নিঃসঙ্গতায় সুখ খুঁজে পাওয়া এক খুকির গল্প

মাহাবুব খন্দকার
মাহাবুব খন্দকার - নাটোর প্রতিনিধি
3 মিনিটে পড়ুন
ছবি: মাহাবুব খন্দকার

নাটোর শহর থেকে ৫১ কিলোমিটার দূরে লালপুর উপজেলার দক্ষিণ-পশ্চিমে ৮নং দুড়দুড়িয়া ইউনিয়নের ৪নং ওয়ার্ডের রামকৃষ্ণপুর গ্রাম। যে গ্রামে শত বছর আগে তেমন ভাবে কোন বসতি ছিল না।

পদ্মা সংলগ্ন নির্জন অরণ্যের স্তব্ধতা আর পাখির গানে কলতানে মুখরিত প্রায় সাড়ে তিন শত বছরের পুরনো স্থাপনা “শ্রী শ্রী ফকির চাঁদ বৈষ্ণব গোঁসাইয়ের সৎসঙ্গ সেবাশ্রম” ফকির চাঁদ বৈষ্ণব গোঁসাই মন্দির, সমাধি ও যোগী সম্প্রদায়ের বিরাট আশ্রম।

সেই আশ্রমের সেবাইত ‘খুকি’। যার কোন গল্প নেই।জীবনের চাওয়া এবং পাওয়া জাগতিক জগতের মানুষের থেকে অনেকটাই ভিন্ন।তিনি কত বছর আগে এসেছিলেন এই আশ্রমে? তার বয়স কতো? কে তার বাবা? কে তার মা? কোথায় তিনি জন্মগ্রহণ করেছিলেন?

এসব প্রশ্নের কোন উত্তর কেই জানেনা, এমনকি তিনি নিজেও জানেন না।গ্রামবাসীরা বলছেন সেবাইত খুকিকে গ্রামের ভিতরে কখনো চলাফেরা করতে দেখা যায়না, তিনি ওই আশ্রমের ভিতরেই সব সময় থাকেন।এছাড়া খুকি সম্পর্কে আর কোনো তথ্য তাদের জানা নেই।

- বিজ্ঞাপন -

সেবাশ্রম কমিটির সদস্যদের ধারণা সেবাইত খুকির বয়স একশত পনেরো বছর।খুকি ঠিক কত বছর বয়সে এই আশ্রমে এসেছিলেন তা কারো জানা নেই।খুকির কোন চাওয়া নেই। তাকে কখনো অসুস্থ দেখা যায়নি।

বছরে তিনটি উৎসবে ভক্তরা তার জন্য পোশাক দিয়ে যায় এবং কমিটির পক্ষ থেকে খাওয়া-দাওয়ার ব্যবস্থা করা হয়।খুকির মতন বয়জ্যেষ্ঠ আরও অনেক সেবাইত এই আশ্রমের আছেন।তাদের মধ্যে অনেকেই দেহত্যাগ করেছেন যাদের সমাধি এই সেবাশ্রমের আঙিনাতে করা হয়েছে।

সেবাশ্রম কমিটির সদস্যরা আরো বলছেন, খুকি কখনো নিজ ইচ্ছায় নিজের কোন প্রয়োজনের কথা জানান না। কিছু প্রয়োজন আছে কিনা জিজ্ঞেস করলে হাত নাড়িয়ে না উত্তর দেন।তিনি কথা বলেন না বললেই চলে।

তবে ৩২ বিঘা জায়গা জুড়ে বিস্মৃত এই সেবাশ্রমের আঙিনার ভিতরেই সুস্থাবস্থায় চলাফেরা করেন।তার ব্যথীত হওয়ার বিষয় একটি, যদি কেউ এসে বলে আমি আপনাকে নিতে এসেছি, আমার সঙ্গে চলেন, তাহলেই তিনি খুব দুঃখিত হন এবং না যাওয়ার জন্য আকুতি করেন।

বয়সের ভারে চামড়াগুলো কুঁচকে গিয়েছে দন্তগুলো গেছে পড়ে, বগের ডানার মতন ধবল হয়েছে চুল, তবুও চোখের দৃষ্টি অনেকটাই স্বাভাবিক।তার তীক্ষ্ণ চাহনি ইঙ্গিত করে তিনি প্রতীক্ষিত কোন বস্তু প্রাপ্তির আশায় রয়েছেন।

- বিজ্ঞাপন -

কথা হয় সেই অভাব মুক্ত মানুষ সেবাইত খুকির সঙ্গে।আমার সঙ্গে চলুন, আমি আপনাকে নিতে এসেছি, তখন সেই ছোট্ট খুকিটির মতন দুই হাত উঁচু করে বলতে লাগল ‘না না না আমি এখানেই থাকব, আমি এখানেই থাকব’।

কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বলেছিলেন ‘পেয়ে পাওয়া ফুরায় না, বরং চাওয়া বেড়ে যায়’।জনৈক এক সাহিত্যিক লিখেছিলেন ‘সংকীর্ণ হৃদয় খানি, অনন্ত পিপাসা, মিটে নাই, মিটিলো না, মিটিবেনা আশা’।

খুকির এই জীবন যাপনের সাথে সেই কথাগুলো কি সত্য প্রমাণিত হয়? আমাদের সমাজে খুকির মতন মানুষের সংখ্যা খুবই কম।চাওয়া-পাওয়া আর আশা-আকাঙ্ক্ষাকে বিসর্জন দিতে আমরা খুব কম সংখ্যক মানুষ হয়তো পারি।

- বিজ্ঞাপন -

কোন এক মহেন্দ্রযোগে গোঁসাই প্রাপ্তি হবেন তিনি।কেউ কি জানবে না তার জীবনের গল্প? খুকির দেহ এই আশ্রমেই যেন সমাধিস্থ করা হয়, এইটুকুই তার চাওয়া…

গুগল নিউজে সাময়িকীকে অনুসরণ করুন 👉 গুগল নিউজ গুগল নিউজ

এই নিবন্ধটি শেয়ার করুন
নাটোর প্রতিনিধি
সাংবাদিক এবং লেখক
একটি মন্তব্য করুন

প্রবেশ করুন

পাসওয়ার্ড ভুলে গেছেন?

পাসওয়ার্ড ভুলে গেছেন?

আপনার অ্যাকাউন্টের ইমেইল বা ইউজারনেম লিখুন, আমরা আপনাকে পাসওয়ার্ড পুনরায় সেট করার জন্য একটি লিঙ্ক পাঠাব।

আপনার পাসওয়ার্ড পুনরায় সেট করার লিঙ্কটি অবৈধ বা মেয়াদোত্তীর্ণ বলে মনে হচ্ছে।

প্রবেশ করুন

Privacy Policy

Add to Collection

No Collections

Here you'll find all collections you've created before.

লেখা কপি করার অনুমতি নাই, লিংক শেয়ার করুন ইচ্ছে মতো!