যপারে জেলা প্রশাসক শামীম আহমেদ সাময়িকীকে জানান, রেমিটেন্স যোদ্ধারা আমাদের দেশের প্রাণ। যেহেতু দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে তাদের অবদান রয়েছে, সেহেতু এই সমস্ত রেমিটেন্স যোদ্ধাদের জন্য সার্বিক সহযোগিতা দেওয়া হবে।
নাটোরে প্রবাসী কল্যান মন্ত্রনালয়ের কার্যক্রম না থাকায়, বিড়ম্বনার শিকার হতে হচ্ছে সকল প্রবাসীদের। রেমিট্যান্স যোদ্ধাদের কল্যানে জেলায় সব ধরনের সুযোগ সুবিধার চালুর পাশাপাশি ক্ষতিগ্রস্ত প্রবাসীদের আর্থিক সহায়তা দেওয়ার দাবি প্রবাসীসহ সচেতন মহলের।