আকাশে মেঘ দেখলেই আতঙ্ক বাসা বাঁধে নারায়ণগঞ্জ-নরসিংদী অগ্রণী সেচ প্রকল্প এলাকার বাসিন্দাদের। টানা কয়েকদিনের বৃষ্টির কারণে দুর্ভোগ আর ভোগান্তির শিকার হতে হচ্ছে প্রায় এক লাখ বাসিন্দার।
একটানা বর্ষণে বিভিন্ন শিল্পকারখানা, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও দোকানপাটে পানি ঢুকে গেছে। অনেক মাছের খামার তলিয়ে গেছে। এতে কয়েক কোটি টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে বলে জানা গেছে। কয়েক দিনের সামান্য বর্ষণে বাঁধের ভেতরে অস্থায়ী বন্যায় পরিণত হওয়ার উপক্রম হয়েছে। গত কয়েকদিনের বৃষ্টিতে এলাকার কোথাও জমেছে হাটু পানি, আবার কোথাও কোমর পানি। আবার কোথাও অথৈই পানি। দুর্ভোগের শিকার হচ্ছেন এখানকরা মানুষ। ইতোমধ্যে অনেকে পানিবাহিত রোগে আক্রান্ত হয়েছে বলে খবর পাওয়া গেছে। সরকারী নিয়ম কানুন না মেনে অপরিকল্পিতভাবে বালু ভরাট, ভবন ও বাড়ি ঘর নির্মাণ এ জলাবদ্ধতার প্রধান কারন বলে মনে করেন স্থানীয়রা। পানি নিষ্কাশনে যাত্রামুড়া ও বানিয়াদির পাম্প হাউসগুলো কোন কাজে আসছে না বলে স্থানীয়দের অভিযোগ রয়েছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, ১৯৮৪ সালে ৯ কোটি ৮২ লাখ টাকা ব্যয়ে ২ হাজার ৩’শ হেক্টর জমি নিয়ে অগ্রনীর নারায়রগঞ্জ-নরসিংদী অগ্রনী সেচ প্রকল্প-১ ও পরে ১৯৯৩ সালে ১’শ এক কোটি টাকা ব্যয়ে শীতলক্ষ্যার পূর্ব পাড়ের প্রায় ৫ হাজার হেক্টর জমি ঘিরে বন্যা নিয়ন্ত্রন বাধ নির্মান করা হয়। নির্মাণ হওয়ার কয়েক বছরের মধ্যেই এ প্রকল্পের ভিতরে শুরু হয় জলাবদ্ধতা। জনবসতি বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে বাড়তে থাকে জনদুর্ভোগও। এবারের দুভোর্গটা যে আগের চেয়ে দিগুণ হবে তা কয়েক দিনের বৃষ্টিতেই অগ্রনীবাসী খুব ভালো ভাবেই টের পাচ্ছে। গত কয়েকদিনের বৃষ্টিতে দুটি সেচ প্রকল্পের এলাকার কোথাও জমেছে হাটু পানি, কোথাও কোমর পানি আবার কোথাও ঠাঁই পর্যন্তও পাওয়া যায়না। পুরো বর্ষা ও টানা বর্ষন শুরু হলে কি হবে- এ নিয়ে খুব দুশ্চিন্তায় আছে অগ্রণীবাসী।
স্থানীয়রা অভিযোগ করে বলেন, অগ্রনীর ভেতরে অপরিকল্পিতভাবে মিল-কারখানা গড়ে উঠলে অগ্রনী পরিনত হয় আবাসিক ও শিল্প এলাকায়। সেই থেকে দুর্ভোগ বেড়ে চলেছে অগ্রনী এলাকার মানুষের। বসতি আর কারখানার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে জলাবদ্ধতা। শিল্প মালিক ও এক শ্রেনীর ভুমিদস্যুদের দখলে চলে যায় ফসলী জমি ও খালগুলো। খালগুলো বালু দিয়ে ভরাট কর ক্ষমতাসীন দলের নেতাকর্মীরা নির্মান করেছেন পাকা স্থাপনা।
বর্তমানে সেচ প্রকল্প দুটিতে কৃষি জমিতে পানি সেচের তেমন ব্যবস্থা নেই। এসব কৃষি জমিতে ঘরবাড়ি থেকে শুরু করে শিল্প কারখানাও গড়ে উঠেছে। এখন প্রকল্প দুটি পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা দ্রুত করা দরকার। অগ্রনী সেচ প্রকল্পের যাত্রামুড়া পাম্প হাউজ থেকে বরপা ব্রীজ হয়ে একটি মুল খাল সেচ প্রকল্পের বানিয়াদী এলাকা দিয়ে শীতলক্ষ্যা নদীতে সংযোগ হয়েছে। অভিযোগ রয়েছে, ঐ খালটি দখল করে ক্ষমতাসীন দলের নেতাকর্মী ও প্রভাবশালীরা বিভিন্ন স্থাপনা নির্মাণ করেছেন। এছাড়া খালের অনেক স্থানে বালু দিয়ে ভরাট করে ইমারত নির্মাণ করেছেন। সেচ প্রকল্প দুটির দায়িত্বরত কর্মকর্তাদের মোটা অংকের উৎকোচের বিনিময়ে তারা খালটি দখলে নিয়ে নিয়েছেন বলে স্থানীয়দের অভিযোগ। যার ফলে খাল দিয়ে পানি নিষ্কাশন হতে পারছেনা। সৃষ্টি হওয়া জলাবদ্ধতা বন্যায় রুপ নিচ্ছে। কর্মকর্তারা থাকছেন ধরাছোয়ার বাইরে। এ ব্যপারে সেচ দুটি প্রকল্পের কার্যালয়ে গিয়ে অভিযুক্ত কর্মকর্তাদের কাউকেই পাওয়া যায়নি। প্রকল্পের অফিসগুলো অধিকাংশ সময়েই থাকে তালাবদ্ধ।
সরেজমিনে ঘুরে দেখা গেছে, সেচ প্রকল্পের মাসাব, বরপা বাগানবাড়ি, সুতালড়া, আড়িয়াবো, তেতলাব, কর্ণগোপ, মৈকুলী, মিয়াবাড়ী, ভায়েলা, পাঁচাইখা, মোগড়াকুল, পবনকুল, বরাব, খাদুন, যাত্রামুড়া, গোলাকান্দাইল, দক্ষিনপাড়া, নাগেরবাগ, ৫নং ক্যানেল, রূপসী, গন্ধর্বপুরসহ বেশ কয়েকটি এলাকায় প্রায় কয়েক লাখ মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন।
এলাকাবাসীর অভিযোগ, গত কয়েক বছরে সরকারদলীয় প্রভাবশালী নেতারা খাল গুলো ভরাট করে মার্কেট, ঘর-বাড়ি, দোকানপাটসহ বিভিন্ন স্থাপনা নির্মাণ করেছেন। এতে করে সামান্য বর্ষণ হলেই জণাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়। এসব অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করা হলে এসব এলাকায় জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হতো না বলে দাবি করেন স্থানীয়রা। অপরিকল্পিত ভাবে বিভিন্ন শিল্প প্রতিষ্ঠানের বর্জ্য ও পানি সরাসরি ফেলানোর কারনে খাল গুলো ভরাট হয়ে গেছে। যার কারনে দু’টি প্রকল্পের জনগনের পিছু ছাড়ছেনা জলাবদ্ধতা।
বাগানবাড়ি এলাকার আলী হোসেন বলেন, সামান্য বৃষ্টি হলেই বাড়িঘর ও রাস্তাঘাটে কোমর পানি পর্যন্ত জমে যায়। এ এলাকার ছাত্র ছাত্রীদের হাটু পানি আবার কোথাও কোমর পানি ভেঙ্গে স্কুলে যেতে হয়। পানিবাহিত রোগেও আক্রান্ত হয়েছে অনেকে। স্থানীয়রা জনপ্রতিনিধিদের প্রতি ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, সরকারিভাবে খালগুলো খননের জন্য যে বরাদ্দ আসে তা ঠিকমতো কাজে লাগালে হয়তো এ সমস্যা থেকে কিছুটা হলেও মুক্তি পাওয়া যেতো। বরাদ্দকৃত টাকা স্থানীয় প্রভাবশালী ও জনপ্রতিনিধিরা ভাগ-ভাটোয়ারা করে নিয়ে যায়।
উপজেলা নির্বাহী অফিসার শাহ নুসরাত জাহান বলেন,অগ্রনী সেচ প্রকল্পের কর্মকর্তাদের সাথে যোগাযোগ করে খুব দ্রুত পানি নিষ্কশনের ব্যবস্থা করা হবে। যত দ্রুত সম্ভব এ এলাকার জলাবদ্ধতা নিরসনে পদক্ষেপ নেওয়া হবে।