গ্রাস
ছ তলা ফ্ল্যাটটার চারতলায়
একটা রান্নাঘরের জানলায় রোজ রাত সাড়ে আটটায়
ফুটে ওঠে জলছবি।
এক বৃদ্ধ রোজ একাকী নির্জন হাতে
একলা খাবার বাড়ে।
দুটো রুটি, ছোট বাটিতে সবজি, অল্প পনীর
কাঁপা কাঁপা হাতে পায়ে খাবার টেবিলে
এসে রুটি ছেঁড়ে হাত দিয়ে
ছোট চারভাগে ভাগ করে।
শৈশব, কৈশোর, যৌবন, বার্ধক্য ।
বার্ধক্যের গ্রাস মুখে নিতে নিতে
রোজ তার চোখ দিয়ে জল গড়িয়ে পড়ে
রোজ।
জলকথা
যদিও তোমার চোখে বঁড়শিই ছিল
সে কেবল নিজেকে জল ভেবে ভেবে
ঢেউয়ের ভিতরে ঢেউ তুলে
কাটিয়েছে রাত্রিদিন ফেনায় ফেনায়
একদিন রক্তস্রোতে ভেসে যেতে যেতে
ফেনার ভিতর থেকে, জলের ভিতর থেকে
উঠে আসে উন্মাদিনী বালুচরে
ছিন্নবস্ত্র একাকী ঘুমায়।
ব্যধগ্রস্ত মৎস্যকন্যা বোঝে বিজ্ঞমাথা
অতঃপর শেষ হয় ব্যর্থ জলকথা।
সুখ
তীব্র সুখের মত বসে আছে বেনেবউ
রাধাচূড়া গাছের আড়ালে।
তাকে আরো ভালো করে দেখবো বলেই
পায়ে পায়ে এগোলে সে
আমার বোকামি দেখে
মুচকি হেসে উড়ে যায়
দূরের এক মেহগনি ডালে।
শব্দ
বাতাসে বয়ে যাচ্ছে শব্দ ।
তোমার আদরের শব্দ, তার তিরস্কার।
পরমাণু অস্ত্রের শব্দ, দোয়েলের শিস,
বাঘের থাবার শব্দ, হরিণের শুদ্ধতম স্বর।
তৃপ্তির গ্রাসের শব্দ, হাভাতে চিৎকার
শব্দ তুলছে, কেবলি বলছে
আছি, আছি, আছি
ভালোবাসার পাশে ঘৃণা হয়ে
ঘৃণার পাশে তৃষ্ণা হয়ে
তৃষ্ণার পাশে জল হয়ে
এভাবেই আছি চিরকাল।
তেষ্টা
যতবারই তেষ্টার সামনে দাঁড়িয়ে
জলপাত্র দুহাতে নিয়েছি, ততবারই
সময় টুকরো হয়ে ভেঙে ভেঙে গেছে ।
জলপাত্র দুখণ্ডে শয়ান।
তৃষ্ণার জলটুকু নামে না গলায় ।
তৃপ্তির গ্রাসটুকু পিছনে রেখেই
বার বার চলে যেতে হয়।
সামনের রাস্তা জুড়ে আকণ্ঠ অতৃপ্তিগুলি
সাদা সাদা খই হয়ে
গড়াগড়ি দেয়।
জলজ
নীলাভ সবুজ জলে ডুবে থাকা
হংসীর চোখে জল এলে
জেগে ওঠে শস্যক্ষেত অগাধ অপার
নিঝুম জোৎস্নালোকে অচেনা সঙ্গীত
দূর থেকে দূরবর্তী হয়। তারপর
মিশে যায় অনন্ত নিশায় ।
নিশাচর শুষ্ক অমসৃণ চোখে
পেলব শিকার খোঁজে ।
জলজ গন্ধ খোঁজে উঁচু নিচু লুব্ধ চোখ
ধানজমি, শস্যক্ষেত।
অশ্রু অসহায়।