বাংলাদেশে গ্লোব বায়োটেক লিমিটেড’র তৈরি করোনার ভ্যাকসিন বঙ্গভ্যাক্স মানবদেহে পুশ করার আগে বানরের দেহে পুশ করে এর কার্যকারিতা যাচাইয়ের জন্য টিকা তৈরিকারী প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তাসহ কয়েকজন। সেখানে স্থানীয়দের দ্বারা প্রতিষ্ঠানের পাঁচজন হেনস্তা ও শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত হওয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে। পরে পুলিশ গিয়ে তাদের উদ্ধার করেছে।
গতকাল রোববার (৪ জুন) সকালে গাজীপুরের শ্রীপুর উপজেলার বরমী বাজার এলাকায় এ ঘটনা ঘটেছে।
লাঞ্ছিতরা হলেন- গ্লোব ফার্মাসিউটিক্যালস্ লিমিটেডের মিডিয়া কনসালটেন্ট ও গ্লোবাল টেলিভিশনের অ্যাসাইনমেন্ট কর্মকর্তা মো. আনিছুর রহমান, স্টাফ রিপোর্টার রাশেদুল ইসলাম রাশেদ, ক্যামেরা পার্সন ফাহাদ আল কাদরিসহ তাদের দুই গাড়িচালক।
স্থানীয় এবং ভুক্তভোগীদের সূত্রে জানা গেছে, সকাল ১০টার দিকে বাজারের ব্যবসায়ীসহ বরমী এলাকার স্থানীয় জনগণ বানর ধরার খবরটি আমাকে জানায়। পরে আমি সেখানে গিয়ে কয়েকটি বানর খাঁচায় আবদ্ধ অবস্থায় দেখতে পাই এবং এসব বানর ধরার কারণ জানতে চাই। পরে তারা গ্লোব ফার্মাসিউটিক্যালস লিমিটেডের তৈরি করা করোনার ভ্যাকসিন বঙ্গভ্যাক্স মানব দেহে পুশ করার আগে প্রাণীর দেহে পুশ করে এর কার্যকারিতা যাচাইয়ের জন্য বানর ধরার কথা জানান।
বানর ধরার জন্য বন বিভাগ ও সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের অনুমতি থাকার কথা জানান। কিন্তু স্থানীয়রা বানর ধরতে বারণ করার পরও তারা বানর ধরা অব্যাহত রাখায় তারা উত্তেজিত হয়। তাদের শান্ত করে বানর ধরতে আসা লোকজনদের স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদ কার্যালয়ে নেয়া হয়। সেখান থেকে শ্রীপুর থানা পুলিশ তাদের থানায় নিয়ে আসেন। তবে তিনি বানরের জন্য টাকা দাবি ও লুটের কথা অস্বীকার করেছেন।
কয়েকশ’ বছরের ঐতিহ্যবাহী বরমীর বানর। শত অত্যাচার করে এ বানরগুলো তারপরও তাদের অত্যাচার সহ্য করেও আমরা তাদের খাবার দেই, যত্ন করি। লকডাউনে দোকানপাট বন্ধ থাকার পরও প্রত্যেক বাড়ি থেকে খাবার যোগাড় করে দেই। বানরগুলোই বরমী বাজারকে মাতিয়ে রেখেছে। বানরগুলোকে খাঁচায় বন্দি করে অজ্ঞান করায় তারা উত্তেজিত ও মারমুখী হয়ে উঠেছিল।
লাঞ্ছিত কর্মকর্তা আনিসুর রহমান গণমাধ্যমকে জানিয়েছেন, সরকারী অনুমতি নিয়ে বানর ধরতে যান। তারা এলাকা থেকে ১০টি বানর ধরেও ফেলেন। কিন্তু স্থানীয় কিছু উচ্ছৃঙ্খল এলাকাবাসী বানরের জন্য টাকা দাবি করে এবং টাকা না দেয়ায় তারা তাদের শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করেছে এবং সঙ্গে থাকা টাকা-পয়সাসহ বানরগুলোও ছিনিয়ে নিয়ে গেছে। তাদের কাছে এসব ঘটনার ফুটেজও আছে। কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা করে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।
গাজীপুরের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব সাফারি পার্কের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ও সহকারী বন সংরক্ষক মো. তবিবুর রহমান জানান, গ্লোব বায়োটেক লিমিটেড কর্তৃক আবিষ্কৃত কোভিড-১৯ টিকা বঙ্গভ্যাক্স মানবদেহে প্রয়োগের আগে বানরের দেহে পরীক্ষার জন্য বাংলাদেশ চিকিৎসা গবেষণা পরিষদ থেকে নির্দেশনা দেয়া হয়। এজন্য গত ২৬ জুন গ্লোব বায়োটেক লিমিটেড চেয়ারম্যান মো. হারুনুর রশিদ পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ে তাদের ৫৬টি বানরের প্রয়োজন বলে আবেদন করেন।
তিনি বলেন, পরদিন প্রধান বনসংরক্ষক বরাবর প্রয়োজনীয় সংরক্ষক বানর ধরা ও ব্যবহারের জন্য মন্ত্রণালয়ের উপসচিব দীপক কুমার চক্রবর্তী স্বাক্ষরিত এক পত্র পাঠানো হয়। পরে প্রধান সংরক্ষক এ সংক্রান্ত একটি চিঠি আমাকেও দিয়েছেন। এর আগে তারা গিনিপিগ ও খরগোশেও এ টিকা প্রয়োগ করেছেন। তবে আরও নিশ্চিত হতে বানরের দেহেও প্রয়োগ করার জন্য তাদের বানর প্রয়োজন।
তারা গত ২৯ জুন থেকে তিন দিনে ভাওয়াল জাতীয় উদ্যান ও সাফারি পার্ক থেকে ৩০টি বানর সংগ্রহ করেছেন। বাকী বানর ধরার জন্য রোববার সকালে স্থানীয় প্রশাসন ও বন কর্মকর্তাদের অবগত না করেই তারা শ্রীপুরের বরমী বাজারে গেলে জনরোষে পড়েন। পরে স্থানীয় শ্রীপুর উপজেলা প্রশাসন ও থানার ওসি তাদের উদ্ধার করলেও বানর ধরে নিয়ে যেতে পারেননি।
শ্রীপুর থানার ওসি খোন্দকার ইমাম হোসেন জানান, উত্তেজিত জনতার রোষানল থেকে তাদের উদ্ধার করে থানায় নেয়া হয়। পরে বানর ধরার জন্য তাদের সঙ্গে থাকা মন্ত্রণালয় ও বনবিভাগের অনাপত্তিপত্র তথা কাগজপত্র যাচাই-বাছাই ও বন বিভাগসহ তাদের থানা থেকে ছেড়ে দেয়া হয়েছে।
(সংবাদ যুগান্তর)