পৃথিবী বিখ্যাত চিত্রশিল্পী লিওনার্দো দা ভিঞ্চির নাম শুনলে আমাদের প্রথমেই মনে পড়ে তাঁর কালজয়ী অনন্য সৃষ্টি ‘মোনালিসা’ এবং ‘দ্য লাস্ট সাপার’-এর কথা। কিন্তু ছবি আঁকা ছাড়াও এই বহুমুখী প্রতিভাধরের খ্যাতি ছিল একজন যুগান্তকারী বিজ্ঞান চিন্তাবিদ হিসেবে।
তিনি তাঁর নতুন নতুন বিজ্ঞানের চিন্তাভাবনাগুলোকে একের পর এক লিখে রচনা করেছেন সর্বমোট ৩০টি বই। তবে সেগুলোর মধ্যে সব চেয়ে বিখ্যাত হল— গিগিক্স লেস্টার।
বইটি লেখা হয়েছে বেশ দুর্বোধ্য প্রাচীন ইতালীয় ভাষায়। ষোড়শ শতাব্দীতে রচিত এই নোটবইটি ১৯৯৪ সালের ১১ নভেম্বর নিউ ইয়র্কের ‘ক্রিস্টিজ নিলাম’ সংস্থায় নিলাম করা হয়৷
বইটি শেষমেশ কিনে নেন বিশ্বের সব চেয়ে ধনী মানুষ— বিল গেট্স। তিন কোটি আট লাখ ডলার দিয়ে৷ মানে ভারতীয় মুদ্রায় প্রায় ২,৩০,৫৭,৪৩,৪৪০,০০ টাকা দিয়ে। যে সংখ্যাটা কথায় লিখতে গেলে আমাদের মতো ছাপোষা লোকদের অন্তত তিন বার ভাবতে হবে।
এই বিপুল পরিমাণ অর্থ দিয়ে বিল গেটস কিনে নেওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই এই বইটি অর্জন করে নেয় বিশ্বের সব চেয়ে দামি বইয়ের খেতাব।
ভিঞ্চির মৃত্যুর পর ১৭১৯ সালে বইটির মালিক হন থমাস কোক। তার আগে এই বইটির নাম ছিল ‘দ্য আর্ল অফ লেস্টার।’ থমাসের মালিকানায় বইটি চলে যাওয়ার পর তাঁর নামানুসারেই এই বইটির নাম হয়ে যায়— গিগিক্স লেস্টার।
বিংশ শতাব্দীর বহু বৈজ্ঞানিক আবিষ্কারের নেপথ্য জনক এই জগৎজোড়া খ্যাতি সম্পন্ন চিত্রশিল্পী ৭২ পৃষ্ঠার এই বইটিতে বিভিন্ন স্কেচের মাধ্যমে প্রাকৃতিক উপাদান, জীবাশ্ম এবং চাঁদের উজ্জ্বলতা নিয়ে আলোচনা করেছেন। তবে এই বইয়ের মূল আলোচ্য বিষয় ছিল— প্রবাহমান জলের নানান বৈশিষ্ট্য। ভিঞ্চি তাঁর এই নোটবইতে চাঁদের বুকে জল থাকার সম্ভবনার কথাও প্রথম বলেছিলেন।
মজার ব্যাপার হচ্ছে, এই নোটবইটি এমন ভাবে লেখা, এই দুর্বোধ্য প্রাচীন ইতালীয় ভাষাটি লিখতে এবং পড়তে জানলেও, সরাসরি পড়া যাবে না। দ্বারস্থ হতে হবে আয়নার। কারণ, শুধুমাত্র আয়নায় ফুটে ওঠা প্রতিফলন দেখেই এই বইটি পড়া যায়।
১৯৮০ সালে আর্মান্ড হ্যামার নামের এক সংগ্রাহক এই নোটবইটি ইংরেজিতে অনুবাদ করেন। বিল গেটস এই বইটি কিনে নেবার পর বইটির প্রতিটি পৃষ্ঠা ডিজিটাল স্ক্যান করে একটি সিডি-রম ভার্সন বের করা হয় ১৯৯৭ সালে। বইটি যাতে আগ্রহী লোকজন চাক্ষুষ করতে পারেন, সে জন্য বছরে একবার করে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের বিখ্যাত জাদুঘরগুলোতে এই বইটি প্রদর্শিত হত। তবে বেশ কিছু দিন হল, বইটি আমজনতার পড়ার জন্য একেবারে বিনামূল্যে উন্মুক্ত করে দেওয়া হয়েছে।