উপপাদ্য
মাথার উপর থেকে উড়ে চলা মেঘের কোলাজে
যে ব্যথা মিশে রয়েছে
তাকে যদি অন্তরা বলি
তুমি কি অভিমান নিয়ে নদী হয়ে যাবে
না অনতিদূরে ঘুম ভাঙা সন্ধ্যাতারার মতো শিশুতোষ
এখন কোন রতিরাগ নয় এসো নেমে যাই
ঘাসের উপর অনাবিল
কেউ মাড়িয়ে দিলেও জেগে উঠবো অন্তর্লীন স্রোতে
কেবল বাঁদিকের পাঁজরের নিচে তার রূপকথা
নীল জ্যোৎস্না হয়ে ছড়িয়ে পড়লে
লিখে রাখবো সমূহ রাত্রি বিলাস
শুধু জেনো ভেসে চলা মেঘেদের কাছে এই বারতাটুকু
সময়ের ক্ষতের মতো কোন উপপাদ্য তৈরি করে না
পুনর্জন্ম
দুহাত ভরে দোয়া নিয়ে মা কিংবা আত্মজন
যখন সামনে এসে দাঁড়ায়
আমার পাঁজরের রিডে ধ্বনিত হয়
নির্মল আকাশের মগ্ন উচ্চারণ, বৃষ্টির সরগম
অনিকেত স্বপ্নের ওপারে কে যেন
ডাক দিয়ে বলে ওঠে নবুয়তের অতন্দ্র আয়াতশরীফ
উষ্ণীষ নামিয়ে রাখি। নত হয়ে আসে পাষাণী শাসন
নিভৃতে যে মেঘধ্বনি ছুঁয়েছিল নৈঋত কোণ
তার ভেতরে এখন আব-ই-জমজম,
মৃদু হাওয়া দক্ষিণ ভাঙলে পড়শির দরজায়
অতল জ্যোৎস্না বিনম্র অক্ষরের মতো
সুচারু বিন্যাসে ঐশী লাভ করে
পুনর্জন্ম হয়ে যায় মুহূর্তের, জলজ রাত্রির
পথ
মাঝরাতে যে পথগুলো ধীরে ধীরে আমার অস্তিত্বে
টোকা মেরে ছড়িয়ে পড়ে
তাদের জন্য কোন গন্তব্য রাখিনি
ভাসানের মতো সঁপে দিয়েছি দরিয়া ঝড়ে
দরিয়া কতদূর চেনা হয়নি আজো
শুধু মাস্তুল থেকে জেনে নিয়েছি তার অনিঃশেষ যাত্রাপথ
যে পথে লীন হয়ে গেছে সভ্যতার কনসার্ট
তবে কি আমিও এ পথের অংশ হয়ে যাব
ভাবতে ভাবতে ফিরে যাচ্ছি উৎসের দিকে
কত দূর যেতে হবে জানিনা !
কেবল পথ সমর্পিত হলে বুঝতে পারি
অনেকগুলো রেখা এসে নীরবে মিশে যায়
উপনিষদের পাতায়
পিথাগোরাসের গাণিতিক আঁকে
বৃষ্টির ভেতর যে যে অন্ধকার মনমরা হয়ে
জেগে থাকে
আমি তাদের নিয়ে উৎসবে যাই, পাশে
পড়ে থাকে অনিকেত অক্ষর সকল
শুধু বৃক্ষের নিচে চঞ্চল হয়ে পড়া ছায়াবৃত দৃশ্যগুলো লোকায়ত মাধুরী নিয়ে
পার হয়ে যায় বাতানুকূল সাজঘর
হেসে ওঠে নীলাভ আবেশ; ডাইনিং টেবিল!
অনায়াস প্রান্ত বদল করে নেয় কাঁটাচামচ
সদ্য হৃদয় পোড়ানো যুবকের হাতও থমকে থাকে
মেহেনদি মাখা সলাজ মুঠোয়!
কেবল মৃদু আলোয় ভেসে থাকে মায়াবী রাত
অথচ বর্ষা বিমনা হলে পিথাগোরাসের গাণিতিক আঁকে
মূর্ত হয়ে ওঠে মহাভারতের ঐশ্বর্য পর্ব আর
সাদা পাতায় লিপিবদ্ধ হয় বৃষ্টিভেজা নভেল
প্রয়াণদিবস
ঈশ্বর হেসে উঠলো অন্তরালে! চকিত হাত থেকে
ছলকে পড়ল জলজ অহংকার
আর সমস্ত আলো ছাপিয়ে উঠে আসা অন্ধকারে
ভেসে থাকল একটি নিবিড় মুখ,জোনাকময়
দৃষ্টির বিহ্বলতা জুড়ে শুধু অশ্রুহীন বেদনাবিষাদ
এখন কোন মন্ত্রপাঠ নয়,বরং শোকহীন আলোয়
মেখে নিতে দাও অঙ্গার
যাতে বিনম্র অধিকারে জেনে নিতে পারি
পিতৃহত্যার যথার্থতা
সোচ্চারে না হোক, অন্তত: অনূঢ়া স্বরে বলতে পারি
নির্লজ্জ সেই রাষ্ট্র প্রধানের কথা
যে কিনা আকাশ কিনতে গিয়ে বিকিয়ে দেয় দেশজ কৌমার্য
আর রাত্রিকালীন কারফিউ শিথিল হলে
এলোমেলো পড়ে থাকে অজৈব লালাস্রোতে
এখন পরম্পরা দূরে থাক,এসো লিখে রাখি সীমাহীন বিশুদ্ধতা,
মায়ের অশ্রুভেজা একাকিত্ব,
যার ছোঁয়ায় প্রিয় নারকেল গাছের পাতাগুলোও
কেমন আকুল হয়ে ফিরে যেতে চায় মেঘেদের দেশে
আর অক্ষরের নীরবতা নিয়ে জলজ ধ্বনির মতো বিবৃত হতে থাকে পিতার হত্যাদিবসের সফেদ সংবাদ
পরিতাপহীন
তীব্র অভিমুখে সহজপাঠ লিখে রাখে যে মেঘের দল
চলো তার কাছে যাই
এখন খরস্রোতা নদীর বুকে কোন উষ্ণতা নেই
কেমন এক মেঠোগন্ধে ডুবে রয়েছে বাঙালি পটসমুদ্র
বাতাসও উচ্চারণহীন,সেঁকো বিষের মতো তরল হৃদয়।
পাখির আবিলতা নিয়ে যে সকাল শুরু হয়ে যেত
তার আবেশে অন্তর্লীন শাণিত ক্রুরতা
সন্ধ্যা গভীরতা পেলে বাচনিক আস্বাদে জাগে মজলিস
অথচ ভেতরে যেটুকু স্নিগ্ধ আলো চেতনাঋদ্ধ করে
তার কাছে নতজানু হওয়া ছাড়া কোন দস্তুর নেই!
ধুলোময় সেই অদৃশ্য আহ্বান থেকে ক্রমাগত তাই
ফিরে ফিরে আসি জোনাকির দেশে,আর
অপটু বারবেলা পীড়িত সনদ আনবে জেনেও
পরিতাপহীন একাকি হেঁটে চলে যেতে হয় আবহমান