নাটোর সদর হাসপাতালে ৫০ শয্যার বিপরীতে আজ শুক্রবার রোগী ভর্তি রয়েছেন ৯১ জন। যেকোনো সময় ভেঙে পড়তে পারে স্বাস্থ্যসেবার মান। বর্তমান পরিস্থিতি এমনটাই যেটাকে শুধু অসম্ভবই নয় এক প্রকারের সংকটময় মুহুর্ত বলে মনে করছেন সচেতন সমাজ।
এমত অবস্থায় চিকিৎসাসেবা নিশ্চিত করতে শয্যা ও অক্সিজেন সিলিন্ডার সরবরাহ বাড়ানোর দাবি নাটোর বাসীর। করোনা রোগিদের চিকিৎসা দিতে গিয়ে ৩জন চিসিৎসক সহ মোট ১৬জন আক্রান্ত হয়েছেন। প্রতিদিনই স্বাস্থ্য কর্মীরা করোনায় আক্রান্ত হচ্ছে।
নাটোরের পরিস্থিতি অনেকটা নিয়ন্ত্রণের বাহিরে চলে যাচ্ছে বলে মনে করছেন সচেতন মহল। এর প্রেক্ষিতে আজ বিকেলে নাটোর সদর হাসপাতালে করোনা ইউনিটের চিকিৎসা নিয়ে মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে জরুরী সভা ডেকেছে জেলা প্রশাসন।
নাটোর সদর হাসপাতালে করোনা আক্রান্ত রোগীদের এই ঠাসাঠাসিতে রোগী সুস্থ হওয়ার পরিবর্তে রোগী আরো বেশি অসুস্থ হয়ে পড়তে পারেন এমনটা মনে করছেন অনেক রোগীর আত্মীয়রা। এদিকে জেলায় বর্তমানে চিকিৎসাধীন করোনা রোগীর সংখ্যা দুই হাজার ছাড়িয়ে গেছে।
হাসপাতালে রোগীর চাপ এতই বেশি যে মেঝেতেও রাখার মত জায়গা নেই। জেলার প্রধান এই হাসপাতালেই ভরসা নাটোর জেলার রোগীদের। এছাড়া সংকটাপন্ন রোগীদেরকে এখান থেকে পাঠিয়ে দেয়া হচ্ছে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে।
তার পরেও প্রায় প্রতিদিনই এই নাটোর সদর হাসপাতালে করোনা ওয়ার্ল্ড থেকে দুই এক জন করে রোগী মৃত্যুবরণ করেছেন। এ লক্ষণকে কোনোভাবেই ভালো মনে করছেন না নাটোরের সচেতন সমাজ।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক রোগীর আত্মীয় ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, আমরা শুনেছিলাম নাটোরে বড় বড় কোম্পানির হাসপাতাল রয়েছে, করোনার এই সময় তারা সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেবে। তাদের হাসপাতালের সকল ব্যবস্থা রয়েছে।
কিন্তু এই সংকটময় মুহূর্তে তারা কোথায়? যখন প্রতিদিনই মানুষ মৃত্যুবরণ করছে তখন নাটোরের মধ্যে একটি জেলায় কোন আইসিইউ বেড নেই। রোগীদের রাখবার জায়গা নেই। কোন দেশে বসবাস করছি আমরা?
নাটোর সদর হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানায়, হাসপাতালে রোগীদের চাপ অব্যাহত রয়েছে। বেড সংকট থাকায় সকল রোগীকেই ভর্তি করা যাচ্ছে না শুধুমাত্র অক্সিজেন প্রয়োজন শ্বাসকষ্ট রয়েছে এমন রোগীকেই হাসপাতালে ভর্তি করা হচ্ছে। এদিকে বেশি গুরুতর হলে তাকে রাজশাহী হাসপাতালে পাঠিয়ে দেয়া হচ্ছে।
নাটোরের সিভিল সার্জন কাজী মিজানুর রহমান জানান, ‘আমরা সর্বতোভাবে চেষ্টা করছি করোনা আক্রান্ত রোগীদের সেবা দিতে। আমাদের সামর্থ্যের সবটুকু উজাড় করে দিচ্ছি আমরা।
যে সমস্যাগুলো রয়েছে তাই আমি প্রতিনিয়ত ওপরে কথা বলছি। আষাঢ়স্য পেয়েছি কিন্তু কবে নাগাদ হাসপাতালে সার্বিক অবস্থার উন্নয়ন ঘটবে এ ব্যাপারে তাৎক্ষণিকভাবে কিছু বলতে পারছি না’ বলেও জানান তিনি।
নাটোর জেলা প্রশাসক শামীম আহমেদ আজ প্রাণের আমজাদ খান মেমোরিয়াল হাসপাতালে কোভিড-১৯ চিকিৎসা অবকাঠামো সরেজমিনে পরিদর্শন করেছেন।এবং সরকার ঘোষিত চলমান কঠোর বিধিনিষেধ বাস্তবায়নের লক্ষ্যে সিংড়া উপজেলা পরিদর্শন ও উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স পরিদর্শন করেন।
তিনি কোভিড-১৯ রোগীদের চিকিৎসা ব্যবস্থার সার্বিক খোঁজ খবর ও প্রয়োজনীয় দিক নির্দেশনা প্রদান করেন। এসময় উপস্থিত ছিলেন অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক), উপজেলা নির্বাহী অফিসার সিংড়া, উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কর্মকর্তা, সহকারী কমিশনার (ভূমি), থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা সহ সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিবর্গ।
অপরদিকে সকাল থেকে কঠোর বিধিনিষেধ কার্যকর ও স্বাস্থ্যবিধি নিশ্চিত করতে এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেট খালিদ হাসানের নেতৃত্বে লালপুর উপজেলার বিভিন্ন স্থানে মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করা হয়।
স্বাস্থ্যবিধি অমান্য করায় ৩ টি মামলায় ৩ ব্যাক্তিকে ৯০০ টাকা অর্থদণ্ড দেওয়া হয়। এসময় ক্রেতা বিক্রেতাকে স্বাস্থ্যবিধি প্রতিপালন বিষয়ে সতর্ক করা হয়। অভিযান পরিচালনায় সহযোগিতা করেন বাংলাদেশ সেনাবাহিনী।
এছারা নাটোরে কঠোর বিধিনিষেধের দ্বিতীয় দিন শুক্রবার ২ জুলাই সকাল থেকেই পুলিশ ও স্থানীয় প্রশাসনের পাশাপাশি সেনাবাহিনী সড়ক ও মহাসড়কে টহল অব্যাহত রেখেছেন।