খ্রিস্টপূর্ব ৭০-এর ১৫ অক্টোবর জন্মানো ইতালির সর্বশ্রেষ্ঠ কবি, বিশ্বের সর্বকালের প্রথম সারির কবিকুলের নমস্য— পুবলিয়ুস ভেরগিলিয়ুস মারো। যিনি সবার কাছে ‘ভির্গিলিয়ুস’, ‘ভার্জিল’ বা ‘ভার্গিল’ নামেই খ্যাত, সেই প্রাচীন রোমান কবির অমর সৃষ্টি ‘এনিড’ হয়তো আজও পাণ্ডুলিপির আকারে বাক্স-বন্দি হয়েই পড়ে থাকত। কবি নিজে অন্তত তাই চেয়েছিলেন।
এই খ্রিস্টাব্দ শুরু হওয়ার উনিশ বছর আগে, যে বছরে কবি মারা যান, ঠিক সেই বছরেরই প্রথম দিকে মোটামুটি ভাবে লেখা শেষ হয়ে যায় এই মহাকাব্যটি। কিন্তু লেখা শেষ হলেও এই কবির যেন কিছুতেই তৃপ্তি হচ্ছিল না। তিনি যা চাইছেন, ঠিক যেন তেমনটি হচ্ছে না। তাই মনের মতো করে লেখাটা ফুটিয়ে তোলার জন্য তিনি ঠিক করলেন, লেখাটি নিয়ে আবার বসবেন। কাটা-চেরা করবেন। আরও সমৃদ্ধ করবেন এই মহাকাব্যটি। তাঁর মনে হল, এখানে থাকলে সেটা করা সম্ভব নয়, তাই পাণ্ডুলিপি সঙ্গে নিয়ে তিনি পাড়ি জমালেন বিদেশ ভ্রমণে। শুরু হল ঘোরাঘুরি আর সেই সঙ্গে নির্মম ভাবে কাটছাঁট এবং সংযোজন।
যখন মহাকাব্যটি তিল তিল করে ক্রমশ শ্রেষ্ঠত্বে পৌঁছতে চলেছে, ঠিক তখনই রোমে ফেরার পথে তিনি অসুস্থ হয়ে পড়লেন। বুঝতে পারলেন, তিনি আর সুস্থ হয়ে উঠতে পারবেন না। অথচ ভিতর থেকে সায় পাচ্ছেন না, এই অবস্থায় মহাকাব্যটি পাঠকদের হাতে তুলে দেবার। খুঁত রয়ে গেছে যেন ছত্রে ছত্রে। সেটাকে ঠিক করার মতো হাতে আর সময়ও নেই। ডাক এসেছে চলে যাবার। তাই তাঁর খেদের অন্ত ছিল না। তবু উইল করে গেলেন তিনি। উইলে স্পষ্ট করে বলা হল— ‘এই পাণ্ডুলিপি কোনও দিন, কখনও কোনও মতেই প্রকাশ করা যাবে না।’
এর মাত্র কয়েক দিন পরেই খ্রিস্টপূর্ব ১৯-এর ২১ সেপ্টেম্বর এই পৃথিবীর মায়া কাটিয়ে তিনি চলে যান। কিন্তু উইল অনুযায়ী তাঁর সেই শেষ ইচ্ছে কিন্তু পূরণ করা হয়নি।
তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ভার্জিলের ভীষণ গুণমুগ্ধ ছিলেন। ফলে সেই অনুরাগী-পাঠক চাইলেন না, তাঁর প্রিয় কবির কোনও লেখা এই ভাবে পড়ে থেকে নষ্ট হোক। তিনি আবেদন করলেন সম্রাটের কাছে। রোম সম্রাটও তাঁর সঙ্গে একমত হলেন। বললেন, হ্যাঁ, তিনি থাকলে এই মহাকাব্যটিকেও হয়তো তাঁর অন্যতম সেরা সৃষ্টি ‘একলোগুয়ে’ বা ‘গেয়র্গিক্স’-এর মতোই সংশোধন, সংযোজন ও পরিমার্জন করে আরও উৎকৃষ্ট করে তুলতেন। কিন্তু তিনি তো নেই! তিনি যা লিখেছেন সেটাই বা কম কী! আলোর মুখ দেখুক এই মহাকাব্য।
ফলে অল্প কিছু দিনের মধ্যেই হইহই করে প্রকাশিত হল জাতীয় কবির অসামান্য মহাকাব্য— এনিড। বারোটি বই জুড়ে লেখা এক মহাকাব্য, যা পরে রোমান সাম্রাজ্যের জাতীয় মহাকাব্যের মর্যাদা পায়। এবং এটাই বিশ্বের অন্যতম প্রধান মহাকাব্য হিসেবে স্বীকৃতি লাভ করে।