২০ হাজার বছর পূর্বে পূর্ব এশিয়া করোনার মহামারীতে বিধ্বস্ত হয়েছিল, মানুষের জিন নিয়ে গবেষণা করা গবেষকেরা এমন দাবী করছেন।
ব্রিটিশ বার্তা সংস্থা পিএ এবং জার্নাল কারেন্ট বায়োলজি গবেষণা জার্নালে প্রকাশিত একটি নতুন সমীক্ষায় দেখা গেছে, মহামারীর পরেও এই অঞ্চলের লোকদের জিনগুলির সন্ধান রয়েছে।
গবেষকেরা বলেছেন গত ২০ বছরে, তিনটি করোনভাইরাস মহামারী হয়েছে।
সার্স-মহামারীটি সার্স-কোভি ভাইরাসজনিত কারণে হয়েছিল এবং ২০০২ সালে চীন থেকে সেটা ছড়িয়ে পড়েছিল। সে সময় ৮০০ এরও বেশি মানুষ এই রোগে প্রাণ হারিয়েছিল। মধ্য প্রাচ্যের রেসপিরেটরি সিন্ড্রোম (mers) ২০১২ সালের সেপ্টেম্বরে আবিষ্কার করা হয়েছিল এবং এরপরে মধ্য প্রাচ্যের দেশগুলিতে ছড়িয়ে পড়েছিল। অনুমান করা হয় যে এই রোগটির জন্য ৮৫০ জন প্রাণ হারিয়েছিল। -খবর ভিজি (VG) নরওয়ে.
কোভিড -১৯ মহামারী তিনটির মধ্যে সবচেয়ে মারাত্মক। তবে সার্স-কোভি-২ (SARS-CoV-2) দ্বারা সৃষ্ট এই রোগটি এখন পর্যন্ত কমপক্ষে ৩.৮ মিলিয়ন মানুষের জীবন কেড়ে নিয়েছে।
তবে, জিনতত্ত্ববিদরা হাজার হাজার বছর আগে আরও একটি বড় করোনার মহামারীর সন্ধান পেয়েছেন। অ্যারিজোনা বিশ্ববিদ্যালয়, ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয় সান ফ্রান্সিসকো এবং অ্যাডিলেড বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞানীরা এই গবেষণার পিছনে রয়েছেন।
তাদের একজন হলেন অধ্যাপক কিরিল আলেকজান্দ্রভ। তিনি বলেছিলেন যে মানুষের মোট জিন, তথাকথিত জিনোমে কয়েক হাজার বছর ধরে বিবর্তন সম্পর্কিত তথ্য রয়েছে।
গবেষকরা ১০০০ জিনোমস প্রকল্পের ডেটা ব্যবহার করেছিলেন, যা মানুষের সাধারণ জিনগত পরিবর্তনের বৃহত্তম উন্মুক্ত ক্যাটালগ তারা যে সন্ধান করছিল তা হ’ল জিনগুলির এনকোডিং প্রোটিনের পরিবর্তন যা করোনভাইরাস SARS-CoV-2 প্রভাবিত করে।
তারপরে তারা মানব এবং করোনভাইরাস উভয়ের উপর ভিত্তি করে প্রোটিন তৈরি করেছিল এবং এটি প্রদর্শন করতে সক্ষম হয়েছিল যে এগুলি একে অপরকে সরাসরি প্রভাবিত করে। প্রোটিন পরীক্ষা জীবিত কোষ ব্যবহার না করেই সম্পাদিত হয়েছিল।
এইভাবে, গবেষকরা কোষে প্রবেশের জন্য সংরক্ষণযোগ্য প্রক্রিয়া করোনভাইরাস ব্যবহার করতে সক্ষম হন।
“দলটির বিশেষজ্ঞরা বিবর্তনীয় বিশ্লেষণ ব্যবহার করে প্রমাণ পেয়েছিলেন যে পূর্ব এশিয়ার লোকদের পূর্বপুরুষরা একটি রোগে করোনার মহামারীর সংস্পর্শে এসেছিলেন,” বলেছেন গবেষক আলেকজান্দ্রভ।
বর্তমানে চীন, জাপান, মঙ্গোলিয়া, উত্তর এবং দক্ষিণ কোরিয়া এবং তাইওয়ালাী মানুষের ডিএনএ-তে এখনও সেই করোনা প্রজাতির ভাইরাসের অস্তিত্ব রয়েছে।
কোভিড -১৯ এর মতো প্রাচীন করোনা প্রজাতির কোনো ভাইরাস বা মানুষের দেহে যেরকম করোনাভাইরাস সংক্রমিত হয়েছে, সেভাবেই ভিন্ন একটি ভাইরাসের জেরে পূর্ব এশিয়ার প্রাচীন মানুষের মধ্যে মহামারি ছড়িয়ে পড়তে পারে।
আলেকজান্দ্রভ বলেছেন যে গবেষণা দেখায় যে কীভাবে বিভিন্ন জনগোষ্ঠীর জিন ভাইরাসগুলির সাথে খাপ খাইয়ে নিয়েছে, যা সম্প্রতি মানব বিবর্তনে একটি গুরুত্বপূর্ণ চালিকা শক্তি হিসাবে স্বীকৃত হয়েছে।
- এই গবেষণা আমাদের এমন ভাইরাস শনাক্ত করতেও সহায়তা করে যা আরও ভালোভাবে ভবিষ্যতে মহামারির পূর্বাভাস দিতে পারে। প্রাচীনকালের ভাইরাসের বিষয়ে জানতে পারলে বিবর্তনমূলক তথ্য পাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে বলেও গবেষণায় দাবি করা হয়েছে।
অপরদিকে, অস্ট্রেলিয়ার জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষক ইয়াসিন সুইলমি এবং রে তোবলারের দাবি, পূর্ব এশিয়ায় বর্তমানে যে মানুষরা বসবাস করেন, তাদের ৪২টি জিনে করোনাভাইরাস প্রজাতির জিনগত পরিবর্তনের প্রমাণ মিলেছে।
সুইলমি এবং তোবলার জানিয়েছেন, তারা বিশ্বের ২৬টি জাতির ২ হাজার ৫০০ এর বেশি জিন নিয়ে বিশেষ ধরনের বিশ্লেষণ করেছেন। তার ভিত্তিতে মানুষের ৪২টি ভিন্ন জিনে বিশেষ ধরনের প্রোটিনের সংকেত পাওয়া গেছে।
তারা বলেছেন, এই ভাইরাস ইন্টারেকটিং প্রোটিনসের (ভিআইপি) সংকেত পাওয়া গেছে মানুষের মাত্র পাঁচটি জাতির ক্ষেত্রে। তারা সবাই পূর্ব এশিয়ার বাসিন্দা, যা সম্ভবত করোনাভাইরাস প্রজাতির বিচরণের ক্ষেত্র ছিল। সে তথ্য অনুযায়ী, আধুনিক যুগের পূর্ব এশিয়ার মানুষরা প্রায় ২৫ হাজার বছর আগেই করোনাভাইরাসের দাপটের সম্মুখীন হয়েছিলেন।
গবেষকদের দাবি, ৪২টি ভিআইপি মূলত ফুসফুসে প্রভাব ফেলত। এগুলো করোনার দ্বারা সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
শুধু তাই নয়, তারা দাবি করেছেন, ওই ভিআইপিগুলোর সঙ্গে যে সরাসরি সার্স-কোভ-২ ভাইরাসের যোগ ছিল। আর এর প্রভাবেই বর্তমান মহামারি ছড়িয়ে পড়েছে।
পাশাপাশি দুই গবেষক দাবি করেছেন, কয়েকটি ভিআইপির জিন বর্তমানে করোনার চিকিৎসার ক্ষেত্রে ওষুধ তৈরির কাজে ব্যবহৃত হতে পারে বা ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালের অংশ হিসেবে ব্যবহারের সম্ভাবনা রয়েছে।
(সূত্রঃ ভিজি নরওয়ে এবং হিন্দুস্তান টাইমস)