- …অ্যাই, ঝাঁপ তোল, ঝাঁপ তোল শালা।
দোকানদার কাঁপছে।
খলপাঘেরা চায়ের দোকান। ভেতরে আমরা তিনজন খদ্দের।বউ বলেছিল- চায়ের দোকানে আড্ডা মারবে না।
গঙ্গার হাওয়ায় মন মানেনি। সেঁধিয়ে গেছি। এখন বিপত্তি।নিজেরাই ঝাঁপ তুলে হুড়মুড়িয়ে ঢুকলো দুজন পুলিশ। তাদের পাশ কাটিয়ে গুলতির মত ছুটে বেরিয়ে গেল হেল্পার ছেলেটা। পাশে দাঁড়ানো ভদ্রলোকের ধূতির সামনের দিকটা ছলছলে। অন্যজন বাঁধানো- দাঁত হাতে নিয়েছেন। পুলিশ দুটো আমার সামনে- অনটাইমে দোকান খুলেছিস?
হতবাক আমি দেখলাম চেয়ারে বসে মৌজ করে চা খাচ্ছে দোকানদার।অন্যরা তাকে অনুকরণ করছে।মনে পড়ল বউয়ের কথা। ভিকিরিটাইপের চেহারা।
পুলিশের হাতে লাঠি নাচছে। দেবে তো দু-ঘা,দিকগে। বললাম, আর খুলব না মাই-বাপ! দুই দুগুনে চার বাড়ি ।পাছাতে।হাত বুলিয়ে বললাম- আমার চা স্যার খুব ভালো একটু টেস করি দ্যাখেন।
-কই দে, দেখি তোর চা।
অন্য জন বলল-বিস্কুটও দিস।
-কি বিসকুট খাবেন সার, নোনতা?
-নোনতা মিঠা যা আছে সব দে।
দিলাম।
ওদের খাওয়া দেখে মনে হচ্ছিল,এটা মদগাঁজার দোকান হলে এ ব্যাটারা তাও খেত।
হঠাৎ দোকানদার ছুটে এসে কলার ধরে ফেলেছে একজনের, শালোরা ঘুষ খাওয়ার জন্যি দাদাগিরি।
আমি যত বলি ছাড়ো-ছাড়ো, দোকানদার তত গলার জোর বাড়ায়। বুঝলাম, সেও গঙ্গা পাড়ের দোকানদার।লকডাউনে দোকান খোলার মত বুকের পাটা যেমন রাখে ঘুষখোর পুলিশকে দাবড়ানোর হিম্মত তেমন রাখে।
পুলিশ দুটোর তখন নাকে-মুখে চা-বিস্কুট।অন্য দুজন নিরীহ খদ্দের তখন বাঘের মত হুঙ্কার ছাড়ছেন।
ধূতিবাবু কোঁচা নাচিয়ে হাম্বিতম্বি করছেন-হিউম্যান রাইটস অব্দি তাঁর চেনাজানা। এর শেষ দেখে ছাড়বেন।
অন্যজনও তড়পাচ্ছেন অশ্রাব্য ভাষায়।
আমার আবার কাঁপুনি শুরু হয়ে গেল।প্রেশার-হার্টবিট পরস্পরকে পাল্লা দিচ্ছে মনে হয়। ভোরে দেখা স্বপ্নটাই বুঝি সত্যি হতে চলেছে।
সবাই স্বপ্ন দ্যাখে রাজা হয়েছে। এপাশে-ওপাশে অপ্সরা-কিন্নরী। আমার স্বপ্নে কুমির। কাঁদছে।
মরলে কুমির কাঁদবে। মানুষকে কাঁদানোর মত কী কাজ করলাম জীবনে।
পরিস্থিতি বদলে দিল হেল্পার ছেলেটি। সে খবর দিল-
গঙ্গার জলে লাশ ভাসছে।
মুহূর্তেই পরিবেশ বদলে গেল। সবাই ছুটলাম পড়িমরি।ব্রিজ থেকে সবাই দেখছে ঢেউয়ে ভাসতে থাকা লাশ।কেউ বলছে করোনা, কেউ বলছে নাইজেরিয়া।
আমি দেখলাম জলে ভাসছে আমার মাতৃভূমি।
অনুগল্প: কান্না
এই নিবন্ধটি শেয়ার করুন
একটি মন্তব্য করুন
একটি মন্তব্য করুন