নোবেল প্রাইজ পেয়েছেন এমন লেখক আর আছেন কি না বলা মুশকিল, যাঁর পদবি নিয়ে এ রকম এক কৌতুকময় বেদনা জড়িয়ে আছে। নাট (কনুট) হ্যামসূনের পদবিটাকে ‘হ্যামসূন’ না বলে ‘পেডারসেন’ বলাই ঠিক। কারণ নাট হ্যামসূন নামে গোটা পৃথিবীর কাছে তিনি পরিচিত হলেও, তাঁর আসল পদবি কিন্তু হ্যামসূন নয়, পেডারসেন। পুরুষাণুক্রমে চলে আসা এই পেডারসেন পদবিটা কী করে যে হ্যামসূন হয়ে গেল সেটাই কৌতুকের, আবার বেদনারও।
নরওয়ের এক পুরনো কৃষক পরিবারে নাট জন্মগ্রহণ করেন। খুব অল্প বয়সেই বাবাকে হারিয়ে কাকার কাছে গিয়েছিলেন মানুষ হতে। কাকা ছিলেন ভীষণ গরিব। নিজেরই সংসার চলত না। কোনও রকমে খেটেখাওয়া এই কাকা নাট-কে পাঠিয়ে দিয়েছিলেন এক মুচির কাছে। যাতে মুচির কাজ শিখে বাকি জীবনটা খেয়েপড়ে কোনও রকমে কাটিয়ে দিতে পারে তাঁর ভাইপো।
সেই মুচির কাছে থাকার জায়গা হিসেবে পাওয়া গেল খামারের একটা কোণ। কারও কাছে নাট কখনও ভালবাসা পাননি। তাই যেখানে তিনি রাত কাটাতেন, মাত্র কয়েক দিনেই সেটাকে খুব ভালবেসে ফেললেন তিনি। তখন ওই খামার ছাড়া তাঁর কাছে আর কেউই অতটা আপন নয়। কেউ তাঁকে কখনও কিছু দেয়নি। না বাবা-মা, না কাকা-কাকি, না অন্য কোনও আত্মীয়-স্বজন। অথচ এই খামারটি তাঁকে অনেক কিছু দেয়। দেয় নিশ্চিন্ত ঘুম। দেয় দু’চোখ ভরা স্বপ্ন। উপহার দেয় প্রত্যেক দিন নতুন একটা সকাল।
খামারটার নাম ছিল- হ্যামসূন। তাই বংশগত পদবিটাকে বাদ দিয়ে তার জায়গায় নিজের নামের পাশে তিনি বসিয়ে দিলেন খামারটার নাম। তখন কেউ তাঁর নাম জিজ্ঞেস করলেই তিনি বলতেন, আমার নাম— নাট হ্যামসূন।
এ ভাবেই শুরু। সে সময় সবাই এটাকে কিশোর বালকের খেয়ালখুশি মনে করে তেমন কোনও গুরুত্ব দেননি। আর তিনিও কারও কাছে কোনও বাধা না পেয়ে ওই নাম আর ওই পদবিতেই পরিচিত হয়েছেন সবার কাছে।
তিনি যা লেখাজোখা করতেন, বিভিন্ন পত্র-পত্রিকায় যেগুলো পাঠাতেন, সেই লেখাগুলোতেই লেখকের নাম হিসেবে ব্যবহার করতেন ওই— নাট হ্যামসূন। ফলে পরবর্তিকালে ওই খামারের নামটাই তাঁর পদবি হয়ে দাঁড়াল। নাট পেডারসেনকে যে দু’-চার জন চিনতেন, তাঁদের কাছেও ফিকে হয়ে এল সেই নাম। আর আস্তে আস্তে স্পষ্ট হয়ে উঠল নতুন ভাবে গড়ে ওঠা নতুন নাম- নাট হ্যামসূন। উনিশশো কুড়ি সালে নরওয়ে থেকে সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার পাওয়া নাট হ্যামসূন।