কবি রঞ্জনা রায়ের ছ’টি বৃষ্টির কবিতা

রঞ্জনা রায়
রঞ্জনা রায়
2 মিনিটে পড়ুন
সাময়িকী আর্কাইভ

বৃষ্টির গান

নদীর পাশে হাঁটতে হাঁটতে
অদেখা স্বপ্নের হাত ধরি
বৃষ্টির গানে –

স্বপ্নেরা প্রজাপতি হয়
মেঘপুরুষের উদাত্ত ডাকে –
বেজে ওঠে রিমঝিম নুপুর ,
ষোড়শী বৃষ্টির চঞ্চল বাজুবন্ধ ।

দুটি প্রান এক হতে চায়
স্ফটিকময় সজীব ক্ষণে
হৃদয়ের ফুটি ফাটা প্রান্তরে –

মেঘপুরুষের প্রার্থনা হয়ে
নেমে আসছে স্নিগ্ধ ধারা ।

- বিজ্ঞাপন -

রূপকথা

আমার বৃষ্টি জন্মের কথা
লেখ তোমার ওই মেঘ পালকে ।
জন্মান্তরের আমি
মিশে যাবো বৃষ্টি আবেশে
সেই হলুদ পাখির সোনালি ডানায় ।
তোমার মেঘলা চোখে বিদ্যুৎ আকাশ
সার্সির কাঁচে রিমঝিম উচ্ছ্বাস
পথ হারানোর সন্ধিক্ষণে
তোমার মেঘলা হাতে দিলাম
আমার বৃষ্টি জন্মের রূপকথা।

বৃষ্টিবিন্দুরা

তোমার আমার মাঝে বৃষ্টিবিন্দুরা
এক নীরব স্তবমন্ত্রের প্রতীক্ষায় ,
রাত আসে ছদ্ম আবেশে ,
নিস্তব্ধতার আঁচলে মুখ ঢেকে ।
শব্দহীনতার মাঝে শব্দেরা জেগে ওঠে
টুপটাপ বৃষ্টি ফোঁটায় ,
তোমার আমার একান্ত সোহাগী শব্দরা
মুখোশের মায়া ছিড়ে নিজেদের রনিত করে ।
শস্য জড়ানো শ্রাবন
বৃষ্টি আশায় অযুত আয়ুর মালা গাঁথে ।
তোমার দু–চোখে মেঘলা ধানের ছায়া –
মরু চাতকের মতো আমি বসে থাকি ,
আমার নিজস্ব বৃষ্টিবিন্দুরা
আজ মুখরতার মাঝে একান্তে শান্ত স্তব্ধ…

বেঁচে থাকা

অনেক মাঠ পেরিয়ে একটা টিলার উপরে
একটু সবুজ ঘাস দেখার আশায়
তপস্যার স্তব্ধতায় দিন কাটাই ।

আমার মেয়েজন্মের প্রতিটি দিন
প্রজাপতি হতে গিয়ে
ডানায় মুছে যায় প্রতিটি আশার রং ।

বেঁচে থাকা – অভ্যাসের খেলায়
মগ্ন হতে পারি না কিছুতেই ,

- বিজ্ঞাপন -

অবিরত বৃষ্টি ঝরে
সুড়ঙ্গের অন্ধকারে

ভিজে সিগারেট

সিগারেটটা নিভে গেছে
লাইটারটাও জ্বললো না
বর্ষা বড় উত্তাপহীন স্যাঁতস্যাঁতে –

ফুটপাথে দাঁড়িয়ে ইতস্তত চোখ
একহাত দূরে ফি পার্কিং জোনে
থামলো একটা মেরুন স্করপিও
নেমে এল সুঠাম শ্যামল পুরুষ ।

- বিজ্ঞাপন -

বর্ষায় আসে বন্য বাঁধভাঙা প্লাবণ
হৃদয়ের একূল ওকুল দুকূল ভেসে যায় ।

অন্ধকার বাইপাসে ছুটে চলে
দুরন্ত স্করপিও
হাতে হাত দুটি আদিম শরীর …

প্রথম আলো

অনেক চড়াই উৎরাই পেরিয়ে
পাকদণ্ডীর বাঁকে
আমি চেয়েছিলাম বিশ্বস্ত হতে
তোমার আমার নিজস্ব অর্কিডের
বেগুনি আভায় –

আকাশের কাছাকাছি থেকেও
মাটির সবুজ মখমলি চাদরে
রোদের ছোঁয়ায় গুপ্তধন খোঁজে
মেঘময় ঋদ্ধ মনন –

উৎসে জাগে সত্যের প্রথম আলো …

গুগল নিউজে সাময়িকীকে অনুসরণ করুন 👉 গুগল নিউজ গুগল নিউজ

এই নিবন্ধটি শেয়ার করুন
অখণ্ড মেদিনীপুর জেলার দাঁতন থানার অন্তর্গত কোতাইগড়--- তুর্কা এস্টেটের জমিদার বংশের সন্তান রঞ্জনা রায়। জন্ম, পড়াশুনা ও বসবাস উত্তর কলকাতায়। বেথুন কলেজ থেকে বাংলা সাহিত্যে সাম্মানিক স্নাতক এবং কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতকোত্তর উপাধি লাভ করেন। ১৯৭০ সালের ৩০শে মে রঞ্জনা রায় জন্মগ্রহণ করেন। পিতার নাম স্বর্গীয় জগত কুমার পাল, মাতা স্বর্গীয় গীতা রানি পাল। স্বামী শ্রী সন্দীপ কুমার রায় কলকাতা উচ্চ ন্যায়ালয়ের আইনজীবী ছিলেন। রঞ্জনা উত্তরাধিকার সূত্রে বহন করছেন সাহিত্যপ্রীতি। তাঁর প্রপিতামহ স্বর্গীয় চৌধুরী রাধাগোবিন্দ পাল অষ্টাদশ দশকের শেষভাগে 'কুরু-কলঙ্ক’ এবং 'সমুদ্র-মন্থন’ নামে দু'টি কাব্যগ্রন্থ রচনা করে বিদ্বজনের প্রশংসা অর্জন করেছিলেন। ইতিপূর্বে রঞ্জনা রায়ের প্রথম কাব্যগ্রন্থ 'এই স্বচ্ছ পর্যটন’ প্রকাশিত হয়েছে এবং তাঁর দ্বিতীয় কাব্যগ্রন্থ 'ট্রিগারে ঠেকানো এক নির্দয় আঙুল' সাহিত্যবোদ্ধাদের প্রভূত প্রশংসা পেয়েছে। তৃতীয় কাব্যগ্রন্থ 'নিরালা মানবী ঘর' (কমলিনী প্রকাশন) ও চতুর্থ কাব্যগ্রন্থ 'ইচ্ছে ঘুড়ির স্বপ্ন উড়ান' (কমলিনী প্রকাশন) দে’জ পাবলিশিংয়ের পরিবেশনায় প্রকাশিত। বাংলাদেশ, অস্ট্রেলিয়া, কানাডা ও পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন সাহিত্য পত্রিকায় কবির কবিতা নিরবিচ্ছিন্ন ভাবে প্রকাশিত হয়ে চলেছে।
একটি মন্তব্য করুন

প্রবেশ করুন

পাসওয়ার্ড ভুলে গেছেন?

পাসওয়ার্ড ভুলে গেছেন?

আপনার অ্যাকাউন্টের ইমেইল বা ইউজারনেম লিখুন, আমরা আপনাকে পাসওয়ার্ড পুনরায় সেট করার জন্য একটি লিঙ্ক পাঠাব।

আপনার পাসওয়ার্ড পুনরায় সেট করার লিঙ্কটি অবৈধ বা মেয়াদোত্তীর্ণ বলে মনে হচ্ছে।

প্রবেশ করুন

Privacy Policy

Add to Collection

No Collections

Here you'll find all collections you've created before.

লেখা কপি করার অনুমতি নাই, লিংক শেয়ার করুন ইচ্ছে মতো!