ক’দিন আগে একটি জরুরি দরকারে আলিপুরে গিয়েছিলাম। পাশ দিয়ে যেতে যেতে হঠাৎ চোখে পড়ল জেলা পরিষদের নতুন বিল্ডিং। সামনে তাকাতেই দেখি নিয়ন বোর্ডে বড় বড় করে লেখা— জেলা পরিষদ দক্ষিন ২৪ পরগনা।
না, দক্ষিণ নয়, দক্ষিন। মানে ‘মূর্ধন্য’র জায়গায় ‘দন্ত্যন’।
রাস্তাঘাটে আপনার দলের নানান পোস্টার দেখি। দেখি আপনার দলের নামও। না তৃণমূল নয়, বহু জায়গায় আমার নজরে পড়েছে— তৃনমূল বা তৃণমুল। তবে হ্যাঁ, মিথ্যে বলব না, এখনও পর্যন্ত কিন্তু তিনোমূল বা তিনমুল বানানটা আমার চোখে পড়েনি।
পড়েছে আপনার পদবি। শুধু আমার নয়, আমার মতো আরও অনেকের চোখেই নিশ্চয়ই পড়েছে। কারণ, এই ভুল বানানটা আকছারই দেখা যায়।
‘বন্দ্যোপাধ্যায়’-এর জায়গায় ‘বন্দোপাধ্যায়’। মানে ন-য় দ-য় য-ফলা ওকার থেকে ‘য-ফলা’টা বেমালুম উধাও।
যাঁরা ওই সব লিখছেন, কোনও কিছু লেখার পর একবার চোখ বোলানোরও প্রয়োজন মনে করেন না এঁরা। হয়তো জানেনই না তৎসম শব্দের ক্ষেত্রে ঋ, র, ষ-এর পরে দন্তন্য হয় না। অবশ্য তৎসম শব্দটা কী, সেটাই ওঁরা জানেন কি না আমার যথেষ্ট সন্দেহ আছে।
আসলে আমাদের বাড়ির বাচ্চারা, যারা বাংলা মাধ্যমে পড়াশোনা করে, তারা তো বইপত্র দেখে এবং বাবা-মায়ের কাছ থেকেই বানান শেখে। কিন্তু দেওয়ালে, ব্যানারে, হোল্ডিংয়ে কিংবা সরকারি বড় বড় সদর দফতরের মাথায় যদি এই রকম মারাত্মক ভুল বানান ওরা অহরহ দেখে, তা হলে আমাদের শেখানো বানান ভুলে গিয়ে ওরা হয়তো ওটাকেই ঠিক বানান মনে করে মনের গভীরে গেঁথে নেবে।
আপনি তো আমাদের অভিভাবক, আপনি নিশ্চয়ই চাইবেন না কারও সন্তান ভুল কিছু শিখুক। তাই আপনার কাছে আমার একান্ত অনুরোধ, এখনও সময় আছে, আমাদের ছেলেমেয়েরা যাতে আর ভুল বানান না শেখে তার জন্য যত দ্রুত সম্ভব পদক্ষেপ নিন।
সামনে নির্বাচন তো, খুব ভয়ে ভয়ে আছি। এর পর তো শহর, শহরতলি থেকে শুরু করে গ্রাম-গণ্ডগ্রাম, তস্যগ্রামও দেয়াল লিখনে ভরে যাবে। দৃশ্য দূষণে চোখ রাখা যাবে না। তার উপর আছে ভুল বানানের উপদ্রব।
পারলে আইন জারি করুন, কোনও রাজনৈতিক দল যদি দেয়াল লিখনে ভুল বানান লেখে, তা হলে তৎক্ষণাৎ সেই লেখা মুছে ফেলে সেই দলের বিপক্ষ রাজনৈতিক দলের হাতে ওই দেয়াল তুলে দেওয়া হবে।
দরকার হলে, আগামী প্রজন্মের কথা ভেবে, যাঁরা এ রকম ভুলভাল বানান লিখবেন তাঁদের বিরুদ্ধে কঠোর শাস্তির বিধান চালু করতে হবে।
তার আগে আপনি অন্তত একজন প্রুফ রিডার রাখুন। আপনার এবং আপনার দলের যা যা ম্যানোফেস্টো আছে, দেয়াল লিখন, পোস্টার, হোর্ডিং আছে, সেগুলো লোকচক্ষুর সামনে আসার আগেই সেই প্রুফ রিডারকে দিয়ে একবার দেখিয়ে নিতে বলুন।
যাতে নির্ভুল বানান দেখে আমাদের রাজ্যের একেবারে কচিকাঁচারা সঠিক বানান শিখতে পারে। লিখতে পারে।