অ্যাডলফ হিটলার জন্মেছিলেন ১৮৮৯ সালের ২০ এপ্রিল। হাঙ্গেরির অস্ট্রিয়াতে। ছোটবেলা থেকেই তাঁর ছিল গুরুতর অনিদ্রা রোগ। রাতে তাঁর একদম ঘুম হত না। তাই রাত আটটা নাগাদ নৈশভোজ সেরে তিনি কাজে বসতেন। গুরুতর রাজনৈতিক বিষয় নিয়ে আলোচনা করতেন দলের শীর্ষস্থানীয় কর্তাদের সঙ্গে। দেখতে দেখতে ভোর হয়ে আসত। সর্বময় কর্তা সারা রাত জেগে কাজ করবেন আর অন্যরা ঘুমোবেন? তা কি কখনও হয়? তাই মাঝে মাঝেই রাতদুপুরে তাঁদের ডাক পড়ত। আর দিনের পর দিন মাঝরাতে সর্বময় কর্তার আচমকা ডাকের ভয়ে তাঁরা সব সময় তটস্থ থাকতেন। মুখে কিছু বলতে না পারলেও মনে মনে তাঁরা খুব অসন্তুষ্ট ছিলেন। বিরক্ত হতেন। কেবল রাতটুকু নিজের মতো করে পাবার জন্য তাঁরা হিটলারের নিদ্রা কামনা করতেন। হিটলারও চাইতেন ঘুমোতে। দেশ-বিদেশ থেকে আনা হত নানা রকমের ওষুধ। কিন্তু কিছুতেই তাঁর চোখে ঘুম আসত না। ফলে তাঁর এই অনিদ্রা রোগ সারানোর জন্য নেওয়া হয়েছিল অন্য পথ। সেগুলো যেমন বিচিত্র, তেমনই মজার।
হিটলারের পায়ের দিকে টাঙানো হত সিনেমা দেখার একটা বড় পর্দা। তিনি বিছানায় শোয়ার সঙ্গে সঙ্গেই পর্দায় ফুটে উঠত ঝরনার রঙিন দৃশ্য। পাহাড়ের হাজার হাজার ফুট উপর থেকে নাচতে নাচতে নেমে আসা ঝরনা। মনটা একেবারে চিন্তা-মুক্ত করে সেই অপরূপ দৃশ্যের দিকে তন্ময় হয়ে তাকিয়ে থাকতেন হিটলার। তাকিয়ে থাকতে থাকতে তিনি হয়তো এক সময় ঘুমের ঘোরে আচ্ছন্ন হবেন। নিদ্রা যাবেন। এমনটিই ভাবা হত। কিন্তু ঘুম তো দূরের কথা, তন্দ্রাও আসত না তাঁর।
এর থেকেও বিচিত্র পদ্ধতি প্রয়োগ করা হয়েছিল তাঁর উপরে। হিটলার আপত্তি করেননি। মাথাটা মাটিতে রেখে পা দুটো আকাশের দিকে তুলে দিয়ে স্থির হয়ে থাকতেন মিনিটখানেক। তার পর আবার সোজা হয়ে দাঁড়াতেন। শরীরের সমস্ত রক্ত একবার নেমে আসত মাথায়, তার পর আবার তা ফিরে যেত শিরা-উপশিরায়। বলা হয়েছিল, এই ব্যায়ামের ফলে নাকি তাঁর ঘুম আসবেই। কিন্তু আশ্চর্য! অন্যদের ওপরে বারবার পরীক্ষা করে মিলিয়ে নেওয়া এই অভ্রান্ত ব্যায়ামেও তাঁর দু’চোখের পাতা এক হত না।
শুধু অনিদ্রাই নয়, আরও অনেক রোগ ছিল হিটলারের। গলায় হয়েছিল মারাত্মক ক্যানসার। দাঁতের যন্ত্রণা লেগেই থাকত। এ ছাড়াও অন্যান্য রোগও তাঁকে ব্যতিব্যস্ত করে রাখত সর্বক্ষণ। তাই দেশ-বিদেশ থেকে ডজনখানেক খ্যাতিমান চিকিৎসককে ধরে এনে বেরস্টেগ্যাডেনে তৈরি করা হয়েছিল হিটলারের জন্য একটি স্বতন্ত্র চিকিৎসক-কমিটি।
হিটলারকে কর্মঠ রাখতে উত্তেজক ইনজেকশন দিতে হত দিনে প্রায় চার-পাঁচ বার। আর প্রতিবারই হিটলারের শরীরে ফোটানোর আগে সেই সুচ গাঁথতে হত চিকিৎসকদের নিজের শরীরে। এটাই ছিল চিকিৎসকদের প্রতি হিটলারের নির্দেশে।
১৯৪৫ সালের ৩০ এপ্রিলে তিনি যখন জার্মানির বার্লিনে তুমুল যুদ্ধ চলাকালীন ফিউরার বাংকারে সস্ত্রীক আত্মহত্যা করেন। তার ঠিক আগের দিন ২৯ এপ্রিল তিনি বিয়ে করেছিলেন তৎকালীন বিখ্যাত অভিনেত্রী ইভা ব্রাউনকে।
এই হিটলার শুধু একজন রাজনীতিবিদ বা রাষ্ট্রপ্রধানই ছিলেন না, ছিলেন অত্যন্ত দক্ষ একজন চিত্রশিল্পী এবং অবশ্যই একজন নামকরা লেখক।