মাটি ও মানুষের কবি জীবনানন্দ দাশ (১৮৯৯-১৯৫৪) যে বাংলায় ফিরে আসতে চেয়েছিলেন হয়তো বা শালিক শঙ্খচিলের বেশে সে বাংলা, বাংলাদেশ তাকে নিয়ে প্রথম ডাকটিকিট প্রকাশ করে ২০০০ সালের ১৭ ফেব্রুয়ারি। ঠিক তার শততম জন্মবার্ষিকীর এক বছর পর প্রকাশিত চার টাকা মূল্যমানের এ ডাকটিকিটের ডিজাইনার ছিলেন আনোয়ার হোসেন, তার আঁকা জীবনানন্দের এ প্রতিকৃতিটি বেশ জীবন্ত। গাজীপুরে অবস্থিত সরকারী মুদ্রণ সংস্থা সিকিউরিটি প্রিন্টিং কর্পোরেশন থেকে এ ডাকটিকিটটি মুদ্রণ হয়েছিল। ডাকটিকিটের সঙ্গে একটি উদ্বোধনী খাম ও সীলমোহর প্রকাশিত হয়। ডাকটিকিটে যেমন বেদনার রঙ নীল রঙের ব্যবহার বেশি করা হয়েছে তেমনি উদ্বোধনী খামে জীবনানন্দের প্রিয় প্রকৃতির রঙ সবুজের আধিক্য লক্ষণীয়। খামটিতে পেনসিল স্কেচে আঁকা জীবনানন্দের আরেকটি প্রতিকৃতি ব্যবহার করা হয়েছে। জীবনানন্দের মুখের পেছনে রয়েছে তার কবিতায় উল্লেখিত বাংলার চিরচেনা দৃশ্যপট-ডালপালা যুক্ত একটি গাছের শাখার পেছনে গ্রামবাংলার বাড়ির দৃশ্যপট। ড্রইংটির নিচে কবি’র কবিতার লাইন লেখা আছে:”বাংলার মুখ আমি দেখিয়াছি/তাই আমি পৃথিবীর রূপ খুঁজিতে যাই না আর”। উদ্বোধনী খামে ক্যানসেলেশন হিসেবে ঢাকা জিপিও’র সীলমোহর দেখা যায়, সেখানে লেখা রয়েছে:”জৗবনানন্দ দাশ (১৮৯৯-১৯৫৪) Jibanananda Das (1899-1954)।
১৯ নভেম্বর ১৯৯৯ ফেলিটেলিস্ট এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের আয়োজনে ডাকটিকিটের প্রদর্শনী ’পিএবিইএক্স-১৯৯৯’ উপলক্ষে প্রকাশিত বিশেষ খামে জীবনানন্দের মুখায়ব ব্যবহার করে একটি সীলমোহর প্রকাশ করেছিল ঢাকা জিপিও।
আর ভারত থেকে ২০১৯ সালের নভেম্বরে বাংলা সাহিত্যের চার কবি জীবনানন্দ দাশ, সুধীন্দ্রনাথ দত্ত, প্রেমেন্দ্র মিত্র এবং সুভাষ মুখোপাধ্যায়ের স্মরণে ’পোয়েটস অব বেঙ্গল’ নামে একটি বিশেষ খাম প্রকাশ করে ভারতীয় ডাকবিভাগ। সেখানে এ চার কবি’র মুখায়ব ব্যবহৃত হয়েছে। খামে সবুজ রঙের ঈর্ষনীয় ব্যবহার লক্ষ্যণীয়। বিশেষ খামটি ’একলা চলো রে: ওয়েস্ট বেঙ্গল স্টেট লেভেল ফিলেটেলিক এক্সিবিশন’ উপলক্ষে প্রকাশ করা হয়। খামের পেছন দিকে হিন্দিতে ও ইংরেজিতে চার কবি’র সংক্ষিপ্ত পরিচিতি ছাপানো রয়েছে। বিশেষ খামটি কলকাতায় অবস্থিত পশ্চিমবঙ্গ সার্কেলের প্রধান ডাক কর্মকর্তার অনুমোদন ক্রমে ছাপা–এ কথাটিও লেখা রয়েছে।
এসব ডাকটিকিট ও সীলমোহর যুক্ত খামগুলো আমার সংগ্রহে আছে। বাংলাদেশ ও ভারতের বিভিন্ন স্থান থেকে এগুলো আমি সংগ্রহ করেছি; সেসব ছুঁয়ে মাঝে মাঝে কবি জীবনানন্দ দাশকে নতুন করে আবিষ্কারের চেষ্টা করি।