আফগানিস্তানের উত্তরপূর্ব প্রদেশের প্রায় ৭০ শতাংশ এলাকা দখলে নিয়েছে তালেবানরা। এসব দখল করা অঞ্চলগুলোতে ইসলামি বিধানের কঠোর সংস্করণ ‘শরিয়াহ শাসন’ চালু করেছে গোষ্ঠীটি।
জানা গেছে, গত বৃহস্পতিবার থেকে নতুন আইন চালু করেছে তালেবান। ইসলামী শরিয়াহভিত্তিক এ আইনের ধারা অনুযায়ী বিয়ের দেনমোহর ও যৌতুক সংক্রান্ত বিধিনিষেধও জারি করেছে তারা। প্রভাবশালী তালেবান নেতা খলিফা সিরাজউদ্দিন হাক্কানি দখলকৃত জেলাগুলোতে তাদের নিজস্ব আইন চালুর তাগিদ দিয়েছেন, ইতোমধ্যে বিভিন্ন গনমাধ্যমে প্রকাশিত এ খবর প্রকাশ পেয়েছে।
মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থা আগেই সতর্ক করে দিয়ে বলেছিল, ‘মার্কিন নেতৃত্বাধীন সামরিক জোট প্রত্যাহারের পর আফগান নারীদের অধিকার হুমকির মুখে পড়বে। এই কয়বছরে তাদের যতটুকু অধিকার প্রতিষ্ঠিত হয়েছে, তালেবানরা পুনরায় ক্ষমতায় এলে ঠিক ততটুকুই পেছনে পড়বেন তারা। মূলত সেদিকেই এগোচ্ছে দেশটি।
গত সপ্তাহ থেকেই অধিকৃত অঞ্চলগুলোতে পাথর ছুড়ে মৃত্যুদণ্ড, চুরির দায়ে হাত কর্তন, নারীদের একা ঘর থেকে বের হওয়ায় নিষেধাজ্ঞা এবং পুরুষদের বাধ্যতামূলক দাড়ি রাখার বিধান চালু করেছে তালেবানরা। চলতি মাসের শুরুতেই তালেবানরা আফগানিস্তানের ৩৫টি প্রদেশের ৪২১টি জেলার মধ্যে ১৫০টির মতো জেলা দখলে নিয়েছে। আরও শতাধিক জেলায় সরকারী বাহিনীর সঙ্গে তাদের যুদ্ধ চলছে এবং ধারণা করা হচ্ছে শিগগিরই ওই জেলাগুলোও আয়ত্তে আনতে সমর্থ হচ্ছে। খবর টাইস অব ইণ্ডিয়া
সর্বশেষ গত বৃহস্পতিবার তারা কাপিসা প্রদেশের তাগাব জেলা দখল করে নিয়েছে। আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছেন তালেবান অধ্যুষিত জেলাগুলোর অধিবাসীরা। দেশটির উত্তরপূর্ব প্রদেশের তাখার জেলার সিভিল সোসাইটি কর্মী মেরাজউদ্দিন শরীফ জানিয়েছেন, ‘তালেবানদের মূল সমস্যা শুধু শরিয়াহভিত্তিক আইনই নয়, তারা আসলে বিনা-প্রমাণে বিচার কাজ চালায়।’
অতীতে বিভিন্ন সময়ে তালেবানরা ইসলামি বিধানের কঠোর সংস্করণ চাপিয়ে দিয়েছিল আফগান নারীদের ওপর। সেসময় তারা মেয়েদের স্কুলে যেতে দিত না, নারীদের বাড়ির বাইরে গিয়ে কাজ করায় কঠোর নিষেধাজ্ঞা দিয়েছিল। পুরুষ সঙ্গী ছাড়া তারা বাড়ির বাইরে কোথাও যেতে পারবে না। এমনকি বিধান লঙ্ঘনকারীদের তাৎক্ষণিক শাস্তির ব্যবস্থা করতো তালেবান ধর্মীয় পুলিশ।
এরই মধ্যে তালেবানদের দখলকৃত জেলাগুলোতে দেখা দিয়েছে নাগরিক সমস্যাও। তখার প্রাদেশিক পরিষদের সদস্য মোহাম্মদ আজম আফজালি বলেছেন, ‘সেখানকার নাগরিকরা দৈনন্দিন পরিষেবাগুলো থেকে বঞ্চিত। ক্লিনিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ইত্যাদি বন্ধ রয়েছে।’ এছাড়াও তালেবানদের দ্বারা দখলকৃত অঞ্চলের বাসিন্দাদের খাবারের জন্য অতিরিক্ত অর্থ খরচ করতে হচ্ছে বলে জানিয়েছেন তরিকার প্রাদেশিক কাউন্সিলের সদস্যরা।
তাখারের গভর্নর আবদুল্লাহ কারলুক জানিয়েছেন, তালেবানদের সরকারী ভবনগুলোতে আক্রমণ করে ধ্বংস করে দিয়েছে এবং তালেবানের নিয়ন্ত্রণাধীন অঞ্চলগুলোতে নাগরিক পরিষেবাগুলো বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। তারা সরকারের সবকিছু লুট করে নিয়েছে।’ তবে তালেবানদের পক্ষ থেকে এসব অভিযোগ অস্বীকার করা হয়েছে।