-সচীন তেন্ডুলকর ভারতরত্ন পাচ্ছে।
-নোব্ল নয় তো?
-বিদ্রূপ হচ্ছে? খেলায় নোব্ল থাকলে লোকটা তাও পেত।
-তাই? কার্ল লুইস, সেরগেই বুবকা, পেলে, মারাদোনা, মার্টিনা, বর্গ,…উদাহরণ অজস্র দেওয়া যায়-এরা নয় কেন?
-সবাই একই বছরে নোব্ল পায় নাকি?
-খেলা নয়, বল ক্রিকেটে নোব্ল থাকলে সচীন পেত।
-একটা খবর সহজভাবে নাওনা! ডিসগাস্টিং!
-না ভাবছি, লিয়েন্ডার পেজ, যে দেশের কাছে এক পয়সা সাহায্য না পেয়ে নিজের জেদে আর বাপের অদম্য সাহসে ভর করে বিদেশে গিয়ে ট্রেনিং নিয়ে ডেভিসকাপে, এশিয়াডে, অলিম্পিকে বারবার দেশকে সম্মান এনে দিয়েছে বা মহেশ ভূপতি সেও যা করেছে নিজের জোরে, এরা কেন নয়।–এক হাতে চায়ের কাপ আর এক হাতে খুন্তি নাড়তে নাড়তে অনন্যা বলল।
-লিয়েন্ডারের ডাবল্সে যাই হোক, সিঙ্গল্সে ওয়ার্লড র্যাঙ্কিং কত, আর সচীনের ব্যাট্সম্যান হিসাবে ওয়ার্লড র্যাঙ্কিং কত? একটা বাঁকা মন্তব্য ছুঁড়লেই হল না?-বিরক্তিভরে চায়ের কাপ নামিয়ে বলল স্বাগত।–তাছাড়া সচীন কি দেশকে সম্মান এনে দেয়নি?
-ওর ম্যাচ উইনিং পারফরমেন্স আর বিশ্বের অন্যান্য ব্যাটস্ম্যানদের, এমনকি অবসর নিতে বাধ্য করা সৌরভের ম্যাচ জেতানোর ক্ষমতাটা তুলনা কর। সচীন সেঞ্চুরি করেছে ও ভারত জিতেছে, আর সচীন দারুন স্কোর করেছে আর ভারত হেরেছে এই দুটোর সংখ্যা তুলনা কর। অন্যদিকে রাহুল, সৌরভ, যুবরাজ, কুম্বলে- বাদ দাও। হ্যাঁ, ব্যক্তিগত রেকর্ডে ধারে কাছে কাউকে পাব না মানছি। বড় ব্যাটস্ম্যান তো নিঃসন্দেহে। কিন্তু এপর্যন্ত ক্রিকেট খেলে সাকুল্যে গোটা পনেরো দেশ। টেস্ট-প্লেইং কান্ট্রি আরও কম। আর টেনিস খেলে কটা দেশ? তবু ক্রিকেটের জন্য পয়সাওয়ালা বোর্ড আছে, স্পনসর আছে, মিডিয়ার মাতামাতি আছে, তার ওপরেও সরকারি দাক্ষিণ্য! অন্যদিকে পৃথিবীতে হকি খেলে দেড়শোর বেশি দেশ। তার মাঝেও ভারতের স্থান প্রথম পাঁচ-ছয়ের মধ্যে। অ্যাস্টোটার্ফ প্রায় নেই, ইন্ট্যারন্যাশনাল স্ট্যান্ডার্ডের হকি স্টেডিয়াম হাতে গোনা। পাকিস্তানেও এর চেয়ে বেশি আছে। ঘাসের মাঠে একভাবে হকি খেলে প্র্যাকটিস্ করে আর আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলে সিন্থেটিক ট্র্যাকে, যেখানে স্টিক-ওয়ার্কের চেয়ে স্পীডের গুরুত্ব বেশি। তারপরেও ধনরাজ, শাহিদ, ইকবাল, পারগতরা দেশকে চ্যাম্পিয়ন করেছে। মেয়ে হকি প্লেয়ারদের তো কেউ নামই জানে না। সেখানেও যত্ন নিলে কত ভালো ফল হয়। সে বেলা ভোঁ-ভাঁ। স্পনসর তো জোটেই না, সরকারি অনুদানও কহতব্য না।
-ও! তোমার আসল আফসোস হকির জন্য। টেনিস দিয়ে গৌরচন্দ্রিকা করছিলে। তা তো হবেই। নিজে স্টেট খেলেছ। হকির সৌজন্যেই চাকরি। সেটা কি সরকারি পেট্রোনেজ নয়? সচীন ভারতরত্ন পাচ্ছে বলে এত জ্বলুনি কেন? আর হকি-প্লেয়ার, অ্যাথলিট, বক্সার, শ্যুটাররা অর্জুন পুরস্কার পায় না?
-অর্জুন ঠিক আছে, কিন্তু ভারতরত্ন বাড়াবাড়ি নয়? আচ্ছা হকি বাদ দিচ্ছি; বিশ্বনাথন আনন্দ কি প্লেয়ার হিসাবে আরও গ্রেট নয়? র্যাপিড চেসে আনপ্যারালাল, দীর্ঘদিন ওয়ার্লড নাম্বার ওয়ান। ভারতরত্ন দিতে হলে তো তার নাম আগে ওঠা উচিৎ। তার প্রতিদ্বন্দী কিন্তু বিশ্বে হাজার হাজার।
-তাই তো! তোমার সাথে পরামর্শ করা উচিৎ ছিল। চেসের কি টেলিকাস্ট হয়? হলেও গালে হাত দিয়ে চোখ নামিয়ে বসে থাকা মুখগুলো দেখে খেলা দেখার উত্তেজনা কতটা পাওয়া যায়? সারা দেশ যার জন্য মাতোয়ারা–পাবলিক্লি বোলো না। গণধোলাই খাবে।
-চেসের টেলিকাস্ট এক্সাইটং না হোক, হকিরটা কি নয়?
-আবার হকি?
-আমাদের জাতীয় খেলা আফটারঅল। আমাদের বাচ্চাগুলো গাছের ডাল ভেঙেও স্টিকে জাদু দেখাতে পারে।
-ধনরাজ পুরস্কার পেলে বোধহয় জাস্টিস হোত, তাই না? এই খবরটায় সারা দেশ খুশি, তুমি ছাড়া।
-আমি একা নই হলফ করে বলতে পারি। অন্যান্য খেলায় যারা নিজেদের নিঙড়ে দিচ্ছে, বদলে পাচ্ছে না প্রায় কিছুই তাদের জিজ্ঞাসা কর।
-আমার কাছে তাদের নাম্বার নেই। তারা আমায় ইন্টারভিউও দেবে না। তুমি ট্রাই করে দেখতে পারো। প্রাক্তন মহিলা হকি-প্লেয়ার বলে কথা। আমিও তো স্কুলে ভলিবল খেলেছি। হকি টিমেও ছিলাম। সেভাবে খেলিনি, তবু তোমার লেভেলের চারটে ফিমেল প্লেয়ারকে আমি একাই ট্যাকেল করতে পারতাম। আমার তো এমন রিঅ্যাকশন হচ্ছে না। ক্রিকেটকে কিসের হিংসা তোমার?
-সেটাই তো প্রবলেম। আমরা ক্রিকেট ছাড়া আর কিছু বুঝি না। ক্রিকেটকে হিংসা নয়, তার প্রতি পক্ষপাতিত্ব থাকুক, কিন্তু অন্যগুলোর প্রতি বৈষম্যটা ঠিক না। হকি, ফুটবল, টেনিসে অনেক বেশি শক্তি লাগে, ফিটনেস লাগে।
-তাহলে তো আনন্দের হয়ে ওকালতিটা ধোপে টিকছে না।
-মেন্টাল ফিটনেসও ফিটনেস।
-আর শূন্যে লাফিয়ে ক্যাচ ধরা, স্কিড করে বাউন্ডারি আটকানো এসবের জন্য ফিটনেস লাগে না?
-কেন লাগবে না? কিন্তু যখন বেদী প্রসন্নরা ভুঁড়ির জন্য ভালো করে ঝুঁকতেই পারত না, তখনও ক্রিকেটকে জপের মালা করে বসে থাকতাম।
-বাজে বোক না। পাতৌদির আমলে ফিল্ডিং-এর কনসেপ্টই চেঞ্জ হয়ে গিয়েছিল। আর ফুটবল নিয়ে নাচানাচি কি কম? কিন্তু কজন আন্তর্জাতিক মানের ফুটবলার আছে আমাদের এখন? একা ভাইচুং-এর কাঁধে ভর করে ওয়ার্লডকাপ তো দূর, এশিয়াকাপই অধরা থেকে যায়। যখন খালি পায়ে ভারতীয় ফুটবলাররা বুট পরা সাহেবসুবোদের টেক্কা দিত, তখন প্রফেশনাল ফুটবলের প্রতি কেন যে অরুচি দেখিয়েছিল? বদ্রু ব্যানার্জীর খালি পায়ের শটে একবার গোলপোস্টের জাল ছিঁড়ে গিয়েছিল। শৈলেন মান্নার খালি পায়ের শট দেখে ইংলন্ডের রানী পরখ করতে চেয়েছিল পাটা নিজের না স্টীলের! পিকে ব্যানার্জির একবার একটা শটে গোল হয়নি কিন্তু খুঁটিতে লেগে গোলপোস্ট কেঁপে গিয়েছিল। শ্যাম থাপার বাইসাইকেল কিক্ দেখে স্বয়ং পেলে তাকে ব্রাজিল নিয়ে যেতে চেয়েছিল, যায়নি। কী যে পিকিউলিয়র ইডিওলজি ছিল তখন! সুযোগ নষ্ট করা। যে দেশের টিম খালি পায়ে খেলেও চুয়ান্নর অলিম্পিকে সম্ভবত ফোর্থ পোজিশন পেয়েছিল, সেই দেশ এখন ফুটবলে ওয়ার্লডের প্রথম একশোটা দেশের মধ্যেও আসেনা। অন্যদিকে ইন্ডিয়ান ক্রিকেট খেলাটাকে পপুলারাইজ করে এই জায়গায় নিয়ে এসেছে। ‘ভারত ড্র করতে পারলেই খুশি’, সেই পোজিশন থেকে চ্যাম্পিয়নশিপের দিকে এগিয়ে এনেছে। সরকারি সাহায্যের জন্য হাপিত্যেশ করতে হয় না, বোর্ডই স্বয়ংসম্পূর্ণ। কর্পোরেট পয়সা কি এমনি আসে? তোমাদের হকি উদ্যোক্তারা সেরকম প্রফেশনালিজম দেখাতেই পারে। সেল্ফসাফিশিয়েন্ট হতে আটকাচ্ছে কে?
-তোমরা আটকাচ্ছ, মিডিয়া আটকাচ্ছে, নতুন পলিসিও আটকাচ্ছে। দেশে অন্তত তিরিশটা অ্যাস্টোটার্ফ তৈরী হলে বুঝতে পারতে। আমাদের কোচ বলতেন এশিয়ান হকির স্টাইল বরবাদ করার জন্যই আজকের সিন্থেটিক মাঠের আমদানি। তাও পারছে না ভারত, পাকিস্তানকে পুরোপুরি সাইডট্র্যাক করতে…। কথা হাতড়াচ্ছিল অনন্যা।
-অভিযোগটা এবার দেশের গরমেন্ট থেকে বিদেশের দিকে ঘুরে গেল?
জুৎসই উত্তর দেবার সুযোগ পেল না অনন্যা।
পিউ ঘুম থেকে উঠে এসে বাবার কোলে বসল। ছুটির দিন বলে সকাল সকাল জাগানো হয়নি। স্কুলের দিন সকাল সাড়ে সাতটায় বেরয়, ফেরে পৌনে তিনটেতে। এসে ঘুমিয়ে পড়ে। বিকেল গড়িয়ে তাকে জাগায় কাজের মাসি। কী খাওয়ায় কে জানে। মা-বাবা বাড়ি ফিরে দেখে মেয়ে টিভি দেখছে, নয়ত কম্পিউটারে বসে আছে। ফিরে এসে পরিস্কার হয়ে কোনওদিন পড়াতে বসায় অনন্যা, কোনওদিন পারে না। এভাবে আর চলবে না। টিউশন খুঁজতে হবে। সপ্তাহে একদিন নাচের ক্লাস। নাচে মন নেই। খেলাধূলোয় আছে কিনা বোঝা যায় না। কারণ ওর স্কুলের রুটিন আর রাস্তার ধারে গজিয়ে ওঠা বিচ্ছিন্ন ফ্ল্যাটবাড়ি ওকে খেলার মাঠ দেয়নি, গাছে চড়া দেয়নি, এক্কাদোক্কা খেলার সঙ্গীও দেয়নি। নিজে সেন্ট্রাল স্কুলে পড়ার সৌজন্যে খেলাধূলোর সুযোগ পেয়েছে। স্বাগতও শহরতলির স্কুলে পড়ে প্রচুর খেলেছে। তাছাড়া ছেলেরা ঠিক ঘিঞ্জি গলির মধ্যেও দৌড়াদৌড়ি করে নেয়। কেন যে মরতে মেয়েকে বিদ্যাধরী করার জন্য আইসিএসই বোর্ডে দিল। স্কুলটাতে খেলার পিরিয়েডে ছেলেদের জন্য যদিও বা ক্রিকেট ফুটবলের ব্যবস্থা আছে, মেয়েরা রুমালচোর খেলে বা গজালি করে কাটায়। এমন হবে জানলে কোএড-এর বদলে মেয়েদের স্কুল খোঁজ করত।
বাড়ির অনতি দূরে অ্যাথলেটিক কোচিং ক্যাম্প। চারজন অলিম্পিয়াড যাত্রাশুরু করেছিল এখান থেকে। কিন্তু আইসিএসই বোর্ডের চাপ তাকে বিকেলে মাঠের ধকল নিতে অনুমতি দেবে না। প্রায়-বিকেল পৌনে চারটের সময় চোখ লাগলে সাড়ে চারটের মধ্যে মেয়েকে ওঠানো সম্ভব নয়। আবার সন্ধ্যায় ক্লান্ত হয়ে এসে পড়াশুনো করাটাও কষ্টকর। তাছাড়া অ্যাথলেটিকস্ সপ্তাহে দু-একদিন গেলে চলবে না। ছদিন হাড়ভাঙা পরিশ্রম। কচি বয়সে ভর্তি নিতে চায়নি। কিন্তু যত উঁচু ক্লাস হচ্ছে, পড়ার চাপ বাড়ছে, ভর্তির চিন্তাটা তত দূর সরে যাচ্ছে। সবচেয়ে বড় কথা নিয়ে যাবে কে? কাজের মহিলার ওপর বেশি দায়িত্ব দেওয়া যায় না। মেয়ের সুছন্দিত পদক্ষেপের দিকে তাকিয়ে শুধু দীর্ঘশ্বাস ফেলতে হয়। ঐ পায়ে ঘুঙুরের চাইতে স্পোর্টস্-শু অনেক বেশি মানাত। বাবাও উৎসাহী। কিন্তু মেয়ের স্কুলের পড়া? মাঝেমধ্যে অনন্যার চাকরি ছাড়ার কথা ওঠে। সেটাই কি একমাত্র বিকল্প? স্বাগতর প্রাইভেট কম্পানির সেল্সের কাজের ওপর ভরসা করে রেলের পাকা চাকরি ছাড়াটা পাগলামো হবে না? ছাড়তে হলে তো স্বাগতকেই –
-ঝটপট পিউকে তৈরী কর। আমি বাজার করে ফিরেই ওকে পৌঁছে দেব নাচের স্কুলে।
অনন্যা লুচি ভাজছিল। পিউকে দিয়ে তাড়া দিল- ঝটপট খা। দেরি হয়ে যাবে।
স্কুলে যাওয়ার আগে ফ্যানাভাত গিলিয়ে দেওয়া হয়। ছুটির দিনে একটু এটাওটা হলে নিজেই টিভি দেখতে দেখতে খেতে বসে প্রিয়াংকা। মোটামুটি দেড় ঘণ্টার অনুষ্ঠান।
-নাচের স্কুলে যেতে ভালো লাগে না, মা।
-তাহলে?
-ব্যাডমিন্টন খেলব।
-এখানে কোথায় শিখবি? শেখা তো দূর খেলার সাথীও নেই। কে তোমাকে নিয়ে যাবে সোনা?
-দেবশ্রীদের হাউজিং-এ ব্যাডমিন্টন শেখায়, সাঁতার শেখায়, ক্যারাটে শেখায়। আমি তাহলে ক্যারাটে শিখি?
-এখানে ভালো শেখায় না। তাছাড়া তোমায় বলেছি না, এর জন্য ভালো করে এক্সসারসাইজ করে শরীর তৈরী করতে হবে। নাচের স্কুলে যেমন হাত ঘুরুঘুরু নাড়ু দেব শেখায়, এখানেও তেমনি কিআ কিআটাই শোনা যায়। একজনেরও ভালো মুভমেন্ট দেখিনি, কেউ একটা স্টান্সে বেশিক্ষণ থাকতে পারে না।
-স্টান্স কী মা? তুমি কি সবদিন ওদের প্র্যাকটিস্ দেখেছ?
মা নিরুত্তর। সপ্তাহে একদিন বলেই নাচটা কোনওক্রমে বজায় আছে। টিভিতে রিয়্যালিটি শোয়ে যেরকম মানের নাচ দেখে, তার ছিটেফোঁটাও পিউ শিখছে না। আগে অনন্যা শনিবার বিকেলে নিজে যেত মেয়েকে নিয়ে। আগের আন্টি মায়েদের নাচ দেখতে দিত। বাড়িতে সাধ্যমতো অভ্যাস করাত যদিও নাচ অনন্যার বিযয় নয়। সেই আন্টি বিয়ে করে চলে যাওয়ার পর যে মাস্টারমশাইয়ের কাছে শিখছে পিউ, তিনি অভিভাবকদের দেখতে দেন না। সুতরাং রোববার সকালে ওর বাবাই মোটরবাইকে করে মেয়েকে পৌঁছে দিয়ে আসে, নিয়ে আসে। অনন্যার কাজ হল পরীক্ষার আগে ডাইরিতে লেখা প্রশ্নগুলোর উত্তর পরীক্ষার্থীকে মুখস্থ করিয়ে দেওয়া। এই করেই তো ডিসটিংক্শন হয়ে গেল। স্কুটি কিংবা স্কুটার হলে অনন্যাও পৌঁছে দিতে পারত। কিন্তু স্বাগত ঐসব মেয়েলি বাহন চালানোর কথা ভাবতেই পারে না। তাছাড়া রান্নাঘর সামলানোর চেয়ে বাইকে ঘোরা অনেক বেশি উপভোগ্য। আর একটা দ্বিচাকা রাখার জায়গাও হবে না নীচের চত্বরে। এই ফ্ল্যাটে একটা মোটে গ্যারেজ; প্রোমোটার অধিকৃত। বাকি সব দোকান।
-তুমি যেটা শিখছ, সেটা মন দিয়ে শেখো সোনা। সেটাও কিন্তু সহজ নয়। অনেক নিষ্ঠা মানে ডেডিকেশন মানে হার্ডওয়ার্ক লাগে।
ক্লাস ফোরের ছাত্রী স্টান্স, নিষ্ঠা, ডেডিকেশন অতশত বুঝল কিনা কে জানে। শধু বুঝল মাঝেমধ্যে পার্কে যাওয়ার সুযোগ ঘটলে ওকে অভ্যাসরত ক্যারাটের ছেলেমেয়েদের দিকে তৃষিত নয়নে তাকিয়েই ক্ষান্ত থাকতে হবে।
বাবা ফিরে এলে ক্রীড়াবিদের কন্যা ব্যাগে ঘুঙুর, ডাইরি আর জলের বোতল ভরে ছুম্-ছুম্ শব্দে সিঁড়ি দিয়ে বাবার পিছুপিছু নামতে লাগল। দু কিলোমিটার দূরে নাচের স্কুল। সেখানে সপ্তাহে একদিন হাজিরা দেওয়া যায়। অথচ ঢিল ছোঁড়া দূরত্বের মধ্যে অ্যাথলেটিকস্ আর ক্যারাটে শেখার ক্লাব। পথটা অনতিক্রম্যই থেকে গেল।