গিনেস বুক অব ওয়ার্ল্ড রেকর্ডস অনুসারে মাইকেল জ্যাকসন সর্বকালের সব চেয়ে সফল শিল্পী। যাঁর ঝুলিতে রয়েছে ১৩টি গ্র্যামি পুরস্কার, ১৩টি ১নম্বর একক সঙ্গীত এবং ৩৫ কোটিরও বেশি অ্যালবাম বিক্রি। সেই মাইকেল জ্যাকসন ১৫০ বছর বাঁচতে চেয়েছিলেন। তাই সব সময় তিনি সতর্ক থাকতেন।
কারও সামনে যাবার আগে মুখে মাস্ক পরে নিতেন। হাত মেলাবার সময় পরে নিতেন দস্তানা। নিজের দেখাশোনা করার জন্য বাড়িতে অত্যন্ত দক্ষ স্বনামধন্য ১২ জন ডাক্তার নিযুক্ত করেছিলেন, যাঁরা তাঁর মাথার চুল থেকে পায়ের নখ পর্যন্ত প্রতিদিন পরীক্ষা করতেন। যখন যেটা খেতেন, সেই খাবার তাঁর খাওয়ার টেবিলে দেওয়ার আগেই ল্যাবরেটরি থেকে পরীক্ষা করে আনা হত। প্রতিদিন ব্যায়াম করানোর জন্য ১৫ জন প্রশিক্ষক কসরত করতেন।
বাতাসে হঠাৎ করে কোনও কারণে অক্সিজেনের মাত্রা কমে গেলেও তাঁর যাতে কোনও অসুবিধা না হয়, সে জন্য অক্সিজেন যুক্ত বিছানায় ঘুমোতেন। যদি কখনও কোনও দুর্ঘটনায় তাঁর কোনও অঙ্গ হানি ঘটে, সে জন্য আগে থেকেই অর্গান ডোনার রেডি করে রেখেছিলেন। যাতে হঠাৎ দরকার পড়লেই ওঁরা কিডনি, লাঙস, চোখ-সহ শরীরের যে কোনও অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ তাঁকে দিতে পারেন। ওঁদের সমস্ত খরচ তিনি বহন করতেন।
তবু না, তিনি পারলেন না। হেরে গেলেন। ২০০৯ সালের ২৫ জুন মাত্র ৫০ বছর বয়সেই তাঁর হৃৎপিণ্ড স্তব্ধ হয়ে গেল।
নিজের ঘরে থাকা ১২ জন ডাক্তারের আপ্রাণ চেষ্টা কোনও কাজেই লাগল না। শুধু তাঁরাই নন, ক্যালিফোর্নিয়ার লস অ্যাঞ্জেলসের সমস্ত ডাক্তার একসঙ্গে চেষ্টা করেও তাঁকে বাঁচাতে পারলেন না। জীবনের শেষ ২৫ বছর ডাক্তারের পরামর্শ ছাড়া তিনি এক পা-ও নড়তেন না। নিজেকে ১৫০ বছর বাঁচিয়ে রাখার যে স্বপ্ন তিনি দেখতেন, সেই স্বপ্ন অধরাই রয়ে গেল।
মাইকেল জ্যাকসনের অন্তিমযাত্রা ২৫ লক্ষ লোক লাইভ দেখেছিলেন, যেটা আজ পর্যন্ত সব থেকে বেশি টিআরপি-র লাইভ টেলিকাস্ট।
তাঁর মৃত্যুর দিন বেলা সওয়া তিনটে থেকে উইকিপিডিয়া, টুইটার এবং সেই সময়ের অত্যন্ত জনপ্রিয় অ্যাপস এ ও এল ইনস্ট্যান্ট মেসেঞ্জারও বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। সে দিন গুগলে একই সময়ে একসঙ্গে আট লক্ষ লোক মাইকেল জ্যাকসন সার্চ করেছিল। ফলে অতিরিক্ত সার্চের ফলে গুগল ট্রাফিক জ্যাম হয়ে গিয়েছিল। প্রায় আড়াই ঘণ্টা গুগল কোনও কাজই করেনি।
যাঁর অনুমতি ছাড়া একটা সুচও গলতে পারত না, যিনি এতটাই নিরাপত্তার ঘেরাটোপে থাকতেন, মৃত্যুর পরে তাঁর দেহ পরীক্ষা-নিরীক্ষার পরে লস এঞ্জেলস কাউন্টি ডিপার্টমেন্ট অফ মেডিক্যাল এক্সামিনার-করোনার মাইকেলের মৃত্যুর কারণ হিসাবে লিখে দেয়— হোমিসাইড। অর্থাৎ খুন।
পরে জানা গিয়েছিল, তাঁর শরীরে মাংস বলে কিছু ছিল না। কঙ্কালের ওপরে যেন চামড়া পরানো। মাথায় ছিল না এক ফোঁটা ছিলও। প্রতিদিন অসংখ্য বার ইনজেকশন নেওয়ার জন্য তাঁর গোটা শরীর ছিল ঝাঁজরা।
তারা জানায়, প্রপোফল ও বেনজোডায়াজিপাইন নামের দুটি ড্রাগের তীব্র বিষক্রিয়ার জন্যই তাঁর মৃত্যু হয়েছে। সমস্ত প্রেসক্রিপশন চেক করে বোঝা যায়, মাইকেলের নিজস্ব ডাক্তার ডক্টর মুরেই হলেন সেই খুনি। তবে ইচ্ছে করে নয়, এটা অনিচ্ছাকৃত খুন। যেটাকে বিচারের সময় কোর্ট বলেছে— ইনভলান্টারি ম্যানস্লটার।