নাটোর শহর থেকে প্রায় ৩২ কিলোমিটার দূরে হাতছানি দিয়ে মানুষকে আকৃষ্ট করে চিনিডাঙ্গার পদ্মবিল। যেখানে নৌকায় চড়ে উপভোগ করা যেত পদ্ম ফুলের সৌন্দর্য এবং পাখিদের বিচরণ। বিলের সবুজ প্রন্তর আর পদ্ম ফুলের সৌরভ বিমোহিত করত মনকে।
এখানে এলে বাতাসে ছুঁয়ে যেত ফুলের ঘ্রাণ।কারো কারো জীবনে পদ্ম নিয়ে জড়িয়ে আছে কতই না স্মৃতি। অপূর্ব সুন্দর এই বিল দেখতে আসতো ভ্রমণপিপাসুরা নাটোরের বড়াইগ্রাম উপজেলার চিনিডাঙ্গায়।
প্রকৃতিকভাবে জন্ম নেওয়া জলজ ফুলের রানী এই পদ্ম ফুল, সৌন্দর্য বাড়িয়ে দিয়েছিল বিলের চিত্র। দূর থেকে মনে হত যেন ফুলের বিছানা পেতে রেখেছে কেউ। নাটোরের বড়াইগ্রাম উপজেলার নগর ও মাঝগাঁও ইউনিয়নের বিশাল এলাকাজুড়ে রয়েছে বৃহত্তর চিনিডাঙ্গা পদ্মবিল।
একসময় এই বিলের বুকে প্রায় ১ হাজার একর খাস জমিতে সারাবছর পানি থাকত। বিলে দেশি মাছ আর প্রকৃতিগতভাবে জন্মানো পদ্মফুলের সমারোহ ছিল বছরজুড়ে। মাছ আর পদ্মফুল বিক্রি করে জীবিকা নির্বাহ করতেন বিলের চারপাশের পারকোল, মাঝগাঁও, মহান্দগাছা গ্রামের মৎস্যজীবী ও দরিদ্র মানুষ।
বিগত বছরগুলোতে প্রচন্ড খরা, বর্তমানে অধিক পরিমাণে কীটনাশক ও রাসায়নিক সার প্রয়োগ, অবৈধভাবে বালু উত্তোলন ও পুকুর খনন করার কারণে অনেকাংশে কমে গেছে দেশি মাছ। অবশিষ্ট ছিল পদ্মফুল, তাও এখন হারিয়ে যাবার পথে।
বর্ষায় বিস্তীর্ণ বিল জুড়ে কিছু গোলাপি পদ্মের দেখা মিললেও খড়া মৌসুমে তার সৌন্দর্যের ঘাটতি দেখা যায়। অবৈধ দখল, অতিবৃষ্টি ও খরার কবলে পড়ে হারিয়ে যাচ্ছে চিনিডাঙ্গা বিলের পদ্মফুল। তাই ফুল বিক্রি করে যারা জীবিকা নির্বাহ করতেন তারা বেকার হয়ে পড়ছেন।
বন্ধ হয়ে যাচ্ছে অনেকের আয়ের পথ। অন্যদিকে প্রকৃতি হারাচ্ছে তার সৌন্দর্য ও ভারসাম্য। এ বিষয়ে প্রশাসনিকভাবে বারবার উদ্যোগ নেয়া হলেও তা কেবলমাত্র সাইনবোর্ডে আটকে আছে। অথচ প্রভাবশালীরা কূটকৌশলে প্রশাসনের উচ্চ মহলকে ম্যানেজ করে ওই বিলে খরা মৌসুমে পুকুর খনন অব্যাহত রেখেছে।
অনেক প্রভাবশালীরা সুকৌশলে খাস জমি অবৈধভাবে দখলে নিয়ে দলিল করে নিজ সম্পত্তি হিসেবে দেখাচ্ছে।খাস জমি কিভাবে দলিল হয়? এমন প্রশ্ন সচেতন মহলের। প্রশাসন আসে প্রশাসন যায় কেবল প্রতিশ্রুতির কলা জনগণের সামনে ঝুলিয়ে রাখে।
আর দিন দিন এভাবেই কমছে পদ্ম বিলের খাস সম্পত্তি। এভাবে চলতে থাকলে অদূর ভবিষ্যতে চিনিডাঙ্গা পদ্মবিল এক সময় হারিয়ে যাবে। তাই এই বিলের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখতে সরকারিভাবে অতি দ্রুত প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া উচিত বলে মনে করছেন এলাকাবাসী।
সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ এ বিষয়ে কী পদক্ষেপ নেন সেটাই এখন দেখবার বিষয়। আমরা সাধারণরা শুধু অপেক্ষা- ই করতে পারি। আমরা প্রত্যাশা করি, আমাদের চিৎকার হাওয়ায় মিলিয়ে যাবে না, আমরা প্রত্যাশা করি, আর দশটা প্রতিশ্রুতির মত পদ্ম বিলের প্রতিশ্রুতিও প্রতিশ্রুতি- ই থেকে যাবে না।
আমরা প্রত্যাশা করি, আর দশটি সংবাদের মত এ সংবাদটিও শুধু সংবাদ হিসেবেই থেকে যাবে না কালের গর্ভে। পদ্মফুল ফিরে পাবে তার আসল ঠিকানা, পদ্ম বিল ভরে উঠবে শুধু হাসিতে…