বরিশাল শের-ই বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল কোভিড রোগীদের ফিরিয়ে দেয়া হচ্ছে। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানান- তাদের বাড়িতেই চিকিৎসা সম্ভব।
মো. জাকারিয়া, একুশ বছরের এই যুবক এসেছেন, পিরোজপুর থেকে বরিশালে শের-ই বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি হতে। কিন্তু দুই ঘন্টা চেষ্টার পরেও তিনি ভর্তি হতে পারে নি।
তিনি জানান গত ৩ জুলাই তিনি করোনা পজেটিভ হয়েছেন। এতদিন বাড়িতে বসে চিকিৎসা নিচ্ছেলেন। কিন্তু অবস্থা খারাপ বিধায় তিনি হাসপাতালে ভর্তি হতে এসেছিলেন। কিন্তু ডাক্তাররা তাকে জানান বাড়িতে বসে চিকিৎসা নিতে। ভর্তি হতে না পেরে ফিরে যায় এই যুবক।
আবদুল আজিজ, বয়স পঁচাত্তর। তিনি এসেছেন বরিশালের বানারীপারা উপজেলা থেকে। করোনা উপসর্গ থাকায় অক্সিজেন এর মাত্রা কমতে থাকায় তিনি ভর্তি হতে চেয়েছিলেন করোনা ওয়ার্ডে।
এই প্রতিবেদকের সঙ্গে ওই অসুস্থ বৃদ্ধের ছেলে জানান, এম্বুলেন্সে করে হাসপাতালে নিয়ে আসার সময় তার বাবার তীব্র শ্বাসকষ্ট হচ্ছিল। ঘন্টাব্যাপী এ্যাম্বুলেন্সে থাকলেও তিনি তখন পর্যন্ত হাসপাতালে ভর্তি হতে পারেন নি। তার স্বজনরা জানান, হাপাতালে কাউকে ভর্তি নিচ্ছে না।
নগরীরর ব্রাাউন কম্পাউন্ডে বসবাস করেন আবদুর রশিদ। করোনা উপসর্গ নিয়ে তীব্র শ্বাসকস্ট নিয়ে তিনি শনিবার দিবাগত রাতে করোনা ওয়ার্ডে আসলেও দীর্ঘ সময় ধরে তিনি ভর্তি হতে পারছিলেন না। অবশেষে ভর্তি হলেও মিলছে না কোন অক্সিজেন সিলিন্ডার।
তার স্বজন নাসির আহমেদ জানান, তখন চাচার অক্সিজেন স্যাচুরেশন নেমে গিয়ে বিরাশি হলেও তিনি অক্সিজেন সিলিন্ডার পান নি তিনি। অনেক কষ্টে দীর্ঘ সময় পরে জুটেছে তার অক্সিজেন সিলিন্ডার।
রবিবার দুপুর বারোটা থেকে একটা পর্যন্ত খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, অন্তত করোনা উপসর্গ নিয়ে এক ডজন করোনা রোগী হাসপাতালে ভর্তি হতে না পেরে ফিরে গেছেন তারা।
আইসোলেশন ইউনিট এর দায়িত্বে থাকা এক ওয়ার্ডবয় জানান, এই মুহুর্তে হাসপাতালের এর সকল বেড রোগীতে পূর্ণ হয়ে গেছে, এমনকি মেঝেতেও রোগী রয়েছে। বিপুল সংখ্যক রোগীর জন্য অক্সিজেন সিলিন্ডার নিয়ে কাড়াকাড়ি লেগে গেছে।
এদিকে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানান, তিনশো বেড হলেও চারতালার বেড গুলো সেন্ট্রাল অক্সিজেন লাইন স্থাপনের কাজ চলছে। এর ফলে তিনশো অক্সিজেন সিলিন্ডারও নয় হাজার লিটারের সেন্ট্রাল অক্সিজেন রয়েছে। এ ছাড়াও বাইশটি আইসিইউ রয়েছে।
একটি আইসিইউ এর জন্য চুয়ান্ন জন ব্যক্তি অপেক্ষা করছে। আইসিইউ পাওয়ার জন্য ব্যাপক তদবীর রয়েছে বলে জানান করোনা আইসোলেশন ইউনিট ইনচার্জ ডা. মনিরুজ্জামান শাহীন।
বাসদ পরিচালিত অক্সিজেন ব্যাংক এর অন্যতম উদ্যোক্তা ইমরান হাবিব রুমন জানান, তাদের তিনশো অক্সিজেন সিলিন্ডার সবগুলো এখন জনগনের জন্য ব্যবহৃত হচ্ছে। আরো একশো সিলিন্ডার তাদের প্রয়োজন রয়েছেন।
পংকজ কুমার গুপ্ত নামে এক সমাজকর্মী ব্যাক্তিগত উদ্যোগে অক্সিজেন সরবরাহ করে থাকেন। তিনি জানান, তার দশটি সিলিন্ডার সব গুলো ব্যবহার চলছে। আরো দশটি সিলিন্ডার তিনি কনেছেন।
বরিশালের অক্সিজেন সিলিন্ডার দেয়া হচ্ছে বরিশাল মেট্রোপলিটন পুলিশের পক্ষে। অক্সিজেন এর দায়িত্বে থাকা এস আই সজীব জানান, গত দশ দিনে তারা তিপান্ন জনকে অক্সিজেন সিলিন্ডার দিয়েছেন। আগের চেয়ে কয়েক গুন চাপ বেড়েছে বলে জানান তিনি।
এদিকে হাসপাতালে আসা রোগীদের ভর্তি না করার ব্যাপারে কর্তৃপক্ষ স্বীকার করে বলেছেন, যাদের প্রয়োজন নেই আমরা তাদেরকে বাড়িতে থেকেই চিকিৎসা নিতে বলছি। সবার হাসপাতালে প্রয়োজন নেই। শুধুমাত্র ক্রিটিক্যাল অবস্থ্যা ছাড়া আর সবাইকে আমরা বাড়িতে আইসোলেশনে থেকেই চিকিৎসা নিতে বলেছি।
’আমাদের তিনশো বেড সম্পূর্ণ পূর্ণ হয়ে গেছে, তাদের বাড়িতে রেখে চিকিৎসা নেয়া সম্ভব আামরা তাদেরকে বাড়িতেই থাকতেই বলেছি। সেখানেও চিকিৎসা নেয়া সম্ভব- এ ছাড়া আমরা আর কি করতে পারি’ জানান হাসপাতাল পরিচালক ডা. এইচ এম সাইফুল ইসলাম।
হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানান পরিস্থিতির অবনতিতে তাদেরকে বাছাই করে ভর্তির সিদ্ধান্ত নিতে হচ্ছে, তাদের স্যাচুরেশন ভালো এবং বয়সে তরুণ তাদেরকে হাসপাতালে ভর্তি করা হচ্ছে না।