কিছুদিন আগে আমি আমার ফ্যামিলি নিয়ে Bergen থেকে ঘুরে এসেছি। বলে রাখা ভালো এটা আমাদের ইউরোপের মধ্যে সবচেয়ে দীর্ঘ জার্নি ছিল। আমরা Bergen ভ্রমণ প্ল্যান করার সময় বিমানে যাবো নাকি ট্রেনে যাবো এটা নিয়ে কিছুটা দ্বিধাদ্বন্দ্বে ছিলাম। বিমানের টিকেটের দামের চেয়ে ট্রেনের টিকের দাম প্রায় দ্বিগুন ছিল। অতঃপর গুগুলিং করে Oslo – Bergen বিখ্যাত ট্রেনলাইন সম্পর্কে জানতে পারলাম এবং সাথে সাথে নির্ধারিত দিনের টিকেটে কেটে ফেললাম।
নির্ধারিত দিনে ট্রেনে উঠার আগে এই বিখ্যাত রেল ভ্রমণের সম্পর্কে জেনে নিলাম এবং ভ্রমণের পরে যে অভিজ্ঞতা হলো তা থেকেই এই লেখার অবতারণা।
Oslo থেকে Bergen পর্যন্ত ট্রেন লাইনকে বলা হয় Most popular scenic train journeys- এই ট্রেন লাইনটি নর্দান ইউরোপের সবচেয়ে দীর্ঘ (প্রায় ৫০০ কিলোমিটার) এবং সর্বোচ্চ রেললাইন। ন্যাশানাল জিওগ্রাফিক এর জরিপ মতে এটা পৃথিবীর সেরা ট্রেন রুটগুলোর মধ্য অন্যতম।
এই জার্নিটা প্রায় সাত ঘন্টার মত । আর এই সাত ঘন্টায় নরওয়েজিয়ান কান্ট্রিসাইড, অবারিত সবুজ খামার, ফিয়র্ড, ফরেস্ট, গ্লেসিয়ার ,পাহাড় এবং অগনিত ঝর্না ও লেকের সৌন্দর্য্য উপভোগ করতে পারবেন।
এই ভ্রমণের মাঝেই পড়ে বিখ্যাত Hardangervidda National Park। এই ন্যশানাল পার্কের মধ্যেই নরওয়ের সবচেয়ে বড় গ্লেসিয়ার Hardangerjøkulen glacier অবস্থিত। এই পাহাড়ের জিওলোজিক্যাল অবস্থান Ice Ages এবং Antertica সাথে মিল পাওয়া যায়। তাই এন্টার্ক্টিকায় গবেষণা ও ভ্রমণের পুর্বে এখানে আসেন পর্যটকেরা। কারন এখানকার পরিবেশের সাথে এটার্কটিকার পরিবেশের সাথে ব্যাপক মিল পাওয়া যায়। এখানে প্রায় ১২ মাসই পাহাড়ের উপরে বরফে আচ্ছাদিত থাকে।
এই জার্নিতে নানা ধরনের ভূ-প্রকৃতি দেখা যায়। Oslo থেকে রওনা দেওয়ার সময়ই নাগরিক চাকচিক্য দেখার ঘন্টাখানেক পরেই চোখে পড়বে নরওয়ের কান্ট্রি সাইডের ফার্ম হাউজগুলো । আমরা যে সময়টাতে ভ্রমণ করেছিলাম তখন নরওয়েতে সামার সিজন চলতেছিল চারদিকে মাঠে মাঠে সবুজের সমারোহ। যতদূর চোখ যায় অবারিত সবুজ প্রান্তরে বাতাসের ঢেউ খেলানোর দৃশ্য এবং এই সময়টা বলতে গেলে প্রায় ২২ ঘন্টায়ই সূর্য্যের আলো থাকে। বাকি দুই ঘন্টাও পুরোপুরি রাত হয় না, বাংলাদেশের গোধূলির আলোর মত থাকে।
সবুজ প্রান্তরকে পিছনে ফেলে ট্রেন ছুটে চলবে কখনো পাহাড়ের কোল ঘেঁষে, কখনো পাহাড়ী লেকের শান্ত জলরাশিকে পিছনে ফেলে, কখনো পাহাড়ী বনের ভিতর দিয়ে । পুরো জার্নিতে চোখ বন্ধ করার উপায় নেই। এ যেন ন্যাশনাল জিওগ্রাফিকের David Attenborough এর কোন সিরিজ দেখার মত।
ট্রেন চলতে চলতে হঠাতই মনে হয়েছিল মেঘগুলো হাতের নাগালে চলে এসেছে। পাহাড় এর মাঝে মাঝে মেঘের পসরা সাজানো রয়েছে। কিছু কিছু জায়গায় পাহাড়ী লেকের পাড়ে ছোট ছোট গ্রাম এবং গ্রামের কাঠের রঙিন বাড়িগুলোর সৌন্দর্য্যগুলি আলাদাভাবে নজর কেড়েছে।
হঠাত হঠাত ফিয়র্ডের নীলজলরাশি কিংবা নাম জানা পাহাড়ী ঝর্নার সৌন্দর্য দেখে মনের অজান্তেই সৃষ্টিকর্তার প্রশংসাসূচক বাক্য আলহামদুলিল্লাহ চলে আসছে মুখে অনেকবার।
সবুজ প্রান্তর, পাহাড়ি বনভুমি, লেক, ফিয়র্ড, বরফে আচ্ছাদিত পাহাড় দেখতে দেখতে কখন যে সাত ঘন্টার জার্নি শেষ হয়ে গেছে টেরই পাই নাই। আমাদের এই জার্নির ফুটেজগুলো আমাদের বুড়ো বয়সের সঞ্চয় হিসেবে জমা রেখে দিলাম।
আমাদের ট্রেন জার্নি শেষ হয়েছে বারগেন ট্রেন স্টেশনে। ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ সিটি বারগেন ভ্রমণের গল্প নিয়ে খুব শীঘ্রই লিখার ইচ্ছে আছে।
সবাই ভালো থাকবেন। সাবধানে থাকবেন।
ভ্রমণের সময় বর্জ্য পদার্থ নির্দিষ্ট স্থানে ফেলবেন।
ধন্যবাদ।
আমাদের এই পুরো জার্নির ভিডিও দেখতে চাইলে, নিচের ভিডিওটি দেখুন-