কুষ্টিয়ায় যুবলীগ নেতা মিজানুর রহমান মিজুর দায়ের করা তথ্যপ্রযুক্তি নিরাপত্তা আইনের মামলায় ‘ভয়েজ অব কুষ্টিয়া’নামে একটি অনলাইন নিউজ পোর্টালের প্রকাশক ও সম্পাদক এবং বার্তা সম্পাদককে গ্রেফতার করেছে পুলিশ।
গতকাল বুধবার (৩০ জুন) ভোরে সদর উপজেলার তাদের নিজ বাসা থেকে তুলে নিয়ে যায় গোয়েন্দা পুলিশের একটি দল। এর পরে বিকালে তাদের বিরুদ্ধে ২০১৮ সালের প্রযুক্তি নিরাপত্তা আইনে মামলা রেকর্ড করে সন্ধ্যায় আদালতে সোপর্দ করে পুলিশ।
কুষ্টিয়া অতিরিক্ত চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটের আদালত তাদের জামিন নামঞ্জুর করে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন।
গ্রেফতার দুই সাংবাদিক হলেন— সদর উপজেলার নলখোলা পাটিকাবাড়ি গ্রামের বাসিন্দা মৃত মুন্সী মখলেসুর রহমানের ছেলে মুন্সী শাহীন আহমেদ জুয়েল (৪২) এবং কুষ্টিয়া শহরের থানাপাড়ার এসভিপি সড়কের বাসিন্দা মৃত অখিল কৃষ্ণ শীলের ছেলে অঞ্জন কুমার শীল শুভ (২৮)
কুষ্টিয়া সদর উপজেলা যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক ও মামলা বাদী মিজানুর রহমান মিজুর দেওয়া এজাহার সূত্রে জানা গেছে, গত ২৮ জুন ‘ভয়েস অব কুষ্টিয়া’ নামে সরকারের অনুমোদনহীন একটি নিউজ পোর্টাল সরকারের উন্নয়ন কর্মকাণ্ডকে বাধাগ্রস্ত ও ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করার হীনউদ্দেশ্যে নিয়ে‘কুষ্টিয়া মেডিকেল কলেজে রডের পরিবর্তে বাঁশ ও কাঠ ব্যবহার’ শিরোনামে সংবাদ প্রকাশ করে।
ওই অসত্য খবরের শেষাংশে উল্লেখ করা হয়েছে— ‘কুষ্টিয়া মেডিকেল কলেজে একটি ভবন নির্মাণে রডের পরিবর্তে বাঁশ ও কাঠ ব্যবহারের কথাও উঠে আসে প্রতিবেদনে। ২০১৯ সালের ১ জানুয়ারী ভবনের একটি অংশ ধসে পড়ে। এতে এক শ্রমিক নিহত ও ১০ শ্রমিক আহত হন।
মেডিকেল কলেজের নির্মাণ শেষ হওয়া কোনো অংশ ধসে পড়েনি। তবে নির্মাণকাজ চলাবস্থায় দুর্ঘটনায় শ্রমিকের মৃত্যুর ঘটনা ঘটে। এজাহারে এমনটি দাবি করে অসত্য, বানোয়াট ও হীনউদ্দেশ্যমূলক সংবাদ পরিবেশনের অভিযোগ এনে মামলাটিতে দুজনের নাম উল্লেখসহ আরও অজ্ঞাতনামা আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ আনা হয়েছে।
শাহীন আহমেদ জুয়েলের স্ত্রী সেলিনা আক্তারের জানান, বুধবার ভোরে ডিবি পুলিশ পরিচয় দিয়ে আমাদের থানাপাড়ার বাসা থেকে জুয়েলকে তুলে নিয়ে যায়। পুলিশ আমাকে জানায়, জুয়েলের সঙ্গে আমরা একটু কথা বলতে চাই। কিছু তথ্য জানা দরকার সে জন্য নিয়ে যাচ্ছি।
বিকালে শুনি জুয়েলের বিরুদ্ধে ডিজিটাল আইনে মামলা হয়েছে। দেখুন কুষ্টিয়া মেডিকেলের অনিয়মের বিষয়ে সারা কুষ্টিয়াবাসী জানে, আপনারাও জানেন, তা ছাড়া সরকারের পক্ষ থেকে তদন্তেও প্রমাণ পেয়েছে অনিয়মের কথা, সরকারের তদন্ত রিপোর্ট ধরেই ভয়েস অব কুষ্টিয়া অনলাইন পত্রিকায় নিউজ হয়েছে। মামলা যদি করতেই হয় সরকারের ওই তদন্ত রিপোর্টের বিরুদ্ধে করুক। এটি হয়রানি করার জন্য মামলা করেছে।
গ্রেফতার অঞ্জন কুমার শীল শুভ’র স্ত্রী স্মৃতি রানী শীলের অভিযোগ— ‘গত ১১ জুন গভীর রাতে এক নারীর ওপর সন্ত্রাসী হামলার ঘটনায় গত ২১ জুন কুষ্টিয়া মডেল থানায় হত্যার উদ্দেশ্যে হামলার অভিযোগে মামলা করেন আহত ওই নারীর মা। এ ঘটনার নিউজ প্রকাশ হয়েছিল ;ভয়েস অব কুষ্টিয়া’য়। ওই মামলায় আসামির তালিকায় মিজানুর রহমান মিজুর নাম ছিল। ওই সংবাদের প্রতিশোধ নিতেই আমার স্বামীর বিরুদ্ধে এরকম বানোয়াট অভিযোগে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের মামলা করে হয়রানি করছেন তিনি।
কুষ্টিয়া মডেল থানার ওসি পুলিশ পরিদর্শক সাব্বিরুল আলম জানান, আগের কোনো সংবাদ প্রকাশের সঙ্গে এ মামলার সম্পর্ক নেই। কুষ্টিয়া মেডিকেল কলেজে রডের পরিবর্তে বাঁশ ও কাঠ ব্যবহার করা হয়েছে বলে একটি সংবাদ প্রকাশ করে তারা ফেসবুকে ভাইরাল করেছে। এ ঘটনায় দুজনের নামে তথ্যপ্রযুক্তি নিরাপত্তা আইনে কুষ্টিয়া মডেল থানায় একটি মামলা হয়েছে।
আসামিদের গ্রেফতার করে জেলহাজতে পাঠানো হয়েছে। তদন্ত হলেই সব কিছু বেরিয়ে আসবে বলে মন্তব্য করেন ওই পুলিশ কর্মকর্তা।