ছবি আঁকা এবং লেখালেখির জন্য যিনি জীবন উৎসর্গ করেছিলেন, পি-রাফেলাইট কবি গোষ্ঠীর যিনি ছিলেন পুরোধা, সেই দান্তে গ্যাব্রিয়েল রসেটি-র কোনও লেখাই হয়তো পরবর্তী কালের পাঠকদের জন্য আর অবশিষ্ট থাকত না। থাকত না তাঁর আঁকা সুন্দর সুন্দর ছবিগুলিও।
নানান মৌলিক সৃষ্টির জন্য যখন তিনি সবার নজর কাড়ছেন, ঠিক তখনই একটি মেয়ের সঙ্গে তাঁর পরিচয় হয়। নাম— এলিজাবেথ সি ডল। কয়েক দিনের মধ্যেই তাঁদের গভীর বন্ধুত্ব গড়ে ওঠে এবং ভালবাসা। পরে সেই সম্পর্ক বিয়ে পর্যন্ত গড়ায়। প্রাণের থেকেও তিনি তাঁকে বেশি ভালবাসতেন। মেয়েটিও তাঁকে ভালবাসত একই রকম ভাবে। দারুণ সুখে জীবন কাটছিল তাঁদের।
রসেটি লিখছিলেন আরও ব্যাপক হারে। কিন্তু মাত্র দু’বছর। অপরূপ সুন্দরী স্ত্রী হঠাৎই চলে গেলেন পৃথিবীর মায়া কাটিয়ে। এলিজাবেথের শোকে পাথর হয়ে গেলেন তিনি। যে সৃষ্টির উপাসনা এত দিন ধরে করেছেন, বাকিটা কেমন হবে কল্পনা করে রেখেছেন, তা যেন তাঁর চোখের সামনে হঠাৎই খানখান হয়ে ভেঙে পড়ল।
যে কোনও সৃষ্টিকর্তা তাঁর সৃষ্টিকে চিরকাল বাঁচিয়ে রাখতে চান। কিন্তু ব্যতিক্রম ঘটল তাঁর বেলায়। তিনি বললেন, আমি সারা জীবন ধরে যা করেছি, তার কোনও মূল্য নেই। তবু এগুলোই
আমি আমার বউকে উৎসর্গ করতে চাই। করলেনও তাই। নিজের সমস্ত রচনা এবং আঁকা ছবিগুলো স্ত্রীর কফিনের ভেতরে দিয়ে স্ত্রীকে সমাধিস্থ করে দিলেন।
তাঁর অগণিত পাঠক ভেঙে পড়ল। বন্ধুরা হতভম্ব। তাঁকে বোঝানোর চেষ্টা চলল কত। আসতে লাগল অনুরোধের পর অনুরোধ। উপরোধ। তবু তিনি তাঁর সিদ্ধান্তে অনড়।
তাই তাঁকে লুকিয়ে তাঁর বন্ধুরা এবং তাঁর অনুরাগীরা একদিন চুপিসাড়ে ওই কবর খুঁড়ে উদ্ধার করে আনলেন তাঁর সমস্ত রচনা এবং ছবি। যা থেকে প্রমাণ হয়, তাঁর থেকেও চিন্তাশীল এবং
শক্তিমান কবি ও চিত্রকর থাকলেও থাকতে পারেন, কিন্তু তিনি তাঁর নিজের জায়গায় অনন্য। সৌন্দর্য পিপাসুদের জন্য তিনি রেখে গেছেন অপরূপ মহিমান্বিত শিল্পবৈভব, জীবনরস আর কাঙ্খিতদের জন্য সংসারের কামনা-বাসনার কাহিনী। চিত্রপ্রিয়দের জন্য তন্ময় করা সুন্দর সুন্দর রেখা, রং।
ইতিহাস ঘাঁটলে দেখা যাবে, বউকে ভালবাসার নজির সৃষ্টি করেছেন অনেকেই, কিন্তু এ রকম উজাড় করা স্বতন্ত্রতা নিঃসন্দেহে বিরল, বিরলতম।