বাগেরহাটের রামপালে অতি জনগুরুত্বপূর্ণ মাত্র তিনটি ব্রিজ দীর্ঘ পাঁচ বছর ধরে ভেঙে সংযোগ বিচ্ছিন্ন হওয়ায় চরম ভোগান্তিতে পড়েছে সেখানকার মানুষেরা। প্রতিদিনই এই ব্রিজ দিয়ে প্রায় পাঁচ হাজার মানুষের চলাচলের সহজ ও গুরুর্তপূণ একমাত্র পথ। অথচ ব্রিজ তিনটি দীর্ঘদিন না থাকায় ব্যাবসায়ী, স্কুলের শিক্ষার্থী ও চাকুরী জীবিদের সময় মতো যাওয়া আসা ও রোগীদের দ্রুত চিকিৎসা সেবায় পড়তে হচ্ছে চরম ঝুঁকিতে। জনপ্রতিনিধিদের উদাসীনতায় মুখ থুবড়ে পড়ে আছে ব্রিজ তিনটি বলেও অভিযোগ করেন জনদূর্ভোগ কবলিত স্থানীয়রা।
সরেজমিনে স্থানীয়দের সাথে কথা বলে জানা যায়, উপজেলার বাইনতলা ইউনিয়নের শিকি ও সকুরহাটের জনগুরুত্বপূর্ণ দুটি ব্রিজ ভেঙে সংযোগ বিচ্ছিন্ন দীর্ঘ চার বছর ধরে। জনদূর্ভোগ লাঘবে স্থানীয় চেয়ারম্যান ফকির আব্দুল্লাহ এর আর্থিক সহযোগীতায় ও সাধারণ জনগন চাঁদাতুলে প্রায় দুই লক্ষ পঞ্চাশ হাজার টাকা ব্যায় পারাপারের জন্য দাউদখালী নদীর উপর শিকি ব্রিজের স্থানে দেওয়া হয়েছে অস্থায়ী একটি কাঠেরপুল। কিন্তু দীর্ঘ তিন বছর অতিবাহিত হওয়ায় কাঠেরপুলটিও এখন নাজুক অবস্তা। ঝুঁকিপূর্ন দীর্ঘ কাঠেরপুল দিয়ে পারাপার হতে পারেন না বৃদ্ধ ও কোমলমতি ছেলে মেয়েরা। অসুস্থ রোগীদের চিকিৎসার জন্য দ্রুত উপজেলা হাসপাতালে যেতে ঘুরতে হচ্ছে দশ থেকে পনেরো কিলোমিটারেও বেশি। অনেক সময় অসুস্থ রোগীকে সময় মতো হাসপাতালে নিতে না পারায় ঘটতে পারে যেকোনো দূর্ঘটনাও। অন্যদিকে সকুরহাটের জনগুরুত্বপূর্ণ বক্স কালভার্ডটিও এখন দুইপারের সাথে সংযোগ বিচ্ছিন্ন। বাগেরহাট পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্ধারিত নদী ও খাল খননের আওতায় দাউদখালী নদী খনন করায় বক্স কালভার্ডটি এখন দুইপারের সংযোগ বিচ্ছিন্ন। বৃষ্টির দিনে চরম ভোগান্তিতে সেখানকার মানুষেরা।
উপজেলার হুড়কা ইউনিয়ন পরিষদের সামনে চাড়াখালী খালের উপর দীর্ঘ ছয় বছরেও নির্মাণ হয়নি ভেঙে যাওয়া জনগুরুত্বপূর্ণ ব্রিজটি। অন্ধকারে নিমজ্জিত হয়ে এই এলাকার মানুষের হতাশা আর ঝুঁকি নিয়ে প্রতিদিনই পারাপার হতে হচ্ছে বিকল্প রাস্থা দিয়ে। চার বছর আগে প্রায় দেড়লক্ষ টাকা ব্যায় উপজেলা প্রশাসনের দেওয়া কাঠেরপুলটিও আজ ভেঙে জরাজীর্ণ। বিকল্প রাস্থাটিও ভাঙা। সীমাহীন হতাশাগ্রস্থ এই এলাকার মানুষ আজ ব্রিজের আশা একপ্রকার ছেড়েই দিয়েছেন। অর্থনৈতিক অঞ্চল খ্যাত হুড়কা ইউনিয়নের অধিকাংশ মানুষের যাতায়াত খুলনা, মোংলা ও বাগেরহাটে। এছাড়াও মোংলা ইপিজেড ও রামপাল তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রে কর্মরত প্রায় চার থেকে পাঁচ শতাধিক চাকুরী জীবিদের যাতায়াত করতে হয় প্রতিনিয়তই। এর বাইরে বিভিন্ন কাজেও ব্যাবসায়ী মালামাল আদান প্রদানসহ অন্যান্য কাজের সুবাদে প্রায় দেড় থেকে দুই হাজার মানুষের চলাচল করতে হয় এই ব্রিজ দিয়ে।
এলাকাবাসীর অভিযোগ, জাতীয় সংসদ, স্থানীয় সরকার নির্বাচন আসলে নেতা আর কর্মীদের মুখে শুধু কথার ফুলঝুরি ফোটে। নির্বাচন শেষ হলে তাদের আর সাক্ষাৎ মিলে না। তারা ব্যাপক বিজি হয়ে যান। বছরের পর বছর শুধুই আশ্বাস আর আশ্বাস। মাত্র তিনি জনগুরুত্বপূর্ণ তিনটি ব্রিজ পাঁচ ছয় বছর ধরে মুখ থুবড়ে পড়ে আছে। আমরা কি তাহলে অভিভাবক শূন্য? ব্রিজ নির্মাণের অভাবে এলাকাবাসী জীবনের ঝুঁকি নিয়ে কাঠেরপুল দিয়ে প্রতিনিয়ত যাতায়াত করছেন। ব্রিজ যে কবে নাগাদ হবে তা কেউই জানে না। ব্রিজ না থাকায় যাতায়াত, উৎপাদিত কৃষিপণ্য বাজারে আনা-নেয়া, অন্যান্য মালামাল বহনে ভোগান্তি ও অতিরিক্ত অর্থ দন্ডসহ জরুরী রোগীকেও চিকিৎসা সেবা দিতে ব্যাহত হচ্ছে। জনগুরুত্বপূর্ণ ব্রিজ তিনটি নীর্মিত হলে শিক্ষার্থী, চাকুরীজীবি, ব্যাবসায়ীসহ এলাকাবাসীর জনদুর্ভোগ লাঘবের পাশাপাশি সময় ও অর্থের সাশ্রয় হবে বলে দাবী করেন স্থানীয়রা।
এ বিষয়ে বাইনতলা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান, ফকির আব্দুল্লাহ বলেন, আমার ইউনিয়নে গুরুত্বপূর্ণ দুটি ব্রিজ তিন চার বছর ধরে নাই। মানুষের চরম ভোগান্তি হচ্ছে। আমি জনপ্রতিনিধি হিসাবে তাদের কাছে দায়বদ্ধ। তাদের সেবা দিতে ব্যার্থ হয়েছি। তবু আমার ইউনিয়নের প্রতিটি মানুষ আমাকে ভালোবাসে। তাই তাদের সাথে নিয়ে পরিষদ থেকে পঞ্চাশ হাজার টাকা বরাদ্দ দিয়ে আর এলাকাবাসীর আরো প্রায় দুইলক্ষ টাকা চাঁদা তুলে শিকিতে অস্থায়ী একটি কাঠেরপুল নির্মাণ করা হয়েছিলো। কিন্তু কয়েক বছর অতিবাহিত হওয়ায় কাঠেরপুলটিও আজ পারাপারের ঝুঁকিপূর্ণ। আর সকুরহাটের বক্স কালভার্ডটিও নদী খননে দুই পারের সাথে সংযোগ বিচ্ছিন্ন। আমাদের রামপাল মোংলার অভিভাবক ও খুলনা সিটি মেয়র ও তার সহধর্মিণী বন ও পরিবেশ বিষয়ক উপমন্ত্রী হাবিবুন নাহার এমপি মহোদয়কে বিষয়টি অবহিত করেছি। তানরা দ্রুত ব্রিজ দুটি নির্মানের আশ্বাস দিয়েছেন।
এ বিষয়ে হুড়কা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান তপন কুমার গোলদার জানান, জনগুরুত্বপূর্ণ ব্রিজটি দীর্ঘদিন ভেঙে সংযোগ বিচ্ছিন্ন থাকায় অত্র এলাকার মানুষের পড়তে হচ্ছে সীমাহীন দূর্ভোগে। বিকল্প রাস্থাটিও ভেঙে খানাখন্দে ভরা। আমরা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে বারবার এই বিষয়ে অবহিত করেছি কিন্তু কেবলই আশ্বাসের পর আশ্বাস কিন্তু আলোর মুখ আর দেখিনি। বিষয়টি মাননীয় এমপি মহোদয় ও খুলনা সিটি মেয়রকে অবহিত করেছি। তানরা দ্রুত ব্রিজটি নির্মানের ব্যাবস্থা করবেন বলে আশ্বস্ত করেছেন আমাদের।
এ বিষয়ে উপজেলা প্রকৌশলী কর্মকর্তা গোলজার হোসেন জানান, গুরুত্বপূর্ণ ব্রিজ তিনটির জন্য দুটি প্রজেক্টের মাধ্যমে আবেদন পেশ করেছি এবং সেটি ইতিমধ্যে ডিপিপিও পাস হয়েছে। মাঠ পর্যায় সয়েল টেস বা অন্যান্য জরিপ সম্পন্ন করে ডিজাইনের পর টেন্ডারের মাধ্যমে এবছরের শেষের দিকে হয়তো আমরা কাজ শুরু করতে পারবো।
এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ কবির হোসেন জানান, জনগুরুত্বপূর্ণ ব্রিজ তিনটির মধ্যে দুটি ব্রিজই ইতিমধ্যে ডিপিপি পাশ হয়ে গেছে এবং সয়েল্ট টেষ্ট করে আগামি অর্থ বছরে আমরা কাজ শুরু করবো। সাময়িক জনদূর্ভোগের আমরা লজ্জিত। রামপাল উপজেলা প্রশাসন সর্বদাই আপনাদের সেবায় নিয়জিত। আমরা প্রতিটি নাগরিকের সুবিধা ও সহায়তা নিশ্চিত করনে সরকারের নির্দেশনা বাস্তবায়নে কাজ করে যাচ্ছে। সবার সহযোগীতায় রামপালকে আরো সুন্দর করার প্রত্যায়ও ব্যাক্ত করেন এই কর্মকর্তা।