বরিশালে হত্যা মামলার নারী আসামী রিমান্ডে নির্যাতন ও যৌন নিপীড়নের অভিযোগ আনলে বরিশালের জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটের আদালত নির্যাতন তদন্তের আদেশ দিয়েছেন।
জুডিশিয়াল ম্যাজিষ্ট্রেট মাহফুজুর রহমান অভিযোগ আমলে নিয়ে নিযার্তন এবং হেফজতে মৃত্যু (নিবারণ) আইন ২০১৩ এর ৪(১)(খ) ধারা মোতাবেক অনতিবিলম্বে মিতুর স্বাস্থ্য পরীক্ষা করে শরীরে জখম ও নির্যাতনের চিহ্ন এবং নির্যাতনের সম্ভাব্য সময় উল্লেখপূর্বক একটি প্রতিবেদন তৈরী করে ২৪ ঘন্টার মধ্যে আদালতের কাছে প্রেরণের নির্দেশ দেন বলে আদালত সূত্র জানিয়েছেন।
জুডিশিয়াল ম্যাজিষ্ট্রেট আদালত-তিন এর বেঞ্চ সহকারী নাহিদা খানম জানান, ভিকটিম রিমান্ডে নির্যাতন ও যৌন হয়রানির অভিযোগ আনলে শুক্রবার জুডিশিয়াল ম্যাজিষ্ট্রেট এই আদেশ দেন। একই সাথে পুলিশ সুপারকে এই মামলার তদন্তের নির্দেশ দেন।
এদিকে আদালতের নির্দেশ অনুযায়ী বরিশাল শের-ই বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের চিকিৎসক কর্তৃক একটি তদন্ত প্রতিবেদন আজই শনিবার আদালতে পেশ করা হয়েছে বলে নিশ্চিত করেছে হাসপাতালের পরিচাল ডা. এই এম সাইফুল ইসলাম।
তিনি জানান, ভিকটিম এখন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন।
মিতু অধিকারী আদালতে অভিযোগে করেন, গ্রেফতার করে থানায় নিয়ে যাওয়ার পরপরই এক মহিলা পুলিশ সদস্য লাঠি দিয়ে তাকে শারীরিক নির্যাতন করে। পরবর্তীতে আশেপাশে উপস্থিত থাকা পুলিশ অফিসাররা তাকে লাঠি দিয়ে শরীরের বিভিন্ন স্থানে প্রহার করেন। এরপরে মিতুকে জেল হাজতে প্রেরণ করা হয় এবং দুই দিনের রিমান্ডের জন্য থানায় নিয়ে আসা হয়।
মিতু জানান, এদিন তাকে কোন মারধর না করা হলেও পরেরদিন সকালে তাকে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তার রুমে পাঠানো হয়। এসময় উক্ত কর্মকর্তা মিতুর শরীরের স্পর্শকাতর স্থানে হাত নিয়ে তাকে যৌন নিপীড়ন করেন। এরপরে এক মহিলা পুলিশ সদস্যকে ডাকলে তিনি এসে মিতুকে লাঠি দিয়ে হাতে, পায়ে এবং পিঠে নির্যাতন করেন। উক্ত নারী পুলিশ সদস্যের মার পছন্দ না হওয়ায় এক পর্যায়ে তদন্ত কর্মকর্তা নিজেই হাতে লাঠি তুলে নেন এবং মিতুকে পেটাতে শুরু করেন। মিতু অভিযোগ করে জানান ‘আমাকে ১৫-২০ মিনিট পেটানো হয়।’ এরপরে তিনি অজ্ঞান হয়ে যান। যখন তার জ্ঞান ফেরে তখন তিনি নিজেকে হাসপাতালে হাতে স্যালাইন লাগানো অবস্থায় দেখতে পান। তিনি জানান, হাসাপাতালে নেয়ার আগে পুলিশের কোনো এক ঊর্ধতন কর্মকর্তা তাকে খুনের অপরাধ স্বীকার করার আদেশ দেন। তিনি তাকে আশ্বস্ত করেন যে, খুনের স্বীকারোক্তি দিলে মিতুর কিছু হবে না। তখন মিতু অধিকারী তার সে নির্দেশ প্রত্যাখ্যান করে খুনের অভিযোগ অস্বীকার করেন।
বাসুদেব চক্রবর্তী খুনের মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ইনসপেক্টর মাইনুল জানান, গত ছব্বিশে জুন উজিরপুর উপজেলার জামবাড়ী গ্রামের মিতু অধিকারীর বাড়ি সংলগ্ন ডোবা থেকে বাসুদেব চক্রবর্তীর লাশ উদ্ধার করার পর, ভিকটিমের ভাই সাতাশ জুন থানায় মিতুর বিরুদ্ধে হত্যা মামলা দায়ের করলে আমরা আটাশ জুন তাকে গ্রেফতার করি। উনত্রিশ জুন আদালতে দুই দিনের রিমান্ড চাইলে আদালত দুই দিনের রিমান্ড দেন। রিমান্ড শেষে তাকে আদালতে প্রেরণ করা হয়।
তিনি জানান‘ আমি কোন নির্যাতন করিনি এটা একবারেই মিথ্যা।’
হতা মামলার বাদী বরুণ চক্রবর্তী জানান, আমরাও শুনেছি মিতু আদালতে নির্যাতন ও যৌন নিপীড়নের অভিযোগ এনেছেন।