ঝালকাঠি জেলার রাজাপুর উপজেলায় ধানসিঁড়ি নদী পাড়ে সরকারী খাস জমিতে প্রধানমন্ত্রীর আশ্রয়ন প্রকল্পে ঘর পাওয়া মানুষের দিন কাটছে মাথার উপর ঘর ভেঙে পড়ার আতঙ্কে। আশ্রয়ণ প্রকল্প-২ এর ৪২ নং ঘরের পিছন অংশে গত পনেরদিন আগে থেকে ফাটল দেখা দিলেও গত শুক্রবার হঠাৎ করে তা বারান্দাসহ ধ্বসে পড়ে। ঘটনাটি জানাজানি হবার আগেই জনৈক রফিক লোকজন নিয়ে ভাঙ্গা অংশের টুকরোগুলো দ্রুত অংশ সরিয়ে ফেলেন।
সরাসরি সরকারি কর্মকর্তাদের তত্ত্বাবধানে নির্মিত এসব প্রকল্পের ঘরগুলো নির্মানে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে প্রেরিত অনুসরণীয় নির্দেশনা উপেক্ষা করে ঘরের ভিটিতে মাটি ও নির্মাণ কাজে সিমেন্টের অংশ কম দিয়ে নি¤œমানের কাজ করা হয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন সুবিধা ভোগী ও স্থানীয়রা।
এক লাখ ৯০ হাজার টাকায় নির্মিত প্রকল্পের এই ঘরগুলোতে ইট, বালুসহ সিমেন্টের গুনগত মান ঠিক না রেখেই কাজ শেষ করে এপ্রিল মাসে সুবিধা ভোগীদের কাছে হস্তান্তর করে উপজেলা প্রশাসন।
এছাড়াও ঘরের আড়া ও টিনের ছাউনির নিচে শিলকড়ই কিংবা ভাল মেহগনী কাঠ ব্যবহারের কথা থাকলেও স্থানীয় নি¤œমানের রেইনট্রি কিংবা চাম্বল কাঠ ব্যবহার করা হয়েছে।
এ ব্যাপারে উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান অধ্যক্ষ মনিরুজ্জামান মনিরসহ স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা জানান, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) নিজেই সবকিছু করেছেন।
রাজাপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোক্তার হোসেন বলেন, প্রকল্পের কাজ শেষ হওয়ার পর আমরা জেনেছি ৪২নং ঘরের নিচে একটি ডোবা ছিল। তাই আমরা ঘরটি কোনো সুবিধাভোগীকে হ¯তাšতর করিনি। এরইমধ্যে ঘরটির পেছনের অংশ দেবে গিয়ে ধসে পড়ায় আমরা নতুন করে ধানসিঁড়ি নদীর ওই জায়গায় পাইল বসিয়ে আবার সংস্কার শুরু করেছি। সংস্কার শেষ হলে একজন সুবিধাভোগীর মাঝে ঘরটি হ¯তাšতর করা হবে। এছাড়া আমরা প্রকল্পের প্রত্যেকটি ঘর পরিদর্শন করে যদি মেরামতের দরকার হয় তাহলে সেগুলো মেরামতের ব্যবস্থা করা হবে।
স্থানীয় সংবাদকর্মীরা সরেজমিনে গেলে সুবিধাভোগীরা অভিযোগ করেন, আশ্রয়ণ-২ প্রকল্পের আওতায় ঝালকাঠির রাজাপুরের ধানসিঁড়ি নদীর পাড়ে নির্মিত এই প্রকল্পের ১৪টি ঘরের মধ্যে আটটি ঘরেই সংস্কারের প্রয়োজনীয়তা দেখা দিয়েছে। ঘরের মেঝে ফেটে গর্তে পরিণত হয়েছে। কয়েকটি ঘরের সামনের পিলার ভেঙে পড়েছে, দেয়ালের পলে¯তারা খসে পড়ছে। টিনের ছাউনি দিয়ে ভেতরে পানি প্রবেশ করে। এখন পর্যšত বাসানো হয়নি টিউবওয়েল।
প্রধানমন্ত্রীর উপহারের ঘর পাওয়া সুবিধাভোগী মমতাজ বেগম এ সময় বলেন আমাদের কিছু নাই দেখে প্রধানমন্ত্রী একটি ঘর দিয়েছিলেন। কিন্তু ঠিকাদারের কাজের মান খারাপ হওয়ার কারণে সে ঘরের যে অবস্থা, তাতে তা যেকোনো সময়ই ভেঙে মাথার ওপর পড়তে পারে। সম্প্রতি এই প্রকল্পের ৪২নং ঘরের পেছন অংশে ফাটল দেখা দিলে বারান্দাসহ তা ধসে পড়ে। এরপর হতেই আমরা আরো আতঙ্কে আছি।
এই প্রকল্পের আরেক বাসিন্দা আবদুর রহিম বলেন, এতদিন এদিক-ওদিক থাকার পর মাথা গোঁজার একটু ঠাঁই পাইলেও মাত্র তিন মাসে ঘরের বিভিন্ন জায়গায় ফাটল ধরে ভাঙা শুরু হয়েছে। মনে হয় আর তিন মাস পর এই ঘরে থাকার অবস্থা থাকবে না। প্রধানমন্ত্রীর এই সুন্দর উদ্যোগকে যারা প্রশ্নবিদ্ধ করতে চাচ্ছেন তাদের বিচার দাবি করেন তিনি।