মিনি কক্সবাজার খ্যাত নাটোরের হালতিবিলে বর্ষা মৌসুমে ভ্রমণপিপাসুদের পদচারণায় মুখরিত থাকতো। নাটোরসহ বিভিন্ন জেলার মানুষ এখানে ভিড় জমাতো। ইঞ্জিন চালিত নৌকা চালিয়ে অনেকেই জীবিকা নির্বাহ করতো। ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের ব্যবসা চলত জমজমাট।
তবে করোনাকালীন সময়ে গত বছর বর্ষা এবং চলতি বছরের বর্ষা মৌসুমে সেইসব কর্মজীবীরা কর্মহীন হয়ে পড়েছেন। প্রতিবছরের ন্যায় প্রকৃতি তার আপন রূপ আর সৌন্দর্য মেলে ধরেছে এবারের বর্ষাতেও, তবে পর্যটকশূন্য সেই পর্যটন কেন্দ্র।
দুই-একজন ভ্রমণপিপাসুরা এই পর্যটন কেন্দ্রে পৌঁছলেও আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কাছে জবাবদিহিতা মুখে পড়ছে এবং সেখানে অবস্থান করতে দেওয়া হচ্ছে না।আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে প্রতিনিয়তই টহলে দেখা যায়।
নাটোর শহর থেকে প্রায় ১২ কিলোমিটার উত্তর-পশ্চিমে হালতি বিলের অবস্থান। প্রায় ৪০ হাজার একর জায়গা জুড়ে বিস্তৃত এক জলাশয়। বাংলাদেশের অন্যতম বৃহত্তম বিল এটি। নাটোর, নওগাঁ ও রাজশাহী জেলার বিস্তৃত অংশ জুড়ে রয়েছে এই জলাভূমি।
এই বিল বছরের ৬ মাস পানিতে পূর্ণ আর বাকি ৬ মাস থাকে শুকনো। বর্ষায় কানায় কানায় পূর্ণ থাকে পানিতে, তখন এটি মাছের অভয়ারণ্যে রূপান্তরিত হয়। আর শুকনো মৌসুমে পুরো বিল জুড়ে চলে ফসলের চাষ। তবে বর্ষাকালই হালতিবিল ভ্রমণের উপযুক্ত সময়।
যেদিকে চোখ যায়, সেদিকে অথই জলরাশি। ঢেউ আর ঢেউ। সেই ঢেউ ভেঙে ছুটে চলে শ্যালো ইঞ্জিনচালিত অসংখ্য নৌকা। মাঝেমধ্যে দিগন্তরেখায় সবুজের কারুকাজ। সবুজ গাছপালায় ঘেরা একেকটি গ্রাম। প্রতিটি গ্রামের ওপারে আবার দিগন্তজোড়া জলরাশি।
হালতিবিলের ভিতর মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে আছে পাঁচটি দ্বীপ খোলাবাড়িয়া, দিঘীরপাড়, একডালা, কুচকুড়ি, নুরিয়াগাছা। যেন সাগরের বুকে একগুচ্ছ দ্বীপ। অনেকের মতে এই পাঁচটি দ্বীপে বসবাস করেন প্রায় অর্ধ লক্ষাধিক মানুষ।
দ্বীপগুলোর কয়েক হাজার মানুষ খরা মৌসুমে কৃষি জমির কাজ আর পর্যটন কেন্দ্রকে ঘিরে বর্ষা মৌসুমে তৈরি হয়েছিলো তাদের কর্মসংস্থান। দ্বীপের অধিবাসিরা অনেকেই এখন বেকার জীবন যাপন করছেন।আর অনেকে মৎস্য শিকার করে জীবিকা নির্বাহ করছেন।
বৈশ্বিক মহামারী করোনা একদিন আমাদের মাঝ থেকে বিদায় নেবে, আজকের কর্মহীন অসহায় মানুষগুলো ফিরে পাবে তাদের কর্মজীবন। এমন বর্ষা মৌসুমে পর্যটকের ভিড়ে আবারও মুখরিত হবে মিনি কক্সবাজার খ্যাত হালতিবিল, এমন প্রত্যাশা সকলের।