গৌরব প্রাসাদ
রোজ স্বপ্নগুলো মাটি হয়
কোদালমারা কোনো এক সকালে
প্রথম প্রেম বিলিয়ে যায় সমুদ্রের জলে
তটের সীমানায় ঢেউ খোঁজে অগ্রজকে
আহার্য সংগ্রহে আসে অনাহারীর বিশালতা
ম্লান মসলিন গুপ্ত থাকেনা আজকের খবরে।
ঝরাপাতার মর্মর ধ্বনি ধনীদের উপভোগে
খুল্ল তাত! প্রফুল্লচিত্তে ছুটে গেছে অবলীলায়
অর্বাচীন সিক্ত সিকিমের রাজত্বে
ঐ উপজাতীয় উপাদান
সচলায়তন অভাব ঘটিয়েছে আমাদের পূর্বাপর সম্পর্কশূন্য বিশ্বকেও,
মর্মান্তিক রূপে আপনায় বিরাজমান
কোথায় পড়ছে কোরান
কোথায় গীতার জ্ঞান
কোথায় জীবন দান
হেথায় দানবের করাল গ্রাস
পাটুরিয়া থেকে প্যালেস্টাইন
পৃথিবীর মানচিত্রে কি অদ্ভুত মানব চরিত্র!
অশ্রুমুখী
সে এক তৈলাক্ত বেলা
তেলাকুচার ফরমায়েশী আবাস
যূথিকা হলুদে নয় নীল শাড়িতে দণ্ডায়মান
মনে হয় পথের রাজহাট রাজগঞ্জে মিলাবে
ঐতিহাসিক চরিত্রগুলো মুক্তার দানার মতো ঝলমলে
মুক্তার হাসিটাও বেশ
মাঝখানে কন্যা হারানো পিতার কোর্টের প্লাটফর্ম
ছুটছে সম্পর্ক আহ্নিক গতিতে
আহ্লাদী প্রশ্নে জরাসন্ধ বিভক্ত হয় ভীমবাহুবলে।
ক্ষুদ্র কে অক্ষুদ্র অক্টোপাসের বেড়ীবাঁধে হিমশীতল
মর্গাগৃহে উল্লাসের ভজনগীতে
ধনীদের ধন মৃত্যুর আনন্দ তান্ডভা নৃত্যে
মৃত্যুঞ্জয় ডমরুধ্বনিতে প্রকম্পিত, বিকশিত কলেবর
কলেজ পড়ুয়া মুক্তা কেঁদে ভাসায়
ফসলিয়া দক্ষিণাঞ্চলের আঁখিদ্বয়, ঠোঁটের কোণে জাগে ইথারের ঝিরিঝিরি বৃষ্টি
দূর দৃষ্টি…. পিতার মুখ….ভাইয়ের আদর….
ঝাপসা মাঠের সীমান্ত ঘেঁষে বিস্তীর্ণ ইউরেশিয়ান চিন্তন
চিরন্তন সবুজ, চিরন্তন আলোক, চিরন্তন বহমান সময়
ভিন্ন বিষয়ের ভাঁজে ভাঁজে নকশীফোঁড়ে চিত্র গড়ে।
শিশির বাষ্প
কত প্রেম এসেছে বটবৃক্ষসম ছায়ে
ধ্বনিত হয়েছে উর্দ্ধ-উচ্ছাসিত হয়ে।
ঝরাপাতা ধ্বনিতে নুপুরের নিক্কন
চাষীর চাষের মতো ইরি-বরো-আমন।
ভাঙা পাঁজরে জ্বলিছে তাপ দাহ যজ্ঞ
ইট পোড়ানো পাঁজার ভাপে যেন সিদ্ধ!
স্তম্ভিত অর্থহারা বাক্যের রহস্য অবশেষ
মৌনব্রতে ধ্যানস্থ সেথায় রয়ে গেছে রেশ।
কথাকলি থামেনা ঢুলু আঁখি উদাসীন
চেতন কোঠরে কে যেন ঠুকে দিল পিন!
নিত্য প্রলয় হয় সম্মুখ সুখ দৈন্য ভবে
উপসী রাতে গোপনে প্রীত আসিত যবে।
মহাকালের হৃদয় হতে যখনি জাগিল মূল
যুগ-যুগান্তরের চেতন খুলে ভাঙিল ভুল!
এ জীবন্ত মহাবিস্ময়ের মহারণে-
কে বিজয় মাল্য পরিবে, কে জানে?
সমমনা শ্যামল সখ্যপ্রিয় ভূলোকে
সাজায়ে রেখেছি মহাযত্নে তাকে তাকে।
দূর পরবাসে তোমারি নীরবতা-
শস্যের আল ডিঙিয়ে কয়েছি যত কথা
ধবলীরে ঘাস খাওয়ানোর ছলে রোজ
রচেছিনু নিজ আবেগ, বাড়ায়ে দ্বিগুণ শত ডোজ!
কতদিন খোয়াব দেখে উঠে গেছি তাড়াতাড়ি
সুঘ্রাণ পেয়েছি যতেক রান্নার কাচ্চি -চচ্চড়ি!
এ ভেতো বাঙালি মাছ-ভাত-মাংসের নেশায়
সমাস সন্ধিবিচ্ছেদ ভুলে, ঘোড়াদৌঁড় অর্থ পিপাসায় !
শেষ শিরচ্ছেদ করে ওরা প্রেমহীন তলোয়ার
তীক্ষ্ণ ছুরি-কাচি-নরুন অশ্রু জলে সিক্ত বারেবার।
মাতৃস্তনে অমৃতের সুখে বেড়ে গেল যেবা
দেবতারা রোশনাই সাজায়ে রাক্ষস কে করে গাধা!
সেখানে স্বার্থের ছায়াছবি অসমকাব্য প্রাকটিক্যালি
সিন্ধুর বিন্দু ঘাম মঙ্গল সিঁদুরে রোজ হোলি খেলি!
তেড়ে আসে লোকালয়বাণের শুভ্র জলোচ্ছ্বাস
শতশত দর্পণের তলে প্রতিবিম্ব করে হাহুতাশ!
একদিন উর্বশীর তালে বেহুশ নগ্ন আদিমতা
শুনেছি প্রেম পবিত্র,স্বর্গ কিভাবে পেল কামুকতা?
আরো যত প্রেম আছে লুকায়ে ভূতলের পথ-প্রান্তরে
তাবিজ-কবজে, পাপী-তাপী, সচল-অচল যন্তরে-মন্তরে।
আমার মা
আমার মা ছায়া সবুজ শান্ত কোন গাঁয়ে
আমার মা কুমারী, শত অপবাদ গিয়াছে সয়ে।
আমার মা রৌদ্রজ্বলা দুপুরে-
ইটভাটায় শ্রমিক, পাথর ভাঙে
পাশে দুধের শিশু, ক্ষতবিক্ষত হাত, যন্ত্রণার ছাপ।
আমার মা হাসপাতালের সেবিকা-
আমার মা কাজের বুয়া, আয়া, রাস্তার ঝাড়ুদার-
মেতর, ভাঙাড়ি কুড়ানি, সবজিওলার জল তোলায়-
চায়ের ফ্লাক্স হাত নিয়ে ফেরি করে রাস্তায় রাস্তায়।
আমার মা শিক্ষিকা,ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার, বায়োকেমিস্ট, পাইলট,ড্রাইভার, পুলিশ।
আমার ‘মা’ ঘরে বাইরে সবখানে-
আমার মা বেলকুনিতে একলা অপেক্ষায়-
পরিবারের জন্য উৎসর্গ সকল ভালোবাসা।
আমার মা রোজ সকালে নাস্তা, দুপুরে গরম ভাত,
সন্ধ্যার চায়ের আড্ডায়- আর রাতে নির্মল ঘুমে।
আমার মা চাকরির প্রথম দিন- ফাইল ঠিক করে দেওয়া,
জামাকাপড়ের পরিপাটিতে- শীতের রাতে
লোশন মাখিয়ে দেওয়ায়।
আমার মা কার কি পছন্দ- পুরো লাখ জিবির মেমোরী।
জন্মদিনের সোহাগী পায়েস বা কেক।
জুতা মোজা পরিয়ে দেওয়ায়, নখ কাটায়,
ব্রাসে পেষ্ট লাগানোয়।
আমার মা গভীর রাতে পড়ার টেবিলে-
গরম দুধে হরলিক্স, আবার ব্রহ্মতালুতে
আলতো হাতে তেল মালিশ।
আমার মা শরীর খারাপের সময়-
বিছানার পাশে চাতকী প্রহর গোনায়-
দু’হাত তুলে প্রার্থনায় রাত জেগে জলপটিতে।
আমার মা বকাবকিতে ফার্স্ট, ননস্টপ
কোথায় চাকরির ফাইল, দলিল, আলমারির চাবী,
আমার মা ঘরকন্না থেকে বাইরের জগৎ।
আমার মা আলোয় ভরা ভুবন-
আমার মা কেন থাকবে বৃদ্ধাশ্রম?
ধর্মাধর্ম
আজমেরী তোমার শরীরের কনিষ্ঠ অঙ্গে
কলম রেখে শপথ করলাম
বেলা বেড়ে যায় তলোয়ারের মতো
মরিচা ধরা শেকড়গুলো বৃদ্ধাঙ্গুল চুষে
চাষ করে আধ্যাত্মিকতা!
নিদারুণ নাকি অবশ্যই দারুণ….
আমাদের কোভিড লগ্নে একান্নবর্তী আজ
আস্তিক নাস্তিক অথবা উদাসী উপমায়
কোথায় তোমার অস্তিত্ব বলে দাও
দু’হাত তুলে উর্দ্ধাকাশে ফ্যালফেলিয়ে
নিমগ্ন…. নিমগ্ন…. নিরন্ন সময়ে
হতাশায় শক্তির সন্ধানে তোমাকেই চাই ।
সুধাময় প্রেম
আমার এ আবেগ যেন ছাড়িয়াছিল মাঠ-ঘাট
ক্ষেত নদী পেরিয়ে সমুদ্রের তটে।
লেখা হয় নাই শুষ্কতার চাদরে ঢাকা
দেহের আস্তরণ মাখা নব যৌবনা
প্রফুল্ল চন্দ্র কথা ঐ আকাশযান হতে!
ভেসে যায় অগণিত মুখ,অগনিত ভাষা,
রূদ্ধশ্বাস বাঁচার আকুতি, নির্ভয়া
পৃথিবীর কোথা আছে সরলে গরলের
একান্ত অনুরাগ-
মিশে আছে হাসি-কান্নার মিলিত রূপ
সাগর নদীর সঙ্গম মোহনার সরূপ।
দিবা-রাত্রির মিলনে সন্ধ্যার অপরূপ বাহার
খেচরের ঘরে ফেরা
ঠোঁটে ঠোঁট রেখে মিলিত বাসর!
তারপর তুমি এলে হয়তো-
শিয়রে একফালি চাঁদ, বাড়িয়ে দিলে হাত-
সে সময় বহিয়া গিয়াছে, বহুদিন আগে-
যা হবার ছিল, হয় নাই হারাইয়াছো যাহারে-
সে লজ্জাবতীর লতার ন্যায় আধোমুখে
দীর্ঘশ্বাস বুকে জমাট বাঁধা
বহুকাল অনন্ত বাসরে।
সন্ধ্যায় মালতীরা ফুটেছিল, আসেনি মধুকর অলি
পৌরুষের আভিজাত্য কেমনে ভুলি?
আর সে না গাহিবে কোন গান
সে তো নয় মিছে অভিমান!
লাজ ভাঙানো শপথ যখন হেরিনু সন্মুখে
প্রথম নয়ন মেলিয়া, মোর বাসরিয়া
আশু উদ্বেলিয়া হিয়া,তারায় তারায় খচিত
মধ্য গগনে রচিত-
মোর অমৃত প্রেমকাহিনী, চিরন্তনী।